হায়দরাবাদ, 13 ডিসেম্বর: সামনে দাঁড়িয়ে হায়দরাবাদ পুলিশ ৷ গরম চায়ের কাপে তখন তুফানি চুমুক দিতে ব্যস্ত পুষ্পারাজ ৷ সামনে চিন্তিত মুখে বাস্তব জীবনের 'শ্রীভল্লী' অর্থাৎ আল্লুর অর্জুনের স্ত্রী স্নেহা রেড্ডি ৷ iগালে চুম্বন, থুতনিতে হাত দিয়ে অভয়বাণী পুষ্পার ৷ যেন সব ঠিক হয়ে যাবে ৷ হলও তাই ৷ নিম্ন আদালতে জেল হলেও হাইকোর্টে অন্তর্বতীকালিন বেল পেলেন আল্লু অর্জুন ৷ সিনেমার চিত্রনাট্যের থেকে কোনও অংশে কম গেল না দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুনকে গ্রেফতারের ঘটনা ৷
শুক্রবার বেলা বাড়তেই দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তথা বিনোদন দুনিয়ায় হইচই পরে যায় ৷ সন্ধ্যা থিয়েটারে পদপিষ্ট হয়ে মহিলা মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেতাকে প্রথমে আটক পরে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ সেই খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পরে চারিদিকে ৷ চিন্তিত হয়ে পড়েন অনুরাগীরাও ৷ কিন্তু কোথাও বিন্দুমাত্র চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল না আল্লু অর্জুনের চোখে-মুখে ৷
এদিন বাড়ির গ্যারেজে খোশমেজাজে দেখা যায় অভিনেতাকে ৷ সাদা চায়েপ পেয়ালা নিয়ে তিনি তখন ভিড় করা পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত ৷ সামনে দাঁড়িয়ে উর্দিধারি পুলিশ ৷ স্ত্রী স্নেহা যেন কোনও রকমে আটকে রেখেছেন নিজেকে ৷ বাস্তব জীবনের শ্রীভল্লীকে এমন দেখে, গালে চুমু আঁকলেন পুষ্পা ৷ তারপর ওঠেন পুলিশের গাড়িতে ৷
এদিনের চিত্রনাট্য এখানেই শেষ হয় না ৷ চিক্কুরপল্লী থানায় তখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ ৷ থানার সামনে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৷ অন্যদিকে, ধীরে ধীরে ভিড় করতে থাকে সংবাদমাধ্যম থেকে অনুরাগীরা ৷ পুষ্পাকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি পৌঁছতেই চারিদিকে একটা হুলস্থূল পড়ে যায় ৷ সাদা রঙের হুডি পোশাকে গাড়ি থেকে নামেন আল্লু ৷ জামায় লেখা, "ফ্লাওয়ার নয়, ওয়াইর্ল্ড ফায়ার ৷" একদিকে তিনি যেমন পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত থাকেন তেমনই ক্যামেরা ও অনুরাগীদের দেখে হাত নাড়তে ভোলেন না ৷
এরপরেই অভিনেতার শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় গান্ধি হাসপাতালে ৷ সেখানে ছবিটা আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ ৷ সুপারস্টারকে একঝলক দেখার জন্য ফের একবার হুড়োহুড়ি পরে যায় ৷ হাসপাতালে ভিতর যখন আল্লু ঢুকছেন তখন তাঁকে দেখে চিৎকার করতে থাকেন অনুরাগীরা ৷ তখনও মুখে হাসি লেগে আল্লুর ৷ কখনও হাত নাড়তে আবার কখনও করজোড়ে নমস্কার করতে দেখা গেল 'পুষ্পারাজ'কে ৷ এরপর নামপল্লি আদালতে অভিনেতাকে 14 দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ অন্যদিকে, একই বিষয়ে তখনও হাইকোর্টে সওয়াল-জবাব চলছে ৷
অভিনেতার জেল হেফাজতের খবরে মুষড়ে পরেন অনুরাগীরা ৷ কিন্তু সেখানেও যেন পুষ্পার হাঁটা-চলা, ব্যক্তিত্বয় ফুটে উঠল, 'ঝুকেগা নেহি শালা...' তেলঙ্গানা হাই কোর্টের বিচারপতি জে শ্রীদেবীর বেঞ্চে মামলার শুনানি চলে ৷ তেলেঙ্গনা হাইকোর্ট আল্লু অর্জুনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে বোম্বে হাইকোর্টে হওয়া মহারাষ্ট্র সরকার বনাম অর্ণব গোস্বামীর মামলাকে ভিত্তি হিসাব তুলে ধরে ৷ প্রসঙ্গত, একদিকে নামপল্লি আদালত অন্যদিকে হাইকোর্টে একই বিষয়ে মামলা দায়ের হয় ৷
আদালতের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, নিহতের পরিবারের প্রতি আদালতের সমবেদনা রয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে এই ঘটনায় কীভাবে দোষী বলা যায়? যে যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেগুলি প্রযোজ্য হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয় আদালত। এদিন বিচারপতি জানান, অভিনেতা বলে তাঁর ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায় না। নাগরিক হিসাবে তাঁরও স্বাধীনতা ভোগের অধিকার রয়েছে। ফলে ঠিক যেভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন পুষ্পারাজ, নিজের বাড়িতে, শ্রীভল্লীর কাছে সেই একই স্টাইলেই ফিরলেন আল্লু অর্জুন ৷