হায়দরাবাদ, 8 এপ্রিল: বর্তমানে কর্মসংস্থানের চিত্র অনেকটাই বদলেছে ৷ সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির নিশ্চয়তা থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে তা প্রায় নেই বললেই চলে ৷ আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে চাকিরির পাশাপাশি অনেকেই ব্যবসা করার করার কথা ভাবেন ৷ কিংবা পড়াশোনা শেষে অনেকেই চাকির করার কথা ভাবেন ৷ তবে ব্যবসা মানেই যে নিরাপদ, তা কিন্তু একেবারেই নয় ৷ চাকরির মতো ব্যবসাতেও ঝুঁকি থেকে যায় ৷ ব্যবসাতেও উত্থান-পতনের ঝুঁকি থাকে ৷ সর্বোপরি ব্যবসা শুরু করতে প্রয়োজন বিনিয়োগ ৷ অনকে জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ৷ তবে আজকাল ব্যবসা বা স্টার্চআপ শুরু করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ পাওয়া যায় ৷ অনেকেরই অজানা ভারতে ব্যবসা শুরুর জন্য 8 রকমের ঋণ পাওয়া যায় ৷
1. ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন
ব্যক্তি, উদ্যোক্তা, স্টার্টআপ এবং এমএসএমই (ছোট ও মাঝারি ব্যবসা) করতে এই ঋণ দেওয়া হয় ৷ ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে যাতে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে যাতে নগদ টাকার সরবারাহ কমে না যায় তার জন্য এবং কাঁচামাল কেনা, অতিরিক্ত ব্যবসায়িক দ্রব্য মজুত রাখা, বেতন দেওয়া, এবং কর্মীদের নিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ প্রধানত স্বল্পমেয়াদী ঋণ। ভারতে, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ 40 লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। এটি বিনিয়োগকারীকে 12 মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় । তবে প্রয়োজনে ঋণ পরিশোধের মেয়াদও বাড়ানো যেতে পারে । ঋণের মেয়াদকালের উপর সুদ ধার্য হয় ৷ ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থা ঋণ দেয় ব্যবসার জন্য ।
2. টার্ম লোন
একটি ঋণ পরিশোধের একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে ৷ এটি সাধারণত ঋণ স্বল্পমেয়াদী, মধ্যবর্তী এবং দীর্ঘমেয়াদী হয় । ঋণের পরিশোধের সর্ব নিম্ন সময় সীমা 12 মাস থেকে সর্বোচ্চ সময়কাল 5 বছর পর্যন্ত হতে পারে। স্বল্পমেয়াদী ঋণের সময়কাল 12 মাসের কম। 5 বছর বা তার বেশি মেয়াদের ঋণকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বলে। ব্যবসার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে 2 কোটি টাকা ব্যবসায়িক ঋণ দেওয়া যেতে পারে ৷ সিভিল স্কোর ভালো থাকলে এই ঋণের পরিমাণও বাড়ানো যেতে পারে। ঋণদাতারা এই মেয়াদী ঋণ পরিশোধের মেয়াদ চূড়ান্ত করবেন।
3. লেটার অফ ক্রেডিট
লেটার অফ ক্রেডিট হল এক ধরনের ঋণ যেটি সাধারণত আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দেওয়া হয় । আন্তর্জাতিক স্তরে আমদানি ও রফতানি ব্যবসা করতে চাইলে এই ঋণ পাওয়া যায়। যে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা করে তাদেরই এই ঋণ দেওয়া হয় ৷ কোনও লেনদেন করার আগে তাদের অর্থপ্রদানের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। এইজন্য ব্যাংক বা ঋণ প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র প্রদান করে ।
4. বিল ডিসকাউন্টিং
বিল এবং চালানের ক্ষেত্রে সুদ ছাড়ের সুবিধা ৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোনও ব্যাঙ্ক থেকে 45 দিনের জন্য 10 লক্ষ টাকা ঋণ নিতে গেলে, ব্যাঙ্ক অগ্রিম সুদ বাবদ 50 হাজার টাকা কেটে নেয় ৷ ভোক্তাকে 9 লক্ষ 50 হাজার টাকা দেয়। অগ্রিম সুদের টাকা বাবাদ 50 হাজার টাকা কটে নেয়। 45 দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আপনাকে ব্যাঙ্কে 10 লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে।
5.ওভার ড্রাফট ফেসিলিটি
ব্যবসায়ির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলি তাদের গ্রাহকদের ওভারড্রাফ্ট সুবিধা দেয় । ফলে অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স না থাকলেও, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত টাকা তুলতে পারবেন । তবে এই ক্ষেত্রে প্রতিদিন সুদ নেওয়া হয় । সাধারণত, এই ওভারড্রাফ্টের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ব্যাঙ্কের সঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্ক, ক্রেডিট স্কোর, অর্থ লেনদেন এবং পরিশোধের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। ওভারড্রাফট সীমা প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সুদ সময়মতো পরিশোধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ওভারড্রাফ্টের অর্থ পছন্দ মতো ব্যবহার করা যায় না ৷
6. ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ঋণ
ব্যাঙ্ক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান নতুন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্র কোনার জন্য ঋণগ্রহীতাকে ইকুইপমেন্ট ফাইন্যান্স বা মেশিনারি ঋণ প্রদান করে। ঋণের এই সুবিধাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানিগুলি পেয়ে থাকে যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে ৷ এই বিশেষ ঋণের ক্ষেত্রে কর ছাড়েরও সুবিধা থাকে ৷
7. সরকারি ক্ষেত্রে ঋণ
ভারত সরকার ব্যক্তি, এমএসএমই, মহিলা উদ্যোক্তা এবং বাণিজ্য, পরিষেবা এবং উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাঙ্ক, ঋণ প্রদানকারী সংস্থা, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক (RRB), মাইক্রো ফিনান্স ইনস্টিটিউশন (MFIs) এবং স্মল ফিন্যান্স ব্যাঙ্ক(SFBs) সরকারী প্রকল্পের অধীনে ঋণ প্রদান করা হবে । এছড়াও বর্তমানে, কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে মুদ্রা স্কিম (PMMY), প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি (PMEGP) এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট ফর মাইক্রো অ্যান্ড স্মল এন্টারপ্রাইজ (CGTMSE), স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ৷ এই সমস্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ পাওয়া যায় ৷
8.পয়েন্ট সেল ঋণ
রিটেল শপ, স্টেশনারি দেকান ও সুপার মার্কেটের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ দেওয়া হয় ৷ তাই ব্যবসা শুরুর আগে চিন্তা- ভাবনা করে নিতে হবে কি ধরনের ব্যবসা করতে চান ৷ সেই অনুয়ায়ী ঋণের আবেদন করতে হবে ৷
আরও পড়ুন: