আগ্রা, 28 নভেম্বর: মুঘল আমলে আগ্রা ফোর্ট থেকেই ভারতবর্ষের শাসন কাজ পরিচালিত হত। আগ্রা ফোর্ট বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্য। এটি দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। আগ্রা ফোর্ট রাজপুত, মুঘল, জাট এবং মারাঠা-সহ অনেক রাজবংশই বারবার দখল করেছে। কিন্তু, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এই আগ্রা দুর্গের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয় ! এএসআই জানেই না, আগ্রার এই কেল্লা কে তৈরি করেছেন ?
ঘটনা এক বছর আগের। যেখানে এক RTI-এর উত্তরে ASI এমনটাই জানিয়েছিল ৷ এবার সেই উত্তরকে সমর্থন করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনও। 2023 সালের জুন মাসে RTI-এর জবাবে, ASI-এর আগ্রা সার্কেলের পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার মহেশ চন্দ্র মীনা জানিয়েছিলেন, জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও তথ্যই উপলব্ধ নেই ৷ সমসাময়িক সাহিত্যেই এমন তথ্য পাওয়া সম্ভব।
2023 সালের মে মাসে আগ্রার এমএম গেট থানা এলাকায় অবস্থিত কালীবাড়ির বাসিন্দা দেবাশিস ভট্টাচার্য তথ্যের অধিকার (আরটিআই)-এর অধীনে আগ্রা দুর্গ সম্পর্কে তিনটি প্রশ্নের তথ্য চেয়েছিলেন। আগ্রা কেল্লাটি কে তৈরি করেছিলেন ? সম্রাট আকবর আগ্রা ফোর্টে কী পরিবর্তন করেছিলেন ? আগ্রা ফোর্ট নির্মাণের আগে কী কাজ করা হয়েছিল ?
দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, আগ্রা ফোর্ট একটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভ। যা ঐতিহাসিক নিদর্শনও বটে। এএসআই-এর কাছে এ বিষয়ে সব তথ্য থাকতে হবে। কিন্তু এএসআইয়ের জবাবে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, "আমি পরে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে আবেদন করি এবং 25 নভেম্বর তার শুনানি হয়। এরপর বুধবার যখন আদেশ জারি করা হয়, তখন এটি এএসআই-এর জবাবকেই কার্যত সমর্থন করেছে। সমসাময়িক ইতিহাস পড়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। এবার বিষয়টি আমি আদালতের দ্বারস্থ হব ৷"
প্রবীণ ঐতিহাসিক রাজকিশোর রাজে জানান, 11 শতকে আগ্রায় একটি দুর্গের অস্তিত্ব ছিল। এটি সিকারওয়ার রাজবংশের রাজপুতদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটি ছিল মাটির তৈরি দুর্গ। 1089 থেকে 1114 সাল পর্যন্ত খিলজি সুলতানরা ক্রমাগত আগ্রা আক্রমণ করে। এতে এই দুর্গ ধ্বংস হয়। 1475 সালে বাদল সিং এই দুর্গটি পুনর্নির্মাণ করেন। এ কারণে এর নাম হয় বাদলগড়।
1487 সালে সিকান্দার লোদি এটি দখল করেন। 1504 সালের জুলাইয়ে আগ্রায় ভূমিকম্পে বাদলগড় দুর্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর ওপর 1504 খ্রিস্টাব্দে সিকান্দার লোদি এই স্থানটিকে আবার সংস্কার করেন। সিকান্দার লোদি তখন আগ্রাকে নিজের রাজধানী করেন। সিকান্দার লোদির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইব্রাহিম লোদি ক্ষমতা দখল করেন।
প্রবীণ ঐতিহাসিক রাজকিশোর রাজের মতে, "আমি 'তাওয়ারিখ-ই-আগ্রা' বইয়ে আগ্রা দুর্গের সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখেছি। 1526 সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে, মুঘল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার সময় ইব্রাহিম লোদি নিহত হন। বাদলগড় থেকেই মুঘলরা কোহিনূর হীরে পেয়েছিল। 1539 সালে চৌসার যুদ্ধে শের শাহ হুমায়ুনকে পরাজিত করেন এবং বাদলগড় দুর্গ দখল করেন।
1545 সালে শের শাহের মৃত্যুর পরেও, 1556 সাল পর্যন্ত সুরি রাজবংশ বাদলগড় দুর্গের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবরের সেনাপতি বৈরাম খান হেমুকে পরাজিত করেন বাদলগড় দুর্গ দখল করেন। আকবর তখন আগ্রা কেল্লায় তাঁর রাজধানী করেন। আকবর লাল বেলেপাথর ব্যবহার করে বর্তমান রূপে বাদলগড় দুর্গ পুনর্নির্মাণ করেন।"