ETV Bharat / bharat

18 বছর ধরে কবরস্থানেই চলছে ক্লাস ও মিড-ডে মিল, কোথায় রয়েছে এমন স্কুল ? - School Running in Graveyard

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 22, 2024, 11:00 PM IST

School in Graveyard: কবরস্থানের পাশে চলছে মিড-ডে মিল রান্না ও খাওয়া ৷ কখনও রাস্তায় তো কখনও স্টোররুমের এককোণে বসে চলছে ক্লাস ৷ এই স্কুলে কোনও বাথরুমও নেই ৷

Bihar School Running at graveyard
বিহারের কবরস্থানে চলছে স্কুল (ইটিভি ভারত)

মধুবনি (বিহার), 22 অগস্ট: কবরস্থানে চলছে স্কুল ৷ শুনে অবাক মনে হলেও এটাই সত্যি ৷ এক-দু'বছর নয়, 18 বছর ধরে চলছে কবরস্থানেই চলছে স্কুল ৷ বিহারের মধুবনি জেলার হারনা পঞ্চায়েতের আপগ্রেডেড মিডল স্কুল (উর্দু) ৷ জেলা সদর থেকে যা মাত্র 37 কিলোমিটার দূরে ৷

কবরস্থানের উপর চলছে স্কুল, দেখুন ভিডিয়ো (ইটিভি ভারত)

এই স্কুলের অবস্থা এতটাই খারাপ যে এখানকার বাচ্চারা কবরের কাছে বসে পড়াশোনা করে ৷ কবরস্থানের পাশে বসে মিড-ডে মিল খায় ৷ স্কুলের এক শিক্ষক অঞ্জু যাদবের কথায়, কবরস্থানে স্কুল হওয়ায় কিছু শিশু ভয়ে রাস্তায় খাবার খায় ৷ আবার কেউ মসজিদ ও ঈদগাহের প্রধান ফটকে বসে মিড-ডে মিল খায় ৷ আমাদেরও পড়াতে অনেক অসুবিধা হয় ৷

জানা গিয়েছে, স্কুলটি বেশ পুরনো । তিন দশক আগে জওহর রোজগার যোজনার অধীনে নির্মিত এই স্কুল তৈরিতে গ্রামবাসীদের সহযোগিতা ছিল । 2006 সালে, এই বিদ্যালয়টি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকস্তরে উত্তীর্ণ হয় । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়ও দুটি ঘর ছিল এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরেও সেই দুটি ঘরই রয়ে গিয়েছে । একসময় এখানে 400 জনেরও বেশি পড়ুয়া থাকলেও এখন সমস্যার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে 295 ৷

বিদ্যালয়ে দুটি ঘরের মধ্যে একটিতে রান্নাঘরের পাশাপাশি ক্লাস চলে ৷ সেখানে মধ্যাহ্নভোজের সামগ্রী রাখার পরে বাকি অংশে ক্লাস হয় । দ্বিতীয় ঘরে, অফিস এবং শিক্ষকদের বসার জায়গা রেখে ক্লাস পরিচালনা করা হয় ৷ এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ারা রাস্তায় বসে পড়াশোনা করে । কবরস্থানে একটি গাছের নিচে বসে পড়াশোনা করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা ৷ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা মসজিদ ও ইদগাহের গেটে পড়াশোনা করছে । পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি চলে স্টোররুমের একপাশে ৷ সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা অন্য ঘরে থাকা ছোট জায়গায় রান্নাঘরের বাসনের পাশে বসে পড়াশোনা করে ।

এটি ব্রিটিশ আমলের কবরস্থান । এখানে আশেপাশের আটটি গ্রামের মানুষের মৃতদেহ কবর দেওয়া হয় । এই কবরস্থানে এখনও পর্যন্ত শতাধিক দেহ কবর দেওয়া হয়েছে । এ জমিতেই চলছে স্কুল । 2019 সালে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভায় বলেছিলেন যে সরকার কবরস্থানের সীমানা প্রাচীরের জন্য একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ৷ যার ভিত্তিতে 8064টি কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে । কতগুলি কবরস্থানে বেড়া দেওয়া হয়েছে তার পরিসংখ্যানও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু বিহারের মধুবনির ছবি অন্য কথা বলছে ৷ এখানে কবরস্থানের ভিতরে বাচ্চাদের ক্লাস চলছে ।

স্কুলের ইনচার্জ প্রিন্সিপাল জগন্নাথ পাসওয়ান বলেন, "স্কুলে মাত্র ২টি ঘর রয়েছে । প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয় এখানে । বর্তমানে 295 জন পড়ুয়া রয়েছে । শিশুদের এখানে বসতে অনেক অসুবিধা হয় । স্কুলের জমি রাস্তার ৪ ফুট নিচে । বৃষ্টির দিনে ক্লাসরুমে জল ঢুকে যায় ৷ বারান্দায় মিড-ডে মিল তৈরি করতে হয় । শিশুদের পড়াতে হলে কবরস্থানের নিম গাছের নিচে বসতে হয় । কবরস্থান সংলগ্ন রাস্তায় মিড-ডে মিল খায় । বৃষ্টি হলে বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে দিতে হয় । এমনকি এখানে একটি বাথরুমও নেই । তিনজন মহিলা শিক্ষক রয়েছেন । তাঁরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন । পাড়ার লোকেদের বাথরুমে যেতে হয় ।"

শুধু শিশুরাই যে কষ্ট পায় তা নয় । বিদ্যালয়ের 9 জন শিক্ষক রয়েছেন । তাঁদের বসতেও অনেক অসুবিধা হয় । তাঁরা রাস্তার খোলা জায়গায় এবং কবরস্থানে নিম গাছের নিচে চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়ান । স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ ইসরাইল জানান, মসজিদের জমিতে একটি স্কুল তৈরি করা হয়েছে । অন্য কোনও জমি এখনও পাওয়া যায়নি । কয়েকদিনের মধ্যে যদি কবরস্থান ঘিরে ফেলা হয়, তাহলে রাস্তা ছাড়া শিশুদের পড়াশোনার আর কোনও জায়গা থাকবে না । 2014-15 সালেও ভবন নির্মাণের জন্য 7 লাখ টাকা পাওয়া গেলেও জমির স্বল্পতার কারণে টাকা ফেরত দেওয়া হয় ।

মধুবনি (বিহার), 22 অগস্ট: কবরস্থানে চলছে স্কুল ৷ শুনে অবাক মনে হলেও এটাই সত্যি ৷ এক-দু'বছর নয়, 18 বছর ধরে চলছে কবরস্থানেই চলছে স্কুল ৷ বিহারের মধুবনি জেলার হারনা পঞ্চায়েতের আপগ্রেডেড মিডল স্কুল (উর্দু) ৷ জেলা সদর থেকে যা মাত্র 37 কিলোমিটার দূরে ৷

কবরস্থানের উপর চলছে স্কুল, দেখুন ভিডিয়ো (ইটিভি ভারত)

এই স্কুলের অবস্থা এতটাই খারাপ যে এখানকার বাচ্চারা কবরের কাছে বসে পড়াশোনা করে ৷ কবরস্থানের পাশে বসে মিড-ডে মিল খায় ৷ স্কুলের এক শিক্ষক অঞ্জু যাদবের কথায়, কবরস্থানে স্কুল হওয়ায় কিছু শিশু ভয়ে রাস্তায় খাবার খায় ৷ আবার কেউ মসজিদ ও ঈদগাহের প্রধান ফটকে বসে মিড-ডে মিল খায় ৷ আমাদেরও পড়াতে অনেক অসুবিধা হয় ৷

জানা গিয়েছে, স্কুলটি বেশ পুরনো । তিন দশক আগে জওহর রোজগার যোজনার অধীনে নির্মিত এই স্কুল তৈরিতে গ্রামবাসীদের সহযোগিতা ছিল । 2006 সালে, এই বিদ্যালয়টি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকস্তরে উত্তীর্ণ হয় । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়ও দুটি ঘর ছিল এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরেও সেই দুটি ঘরই রয়ে গিয়েছে । একসময় এখানে 400 জনেরও বেশি পড়ুয়া থাকলেও এখন সমস্যার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে 295 ৷

বিদ্যালয়ে দুটি ঘরের মধ্যে একটিতে রান্নাঘরের পাশাপাশি ক্লাস চলে ৷ সেখানে মধ্যাহ্নভোজের সামগ্রী রাখার পরে বাকি অংশে ক্লাস হয় । দ্বিতীয় ঘরে, অফিস এবং শিক্ষকদের বসার জায়গা রেখে ক্লাস পরিচালনা করা হয় ৷ এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ারা রাস্তায় বসে পড়াশোনা করে । কবরস্থানে একটি গাছের নিচে বসে পড়াশোনা করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা ৷ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা মসজিদ ও ইদগাহের গেটে পড়াশোনা করছে । পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি চলে স্টোররুমের একপাশে ৷ সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা অন্য ঘরে থাকা ছোট জায়গায় রান্নাঘরের বাসনের পাশে বসে পড়াশোনা করে ।

এটি ব্রিটিশ আমলের কবরস্থান । এখানে আশেপাশের আটটি গ্রামের মানুষের মৃতদেহ কবর দেওয়া হয় । এই কবরস্থানে এখনও পর্যন্ত শতাধিক দেহ কবর দেওয়া হয়েছে । এ জমিতেই চলছে স্কুল । 2019 সালে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভায় বলেছিলেন যে সরকার কবরস্থানের সীমানা প্রাচীরের জন্য একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ৷ যার ভিত্তিতে 8064টি কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে । কতগুলি কবরস্থানে বেড়া দেওয়া হয়েছে তার পরিসংখ্যানও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু বিহারের মধুবনির ছবি অন্য কথা বলছে ৷ এখানে কবরস্থানের ভিতরে বাচ্চাদের ক্লাস চলছে ।

স্কুলের ইনচার্জ প্রিন্সিপাল জগন্নাথ পাসওয়ান বলেন, "স্কুলে মাত্র ২টি ঘর রয়েছে । প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয় এখানে । বর্তমানে 295 জন পড়ুয়া রয়েছে । শিশুদের এখানে বসতে অনেক অসুবিধা হয় । স্কুলের জমি রাস্তার ৪ ফুট নিচে । বৃষ্টির দিনে ক্লাসরুমে জল ঢুকে যায় ৷ বারান্দায় মিড-ডে মিল তৈরি করতে হয় । শিশুদের পড়াতে হলে কবরস্থানের নিম গাছের নিচে বসতে হয় । কবরস্থান সংলগ্ন রাস্তায় মিড-ডে মিল খায় । বৃষ্টি হলে বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে দিতে হয় । এমনকি এখানে একটি বাথরুমও নেই । তিনজন মহিলা শিক্ষক রয়েছেন । তাঁরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন । পাড়ার লোকেদের বাথরুমে যেতে হয় ।"

শুধু শিশুরাই যে কষ্ট পায় তা নয় । বিদ্যালয়ের 9 জন শিক্ষক রয়েছেন । তাঁদের বসতেও অনেক অসুবিধা হয় । তাঁরা রাস্তার খোলা জায়গায় এবং কবরস্থানে নিম গাছের নিচে চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়ান । স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ ইসরাইল জানান, মসজিদের জমিতে একটি স্কুল তৈরি করা হয়েছে । অন্য কোনও জমি এখনও পাওয়া যায়নি । কয়েকদিনের মধ্যে যদি কবরস্থান ঘিরে ফেলা হয়, তাহলে রাস্তা ছাড়া শিশুদের পড়াশোনার আর কোনও জায়গা থাকবে না । 2014-15 সালেও ভবন নির্মাণের জন্য 7 লাখ টাকা পাওয়া গেলেও জমির স্বল্পতার কারণে টাকা ফেরত দেওয়া হয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.