হামিরপুর (হিমাচল প্রদেশ), 1 অক্টোবর: কথায় আছে যাদের কেউ নেই, তাদের ভগবান আছেন ৷ মৃত্যুর পর সেই ভগবানই তাদের ব্যবস্থা করে দেন ৷ ঠিক তেমনই এক মানুষ হলেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু কুমার ৷ মৃত্যুর পর যাদের মরদেহর কোনও পরিচয় পাওয়া যায়না, গত 3 দশক ধরে তাদের মুখাগ্নি, পিণ্ড দান এবং শ্রাদ্ধের কাজ করে আসছেন এই শান্তনু কুমার ৷
1980 সালে বাবার সঙ্গে হিমাচল প্রদেশে চলে আসেন শান্তনু ৷ 1990 সাল থেকে সমাজের কল্যাণে কাজ করা শুরু করেন তিনি ৷ আর সমাজসেবার অংশ হিসাবেই কারও কাছে কোনও আর্থিক সাহায্য ছাড়া মৃতদেহ সৎকারের কাজ করে চলেছেন শান্তনু ৷
এখনও পর্যন্ত প্রায় 5 হাজার মানুষের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন শান্তনু ৷ অর্থের অভাবে কখনই এই কাজ বন্ধ হয়নি তাঁর ৷ হামিরপুরে যেখানেই দাবিহীন মৃতদেহ দেখতে পান, কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন শান্তনু ৷ এরপর সেই ছাই সংগ্রহ করে হরিদ্বারে পিণ্ড দান করেন ৷ শুধু তাই নয়, প্রতি বছর পিতৃপক্ষে তাদের শ্রাদ্ধের কাজও সম্পন্ন করেন শান্তনু ৷
এবারও তার অন্যথা হবে না ৷ রীতি মেনে 2 অক্টোবর হরিদ্বারে কয়েক হাজার অপরিচিত মানুষের শ্রাদ্ধ দেবেন শান্তনু কুমার ৷ এই বিষয়ে তিনি জানান, প্রতিবছরের মতো এবছরও হরিদ্বারে প্রতিপক্ষ অমাবস্যায় 2 অক্টোবর সকলের আত্মার শান্তি কামনা করে শ্রাদ্ধের কাজ করবেন ৷
আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নন শান্তনু ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকারের কাজে তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারেনি ৷ হামিরপুর বাজারে একটি ছোট দোকান চালিয়ে সৎকারের সমস্ত খরচ বহন করেন তিনি । শান্তনু বলেন, "এখনও পর্যন্ত প্রায় 4 হাজার 975 টি দাবিহীন মৃতদেহ সৎকার করেছি ৷"
কিন্তু কীভাবে এই কাজ শুরু করেন শান্তনু ?
দীর্ঘদিন আগে দুর্ঘটনায় মৃত এক ব্যক্তির সৎকার করছিল পুলিশ ৷ সেই সময় সেখানেই উপস্থিত ছিলেন শান্তনু ৷ পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তনি জানতে পারেন মৃতদেহের কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি ৷ সেই ঘটনার পরই দাবিহীন মৃতদেহ সৎকারে তাঁর আগ্রহ জন্মায় বলে জানিয়েছেন শান্তনু ৷
সমাজসেবার জন্য বিয়ে হয়নি
শান্তনু কুমার সমাজসেবার জন্য অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নেন । যখন তিনি জানতে পারেন, একটি দাবিহীন মৃতদেহ কোথাও পড়ে আছে, তখন তিনি সেই মৃতদেহ দাহ করতে ছুটে যান ৷ এরপর হরিদ্বারে ছাই বিসর্জন দিয়ে ফিরে আসেন । শান্তনুর কথায়, "পরিবার ও সমাজসেবা একসঙ্গে চলতে পারে না । এই কারণেই সারা জীবন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৷ কোনও বাধা ছাড়াই যাতে সমাজসেবার এই কাজটি চালিয়ে যেতে পারি ৷"
হিমাচল সরকারের অনুপ্রেরণার উৎস সম্মানে ভূষিত শান্তনু
সমাজে তাঁর অবদানের জন্য হিমাচল শান্তনুকে অনুপ্রেরণার উৎস সম্মানে ভূষিত করেছে হিমাচল সরকার ৷ এছাড়া, একাধিক সামাজিক সংগঠনের কাছ থেকেও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি ৷ পুরস্কার হিসাবে পাওয়া হাজার হাজার টাকাও শান্তনু নিজের কাছে না রেখে দান করে দেন ।