নয়াদিল্লি, 16 ডিসেম্বর: ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লেখা বহু চিঠি ফেরত চেয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির শরণাপন্ন হলেন পিএমএমএল-এর এক সদস্য ৷ ওই চিঠিগুলি কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধির কাছে রয়েছে বলে তাঁর দাবি ৷ সেগুলি উদ্ধার করতে পুত্র রাহুলের কাছে আর্জি জানালেন রিজওয়ান কাদরি ৷
তিনি রাজধানীতে অবস্থিত তিন মূর্তি ভবনের প্রাইম মিনিস্টার্স মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটির সদস্য ৷ গুজরাতের আমেদাবাদে একটি কলেজে ইতিহাস বিষয়ে অধ্যাপনা করেন রিজওয়ান কাদরি ৷ 2023 সালের জুন মাসে 'নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি'র (এনএমএমএল) নাম বদলে 'প্রাইম মিনিস্টার্স মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি' (পিএমএমএল) করার প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয় ৷ পরে নাম পাল্টানো হয় ৷ তিন মূর্তি ভবনেই বাস করতেন নেহরু ৷ তাঁর মৃত্যুর পর ওই ভবনটি মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয় ৷
সোমবার রিজওয়ান কাদরি সাংবাদিকদের জানান, পূর্বতন নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি'র (এনএমএমএল) গ্রন্থাগারে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লেখার সংগ্রহ ছিল ৷ 2008 সালে ইউপিএ জমানায় সোনিয়া গান্ধির নির্দেশে নেহরুর লেখার সংগ্রহ থেকে 51টি বাক্সের তথ্য মুছে ফেলা হয় ৷ ওই বাক্সগুলিতে বিভিন্ন সময়ে নানা বিশিষ্টজনকে লেখা প্রধানমন্ত্রী নেহরুর চিঠি রয়েছে ৷ এই চিঠিগুলি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডউইনা মাউন্টব্যাটেন, এলবার্ট আইনস্টাইন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, পদ্মজা নাইডু, অরুণা আসফ আলি, বাবু জগজীবন, রামজী, গোবিন্দবল্লভ পন্থের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লিখেছিলেন ৷
পিএমএমএল সোসাইটির সদস্য কাদরি আরও জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিঠিগুলি ফেরত চেয়ে সোনিয়া গান্ধিকে মেইল করেছিলেন ৷ চিঠিগুলি গ্রন্থাগারকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন ৷ না-হলে আসল চিঠিগুলি স্ক্যান করে ডিজিটাইজ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধি তাঁর মেইলের কোনও উত্তর দেননি ৷
এই প্রসঙ্গে পিএমএমএল-এর সদস্য রিজওয়ান কাদরি বলেন, "সোনিয়া গান্ধির থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে আমি রাহুল গান্ধিকে মেইল করি ৷ চিঠিগুলি জাতীয় সম্পদ এবং আমাদের ঐতিহ্য ৷ সেগুলি গবেষকরা হাতে যাওয়া উচিত ৷ আমাদের সবার জানা উচিত, সেই সময় নেতাদের মধ্যে কী কী বিষয়ে আদানপ্রদান হয়েছিল ৷"
অধ্যাপক রিজওয়ান কাদরি কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া-পুত্র রাহুল গান্ধিকে লেখেন, "আপনি বিরোধী দলনেতা ৷ তাই আপনার কাছে আমার আর্জি, আপনি এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুন ৷ ভারতের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য় সংরক্ষণের সমর্থনে সাহায্য করুন ৷"
এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পিএমএমএল সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ বৈঠকে রিজওয়ান কাদরি এবং আরও কয়েকজন এই বিষয়টি উত্থাপন করেন ৷ কেউ যখন এই চিঠিগুলি গ্রন্থাগারে দান করে দিয়েছেন, তখন সেগুলি আবার তিনি কীভাবে ফেরত নিয়ে নিতে পারেন ৷ চিঠিগুলি এতদিন ধরে সংগ্রহের অংশ ছিল ৷
রিজওয়ান কাদরির আরও অভিযোগ, অতীতে তিনি দেখেছেন এক ব্যক্তি গ্রন্থাগারে চিঠিগুলি নষ্ট করছেন ৷ তিনি বলেন, "এই ঘটনার পর আমরা ফরেনসিক অডিট দাবি করেছিলাম ৷ ফাইল থেকে কীভাবে কোন পাতাগুলি নষ্ট করা হয়েছে, এর নেপথ্যে উদ্দেশ্য কী ? প্রশাসন এর তদন্তে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটিও গঠন করেছিল ৷"
লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সম্পর্ক বহুচর্চিত ৷ এই প্রসঙ্গে ইতিহাসের অধ্যাপক রিজওয়ান বলেন, "আশা করি, গান্ধি পরিবার আমার অনুরোধকে মান্যতা দেবেন ৷ আমি একজন গবেষক ৷ আমার লক্ষ্য ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা ৷ ইতিহাস আসল এবং নিরপেক্ষ ৷ 2019 সাল থেকে এই চিঠিগুলি ফেরতের দাবি জানিয়ে আসছি ৷"
এমন পরিস্থিতিতে এই ইস্যুকে হাতিয়ার করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিজেপি ৷ বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র বলেন, "প্রাইম মিনিস্টার্স মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি' (পিএমএমএল)-এর সদস্য রিজওয়ান কাদরি লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিকে চিঠি লিখেছেন ৷ জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠির 51টি বাক্স নিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধি ৷ তিনি সেগুলি ফেরত দেননি ৷ তিনি (রিজওয়ান কাদরি) চিঠিগুলি ফিরে পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ৷ এগুলি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ৷ কোনও পরিবারের সম্পত্তি নয় ৷ দেশ জানতে চায়, নেহরুজি এবং লেডি মাউন্টব্যাটেন, জগজীবন রাম, জয়প্রকাশ নারায়ণের মধ্যে কী বিষয়ে চিঠি আদানপ্রদান হত ৷ চিঠিগুলিতে এমন কী আছে যে গান্ধি পরিবার সেগুলি জনসমক্ষে আনতে পারছেন না ! আমরা ওই চিঠিগুলি ফেরতের দাবি জানাচ্ছি ৷" এই ঘটনায় কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷