হায়দরাবাদ: 9 জুন, সন্ধ্যা 7টা 15 মিনিট ৷ ইতিহাসের সাক্ষী রইল রাষ্ট্রপতি ভবন ৷ জওহরলাল নেহরুর পর টানা তৃতীয়বার দেশের মসনদে বসছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ৷ বাবাকে চায়ের দোকানে সাহায্য করা থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদে স্থলাভিষিক্ত হওয়া, যাত্রাপথ ছিল কণ্টকাদীর্ণ ৷ সেই বন্ধুর পথ পেরিয়েই ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় জননেতা ৷ একনজরে মোদির জীবনের অধ্যায়...
1950 সাল: 17 সেপ্টেম্বর, 1950 ৷ গুজরাতের ভদনগরে জন্ম হয়েছিল নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদির ৷ বাবা দামোদরদাস মোদির ছিল একটি ছোট চায়ের দোকান ৷ স্কুল ছুটির পর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপর সেই চায়ের দোকানে বাবাকে সাহায্য করতেন মোদি ৷
- 1967 সাল: মাত্র 17 বছর বয়সে ভারত ভ্রমণের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন ৷ বাড়ি ছেড়ে হিমালয়, ঋষিকেশ, বিভিন্ন রামকৃষ্ণ মিশন-সহ ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেন ।
- 1972 সাল: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগদান । দেশের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন ।
- 1975 সাল: নরেন্দ্র মোদিকে ‘গুজরাট লোক সংগ্রাম সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় আরএসএস-এর তরফে । জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতারি এড়াতে মোদিকে গা-ঢাকাও দিতে হয়েছিল । তিনি সরকার বিরোধী প্রচারপত্র ছাপানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন ।
- 1978 সাল: ভাদোদরায় আরএসএস প্রচারক হিসেবে যোগ দেন ৷ সংঘে আরও দায়িত্ব বাড়ে । ‘বিভাগ প্রচারক’ হন ।
- 1979 সাল: আরএসএসের হয়ে কাজ করতে তিনি দিল্লিতে যান । যেখানে তাঁকে জরুরি অবস্থার ইতিহাসের আরএসএসের সংস্করণ নিয়ে গবেষণা ও লেখার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল ।
- 1980 সাল: আরএসএসের সমভাগ প্রচারকের দায়িত্ব পান ৷ দক্ষিণ গুজরাত এবং সুরাতের একাধিক অঞ্চলে কাজ শুরু করেন ৷
- 1985 সাল: আরএসএস মোদিকে বিজেপির সাংগাঠনিক দায়িত্ব দেয় । পরবর্তীতে 1987 সালে, মোদি আমেদাবাদ পৌর নির্বাচনে বিজেপির প্রচারাভিযান সংগঠিত করতে কাজ করেন । সেই নির্বাচনে জিতেছিল বিজেপি । মূলত ওই সময় থেকেই গুজরাতের বিজেপির মজবুত ভীত গড়ার কাজ শুরু হয় ৷
- 1987 সাল: এএমসি নির্বাচনে জেতে বিজেপি ৷ বিভিন্ন নাগরিক সংস্থার নির্বাচনের জন্য সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা নেন মোদি । ওই বছরই লালকৃষ্ণ আদবানির সঙ্গে ন্যায় যাত্রায় অংশ নেন ৷ গরিবদের অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য শুরু হয়েছিল সেই ন্যায় যাত্রা । 1989 সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্যও কাজ শুরু করেন ।
1988 থেকে 1995-এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদির একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে উত্থান হয় ৷ দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করার চ্যালেঞ্জিং কাজটি তিনি সুদক্ষ হাতে সামলেছিলেন। গুজরাতে ক্রমশ বটবৃক্ষের রূপ নিতে শুরু করে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ 1995 সালে গুজরাতে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে । তারপর থেকে, গুজরাতে শাসন করছে গেরুয়া শিবির।
- 1989 সাল: লোক শক্তি যাত্রা সংগঠিত করেন নরেন্দ্র মোদি ৷ যা রাজ্যে বিজেপিকে যথেষ্ট মাইলেজ দেয় ।
- 1990 সাল: গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি 67টি আসনে জয়লাভ করে ৷ চিমনভাই প্যাটেলের সরকারে যোগ দেয় । মোদি লালকৃষ্ণ আদবানিরর 1990 সালের রাম রথযাত্রার আয়োজনে সাহায্য করেছিলেন ৷
- 1991-92 সাল: মনোহর জোশীর একতা যাত্রার আয়োজন করেন ।
- 1995 সাল: বিজেপির জাতীয় সম্পাদক নিযুক্ত হন ৷ দেশের পাঁচটি প্রধান রাজ্যের দায়িত্ব পান ৷ একজন তরুণ নেতার জন্য এই দায়িত্ব পাওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা ।
- 1995 সাল: গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি 121টি আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । ওই বছরই জাতীয় সম্পাদক হিসাবে নয়াদিল্লিতে চলে যান । উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে । 1998 সালে, তিনি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে নিযুক্ত হন ৷ 2001 সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ওই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন ৷
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী (2001 থেকে 2014)
- 2001 সাল: তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছিল ৷ একই সঙ্গে উপনির্বাচনে বিজেপি রাজ্য কয়েকটি বিধানসভা আসন হারায় । বিজেপির জাতীয় নেতৃত্ব প্যাটেলের পরিবর্তে মোদীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী স্থলাভিষিক্ত করেন । 7 অক্টোবর 2001, মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ।
- 2002 সাল: গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার ফেরেন মোদি ৷ উপনির্বাচনের ঘাটতি মিটিয়ে 2002 গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে রেকর্ড জয়ে নেতৃত্ব দেন মোদি ।
- 2003 সাল: ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের আয়োজন ৷ প্রথম দ্বিবার্ষিক ভাইব্র্যান্ট গুজরাত ইনভেস্টরস সামিট উদ্বোধন করেন লালকৃষ্ণ আদবানী ।
- 2004 সাল: স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে কন্যা কেলাবানী এবং শালা প্রবেশোৎসব শুরু হয় ।
- 2007 সাল: গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরে মোদি সরকার ৷ গুজরাটের দীর্ঘতম দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হন মোদি ।
- 2008 সাল: গুজরাতে চলে যায় বঙ্গে প্রত্যাখিত টাটা ন্যানো ।
- 2009 সাল: বিশ্ব গ্রাম যোজনা শুরু করে গুজরাত সরকার ৷ গুজরাত সরকারের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেয় এই প্রকল্প ।
- 2011 সাল: সদ্ভাবনা যাত্রা শুরু করেন মোদি ৷ সামাজিক সম্প্রীতিকে উন্নীত করার জন্য গুজরাত জুড়ে চলে রোড শো ।
- 2012 সাল: চতুর্থবার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন নরেন্দ্র মোদি ৷ মার্চে টাইম ম্যাগাজিনের কভার ফোটোয় জায়গা পান মোদি ৷ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই ম্যাগাজিন 'মোদি মিনস বিজনেস' শিরোনামে একটি লেখাও প্রকাশ করে ৷
- 2013 সাল: গুজরাত ছাড়িয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে মোদি ঝড় ৷ বিজেপি 2014 লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মোদির নাম ঘোষণা করে ৷ ওই বছরই স্ট্যাচু অফ ইউনিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আডবাণী এবং নরেন্দ্র মোদি।
ভারত এখন বিশ্ববন্ধু, আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে; দাবি মোদির
- 2014 সাল: ঐতিহাসিক বিজয় ! 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ’র জয় আসে । যার মূলে ছিলেন নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি ৷ 2014 সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপিকে নেতৃত্ব দেন ৷ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি ৷ 1984 সালের পর প্রথমবার মতো কোনও একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ৷ ওই বছরই টাইম ম্যাগাজিনের পাঠকদের বিচারে ‘বছরের সেরা ব্যক্তি’ নির্বাচিত হন মোদি ।
- 26 মে, 2014 সাল: নরেন্দ্র মোদি দেশের 15তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন ৷ দেশের ইতিহাসে প্রথমবার দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) দেশগুলির নেতাদেরও প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ।
- 25শে সেপ্টেম্বর, 2014 সাল: মেক ইন ইন্ডিয়া অভিযান শুরু হয় ৷ ‘কাম, মেক ইন ইন্ডিয়া’ মোটোকে সঙ্গী করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বৈশ্বিক উৎপাদন গন্তব্য হিসাবে উন্নিত করার উদ্যোগ শুরু করে । মুকেশ অম্বানি, আজিম প্রেমজি-সহ দেশের প্রথমসারির ব্যবসায়ীরা মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।
- 2 অক্টোবর, 2014 সাল: স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ মহাত্মা গান্ধির 150তম জন্মবার্ষিকীতে ভারতের বৃহত্তম পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন মোদি ৷ এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল 2019 সালের 2 অক্টোবরের মধ্যে পরিচ্ছন্ন ভারত অর্জন করবে ।
- 30 মে 2019: দ্বিতীয়বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি।
- 9 জুন, 2024: তৃতীয়বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি।