ভুবনেশ্বর, 17 জুন: ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) পরিচালনায় কোনও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)-এর আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ৷
রবিবার ওড়িশার সম্বলপুর সফরে গিয়ে তিনি বলেন, নিট পরিচালনায় দুই ধরনের অনিয়ম প্রকাশ্যে এসেছে । প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের থেকে কম সময় বরাদ্দ করায় পরীক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলে তাঁদের গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়েছে ৷ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন যে, সরকার গ্রেস মার্ককে স্বীকৃতি দেয়নি এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে 1,563 জন পরীক্ষার্থীর জন্য পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁর কথায়, "দুটি জায়গায় অতিরিক্ত অন্যায় সামনে এসেছে । আমি ছাত্র এবং অভিভাবক উভয়কেই আশ্বস্ত করছি যে, সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ৷ আমরা এটিকে যৌক্তিক সমাধানে নিয়ে যাব ৷"
এনটিএ-র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-সহ কোনও আধিকারিক দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ৷ তিনি এনটিএ-তে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছেন ৷ তাঁর কথায়, "এনটিএ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও এর কাজকর্মের ক্ষেত্রে অনেক সংস্কার প্রয়োজন । সরকার এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন । আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, কোনও অপরাধীকে রেহাই দেওয়া হবে না, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷"
নিট-ইউ পরীক্ষাই দেশে স্নাতক-স্তরের মেডিক্যাল কোর্সে ভর্তির প্রবেশদ্বার ৷ দেশের 571টি শহরে 4,750টি কেন্দ্রে গত 5 মে এবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল । গত চার জুন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় । ফলাফল ঘোষণার পর অভিভাবক ও শিক্ষকরা 1,563 জন শিক্ষার্থীকে গ্রেস মার্ক দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন ।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নিট নিয়ে ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে এসএফআই ৷ নিজের মন্তব্যের জন্য সুকান্ত ক্ষমা না-চাইলে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ৷
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, "কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি'র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যিনি একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের অধ্যাপক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি রাজ্য সরকারের শিক্ষা ও নিয়োগ সংক্রান্ত একের পর এক দুর্নীতি নিয়ে আজ পর্যন্ত নীরব প্রশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করেছেন । তিনিই সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকায় অভূতপূর্ব দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অকারণ গোটা রাজ্যের যোগ্য, মেধাবী ডাক্তারি পড়ুয়াদের অসভ্য আক্রমণ করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন । আক্রমণ করেছেন আল আমিন মিশনের মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানকে ।"
এসএফআইয়ের আরও অভিযোগ, "নিট দুর্নীতি-সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যাবতীয় শিক্ষা দুর্নীতি থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে এবং সামগ্রিকভাবে সরকারি মদতপুষ্ট দুর্নীতিকে লঘু করে দেখানোর জন্যই সুকান্ত মজুমদার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন । নিট পরীক্ষা পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা এনটিএ ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই দুর্নীতির দায় প্রবলভাবে বর্তায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর উপরেও । উনি সেই দায় এড়াতেই বিষয়টিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন । আমাদের দাবি, অবিলম্বে সুকান্ত মজুমদারকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে । অন্যথায় তাঁকে সারা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে ।"