পুরী, 17 জুলাই: উলটো রথের পর এবার সোনার সাজে পুরীর তিন বিগ্রহ ৷ যা 'সুনা বেশ' নামে পরিচিত ৷ রথযাত্রার শেষে অনুষ্ঠিত হয় 'সুনা বেশ' ৷ গুন্ডিচা মন্দির থেকে ফিরে শ্রীমন্দিরের সিংদ্বারের সামনে তিন রথেই সোনার বেশে সজ্জিত হন তিন বিগ্রহ ৷ প্রায় 208 কেজির সোনার গয়না পরানো হয় জগন্নাথ, বলরাম এব সুভদ্রাকে ৷
নন্দীঘোষ, তালধ্বজ এবং দেবদলন তিন বিগ্রহের তিন রথ ৷ উলটো রথের পর সেই রথেই প্রচুর পরিমাণে সোনার অলঙ্কার পরানো হয় তিন দেব-দেবীকেই। শ্রীজগন্নাথ মন্দির পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, তিন বিগ্রহকে কয়েক'শো কেজির গয়না পরানোর পালা সম্পূর্ণ হয়েছে ইতিমধ্যেই ৷ বুধবার সন্ধ্যায় এই সুনা বেশ আচার অনুষ্ঠিত হয়েছে মন্দিরে ৷ সারা দেশ থেকে কয়েক লক্ষ ভক্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ৷ মন্দিরের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল ছ'টায় মঙ্গল আরতি সম্পন্ন হয় ৷ এরপর সকাল সাড়ে 10টায় গোপাল বল্লভ ভোগ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ৷ এরপর সন্ধ্যা 6টা থেকে শুরু হয় এই সুনা বেশ অনুষ্ঠান ৷
কিংবদন্তি আছে, 1460 সালে রাজা কপিলেন্দ্র দেবের রাজত্বকালে এই 'সুনা বেশ' শুরু হয়েছিল ৷ যুদ্ধে জয়লাভের পরে 16টি হাতির পিঠে সোনা এনেছিলেন রাজা ৷ সেই সোনাই জগন্নাথ মন্দিরে দান করেছিলেন ৷ এমনটাই কথিত আছে বলে জানিয়েছেন মন্দিরের এক সেবায়েত ৷ মন্দিরের ভাণ্ডার ঘর অর্থাৎ, যেখানে সোনার অলঙ্কার মজুত রাখা হয়; সেখান থেকে সশস্ত্র পুলিশ এবং মন্দির আধিকারিকরা বিশেষ দিনে সোনার গয়নাগুলি নিয়ে আসেন ৷ সেই গয়না এরপর পুষ্পপালক এবং দৈতাপতি পুরোহিতদের হাতে তুলে দেন ৷ তারাই এরপর সাজিয়ে তোলেন জগন্নাথ বিগ্রহকে ৷
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, এই উপলক্ষে তিন দেবতার বিগ্রহ প্রায় 208 কেজি ওজনের সোনার গয়না পরেন। বিগ্রহদের সোনার অলঙ্কার এবং অন্যান্য গহনা দিয়ে সাজাতে প্রায় এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগে ৷ দেব বিগ্রহদের এদিন শ্রী হস্ত (সোনার হাত), শ্রী পেয়ার (সোনার পা), শ্রী মুকুট (বড় সোনার মুকুট), শ্রী ময়ূর চন্দ্রিকা (ভগবান জগন্নাথের জন্য সোনার ময়ূর পালক), শ্রী চুলপতি (একটি রীতি মেনে কপালে পরানো হয়), শ্রী কুন্ডল (ঝুলন্ত বলের সাথে সোনার কানের দুল), শ্রী রাহুরেখা (অর্ধ বর্গাকার আকৃতির সোনার অলঙ্কার), শ্রী মালা (নেকলেস), শ্রী চিতা (প্রভুর তৃতীয় চোখ) ), শ্রী চক্র (সোনার চক্র), শ্রী গদা (সোনার গদা), শ্রী পদ্ম (সোনার পদ্ম) এবং শ্রী শঙ্খ (রৌপ্য শঙ্খ) পরানো হয় ৷
সেবায়েতদের মতে, কপিলেন্দ্র দেবের যুগে প্রায় 138টি ডিজাইনের সোনার অলঙ্কার দিয়ে দেবতাদের সজ্জিত করা হয়েছিল। সেই সংখ্যাটি এখন অবশ্য 20 থেকে 30-এ নেমে এসেছে ৷ তিনি আরও জানান, ভক্তদের দান করা সোনা ব্যবহার করে প্রয়োজন অনুযায়ী এই অলঙ্কারগুলি মেরামত করা হয় ৷ বছরে আরও চার বিশেষ দিনে (দশেরা বা বিজয়া দশমী, কার্তিক পূর্ণিমা, পৌষ পূর্ণিমা এবং দোল পূর্ণিমা) সুনা বেশে সজ্জিত হন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ৷