নয়াদিল্লি, 1 নভেম্বর: ঘন ধোঁয়াশার চাদরে মোড়া পুরো শহর ৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের ৷ ক্রমশ বাড়ছে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর তালিকা ৷ দীপাবলি মিটতেই কার্যত 'বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে' পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি ৷ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আগে থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম দিল্লির একাধিক এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সরকারের তরফে ৷
কিন্তু দীপাবলির রাতে সেই নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাজপত নগর, কালকাজি, ছতরপুর, জৌনপুর, পূর্ব কৈলাস, সকেত, রোহিনী, দ্বারকা, পাঞ্জাবি বাগ, বিকাশ পুরী, দিলশাদ গার্ডেন, বুরারি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেদার বাজি ফাটানো হয় ৷ ফলে একধাক্কায় 'অত্যন্ত খারাপ' পর্যায়ে নেমে যায় দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ৷
গত 3 বছরে এই প্রথম দীপাবলিতে চরমতম পর্যায়ে পৌঁছে যায় দিল্লির দূষণ বলে দাবি আবহবিদদের ৷ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডের (CPCB) রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত 10টায় এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (একিউআই)-এর মাত্রা ছিল 330 ৷ শুক্রবার সকাল 7টা 30 মিনিটে AQI-এর গড় মাত্রা 361 ৷ সেই সঙ্গে শূন্য দৃশ্য়মানতা ৷
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় AQI-এর গড় মাত্রা 350-এর উপরে ৷ রিপোর্ট অনুযায়ী, এদিন সকাল 7টা 30 মিনিটে আলিপুরে AQI-এর মাত্রা ছিল 353, আনন্দ বিহারে 395, অশোক বিহারে 387, বাওয়ানায় 392, বুরারি ক্রসিং-এ 395, চাঁদনি চকে 395, মথুরা রোডে 371, করনি সিং শুটিং রেঞ্জে 372, এয়ারপোর্টে 375, জাহাঙ্গীরপুরিতে 390, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে 343, লোধি রোডে 314, মুণ্ডকাতে 374, নাজফগড়ে 329, নেহরু নগরে 385, উত্তর ক্যাম্পাসে 390, দ্বারকায় 352, ওখলাতে 369 ৷ বাতাসের গুণগত মানের এই মাত্রা দেখে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন ৷ স্থানীয়দের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে তারা ৷
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডের দাবি, গত বছর এতো খারাপ পর্যায় পৌঁছয়নি দিল্লির দূষণ ৷ গত বছর দীপাবলিতে ছিল পরিষ্কার আকাশ এবং AQI-এর গড় মাত্রা ছিল 218 ৷ কিন্তু এই বছর পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠেছে দিল্লিতে ৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন, যানবাহন থেকে দূষণ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্য পোড়ানোর কারণে বাতাসের গুণগত মান শেষ কিছুদিন ধরে ক্রমশ নীচের দিকে নামতে থাকে ৷ দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর কারণে একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে সেই মান ৷
দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক শতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দিল্লি সরকার ৷ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই ৷ দূষণ প্রতিরোধে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য 377টি এনফোর্সমেন্ট দল গঠন করেন তিনি ৷ কিন্তু তারপরও দূষণ রোধে ব্যর্থ হয়েছে সরকার ৷
তবে শুধু দিল্লিতে নয়, এই দূষণের গুণগত মানের সূচক নেমেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও ৷ দীপাবলির পড়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল 9টায় চণ্ডীগড়ে AQI রেকর্ড করা হয়েছে 303 ৷ অমৃতসরে এই মাত্রা 314, খান্নায় 308, জলন্ধরে 253, মাণ্ডি গোবিন্দগড়ে 331 পৌঁছে যায় এই মাত্রা ৷ অন্যদিকে, হরিয়ানার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাহাদুরগড়ে 289, বল্লভগড়ে 224, ভিওয়ানিতে 288, চরখি দাদরিতে 228, ফরিদাবাদে 236, ফতেয়াবাদে 248, হিসারে 252, কর্নেল 232, পাঞ্চুলাতে 232, রোহতকে 259, যমুনানগরে 265 AQI-এর মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ।
দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির (DPCC)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শীতের শুরুতে এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়তে চলেছে ৷ প্রতি বছর পঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্যর খড় পোড়ানোর কারণে বাতাসের মান ক্রমশ কমতে থাকে ৷ তাই এবারও নভেম্বরের শুরুতে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে দিল্লিবাসী ৷