ETV Bharat / sukhibhava

টিকাকরণের লক্ষ্য গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার কমানো: গগনদীপ কং - second wave

লকডাউনের মতো পদ্ধতি অতিক্রম করে যাওয়া দরকার । কোন কোন কাজে রোগ ছড়াচ্ছে ? আমরা কি সেগুলো চিহ্নিত করতে পারি ? সেটা কি বাজার, না কলেজ, না স্কুল, না সিনেমা-থিয়েটার, না উৎসব, না ভোটের মিছিল ? সরকারকে তথ্য সহকারে জানাতে হবে । একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন ভাইরোলজিস্ট গগনদীপ কং ৷

interview-of-gagandeep-kong
interview-of-gagandeep-kong
author img

By

Published : Apr 22, 2021, 6:52 AM IST

1. প্রথম ধাক্কার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ভারত এই পরিস্থিতি সামলাবে কীভাবে ? দ্বিতীয় ঢেউ কতটা মারাত্মক ? অনেকে বলছেন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখে পৌঁছে যাবে । আপনি কী মনে করেন ?

দ্বিতীয় ওয়েভে প্রথমবারের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়ছে । তার কারণ প্রথমবারের মতো আমরা কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলছি না ৷ আর সম্ভবত এবারের ভাইরাস ভ্যারিয়ান্টগুলো আগের থেকে বেশি সংক্রামক । যেহেতু আমরা এখনই সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারছি না, সেক্ষেত্রে একমাত্র যদি যথাযথ সতর্কতা নিয়ে একজন মানুষ অন্যের সংস্পর্শে আসেন, তবেই এই ঢেউকে আটকানো সম্ভব । এর অর্থ ভাল মানের মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরের মধ্যে থাকলে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন বজায় রাখা ।

দ্বিতীয় ওয়েভ খুবই গুরুতর । কারণ বিরাট সংখ্যায় সংক্রমণের অর্থ, আক্রান্তদের মধ্যে একটা সামান্য অংশও যদি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন সব মিলিয়ে সংখ্যাটা এত বড় দাঁড়াবে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে । আমরা কিছু না করলে সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়ে চলতেই পারে । কিন্তু সৌভাগ্যবশত, রাজ্যগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে । তাই আমার আশা, দৈনিক চার লাখে পৌঁছে যাওয়ার হতাশাজনক ছবিটা আটকানো যেতে পারে ।

2. আমরা আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করতাম । কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল বিরাট ঘাটতি রয়েছে । এই অবস্থা কীভাবে হল ?

তিনটে প্রধান কারণ রয়েছে । প্রথমত, ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বিপুল হলেও, ভ্যাকসিন তৈরির সমস্ত উপকরণ ভারতে পাওয়া যায় না । আমাদের আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় আর পৃথিবীর সমস্ত ভ্যাকসিন নির্মাতারাই যা পাওয়া যায় তা কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে । দ্বিতীয়ত, আমাদের ভ্যাকসিন নির্মাতারা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ছবি দেখিয়েছিলেন যে তাঁরা দ্রুত তাঁদের উৎপাদন বাড়াতে পারবেন । কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়নি এবং ঘাটতি দেখা দিয়েছে । তৃতীয়ত, যাতে তাঁরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে পারেন, সেজন্য নির্মাতাদের জানানো দরকার যে তাঁদের একটা নির্দিষ্ট বাজার আছে এবং তারা কীভাবে দেশের প্রয়োজন মেটাবেন এবং কতটা বিদেশে রফতানি করবেন (এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে এজন্য সংস্থাগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকে )। যদি সেটা নির্দিষ্ট না থাকে, এবং সরকার কম সময়ে অত্যন্ত সস্তা দরে ভ্যাকসিনের জন্য অর্ডার দিতে থাকে, তাহলে নির্মাতাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন ।

3. ভাইরোলজ়িতে এক বছর ধরে গভীর গবেষণার পর আমরা কী এটা আন্দাজ করতে পারছি যে ভাইরাস ভবিষ্যতে কেমন আচরণ করবে ? বা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে কি না ?

এক বছরে আমরা এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি ৷ মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছি যে এর পরে কী হবে । অন্যান্য ভাইরাসের মতোই এই ভাইরাসও আরও দ্রুত ছড়াতে চাইবে , যাতে তারা নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে । এর অর্থ, সে আরও সংক্রামক হতে চাইবে । আর ভ্যাকসিন যদি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হতে থাকে, তাহলে সে আক্রান্তের ইমিউনো রেসপন্সকে ফাঁকি দিতে চাইবে । সৌভাগ্যবশত, সংক্রমণ ঘটাতে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন প্রয়োজন এবং কতরকমভাবে সেই স্পাইক প্রোটিন বদলাতে পারে, তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে । এটা সম্ভব যে আগামী দু’বছরের মধ্যে আমরা সমস্তরকম ভ্যারিয়েশনই দেখতে পাব । লাগাতার মিউটেশনের জেরে কিছু স্ট্রেন গুরুতর অসুস্থতা তৈরি করতে পারে, কিন্তু এইসব মিউটেশন সেই ভাইরাসগুলোর মধ্যেই থাকে যারা দ্রুত ছড়ায় । আর যেহেতু যে ভাইরাস আক্রান্তকে মেরে ফেলে, তারা সহজে সংখ্যাবৃদ্ধি করে না । আমি চাই না যে গুরুতর অসুস্থতাই ভবিষ্যতে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াক ।

4. দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অথবা দেশব্যাপী লকডাউন হলে কী পরিণতি হতে পারে ? বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের ওপর কী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যুক্তি চাপানো যেতে পারে ? আপনার কী মনে হয়, সরকারগুলো যথাযথভাবে সমস্যাটার দিকে নজর দিচ্ছে ?

আমার মনে হয়, আমাদের লকডাউনের মতো পদ্ধতি অতিক্রম করে যাওয়া দরকার । কোন কোন কাজকর্মের জন্য রোগ ছড়াচ্ছে ? আমরা কি সেগুলো চিহ্নিত করতে পারি ? সেটা কি বাজার, না কলেজ, না স্কুল, না সিনেমা-থিয়েটার, না উৎসব, না ভোটের মিছিল ? কোনটার মাধ্যমে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ? সরকারকে প্রমাণ দিয়ে জানাতে হবে । লকডাউন একটা ভোঁতা অস্ত্র ৷ সমাজ ও অর্থনীতিকে ব্যহত না করেই আমরা ভালভাবে কাজ করতে পারি ।

5. ভারতের ভাইরাস ভ্যারিয়্যান্টগুলো নিয়ে কী বলবেন ? নতুন ভ্যারিয়্যান্টগুলো কতটা মারাত্মক ?

ভারতে ভাইরাস ভ্যারিয়্যান্টগুলোকে পর্যাপ্তভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে তাদের আরও বেশি সংক্রমণ ঘটাবার ক্ষমতা রয়েছে । এগুলো গুরুতর সংক্রমণ হয়ে দাঁড়ায় কি না, সেটা এখনও দেখার বাকি আছে । এটা স্পষ্ট যে এপিডেমিওলজ়িকে আরও বেশি গবেষণাগারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ৷ যাতে আমরা ভাইরাসের আচরণ বুঝতে পারি । যদিও আমরা সিকোয়েন্সিংকে আরও সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছি ৷ কিন্তু সেইসব পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা শ্লথ গতিতে চলেছি ৷ যার মাধ্যমে ভ্যাকসিন রেসপন্স সঠিকভাবে বোঝা যায় ।

6. রাজ্য সরকারগুলোর কী করা উচিত এই পরিস্থিতিতে ? জনগণ এবং তাদের নেতাদের দায়িত্ব কী ? ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং কৌশল কী হতে পারে ?

রাজ্য সরকারগুলোকে দেখতে হবে, কীভাবে জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন না করে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম এবং প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক গতিবিধিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় । বিনোদন, রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মতো নানা কাজকর্ম ভিড়কে আকর্ষণ করে এবং ভিড় থেকেই সংক্রমণটা ছড়ায়। রাজ্য সরকারগুলোকে ভাবতে হবে যে এধরণের ঝুঁকি নেওয়া আদৌ লাভজনক কি না।

7. এখনও আমাদের টিকাকরণ 10 শতাংশের নিচে। এটা বাড়াতে কী করা যেতে পারে?

ভ্যাকসিনের গুরুত্ব এবং তা নিলে কী কী উপকার হতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা আরও ভালভাবে প্রচার করতে হবে । দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের ইজ়রায়েলের দিকে তাকানো উচিত ৷ যেখানে দেখা গেছে যে একটা অংশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিলে সেইসব বিধিনিষেধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, যেগুলো আমাদের ওপর চেপে রয়েছে ।

8. সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর ?

এই মুহূর্তে আমাদের টিকাকরণ রণকৌশলের লক্ষ্য ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো নয়, বরং ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষদের মধ্যে মৃত্যুহার এবং গুরুতর অসুস্থতা কমানো । যখনই আমরা দেশের 30 শতাংশের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেব, তখনই আমরা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ওপর তার প্রভাব দেখতে পারব । পুরোটাই নির্ভর করছে, কতদিন ভ্যাকসিনের রক্ষাকবচ থাকে এবং কত তাড়াতাড়ি আমরা সব মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে পারি । এখনও অনেক কিছু শেখার আছে ।

9. এই ঢেউ কতদিন স্থায়ী হবে ?

শুরু থেকে ফের নিম্নমুখী হওয়া পর্যন্ত প্যাটার্নটা তিন থেকে চার মাসের । আমরা দ্বিতীয় মাসে রয়েছি । সুতরাং সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছনো এবং সেখান থেকে ফের সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ার মধ্যে আর বেশি দেরি নেই ৷ বিশেষ করে আমরা যদি সেইসব কাজকর্ম এড়িয়ে চলি, যেগুলো থেকে সংক্রমণ ছড়ায় ।

10. কোভিডের এভাবে ফিরে আসার পিছনে কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন ?

এই প্রশ্নের উত্তরটা প্রথম প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই স্পষ্ট ।

1. প্রথম ধাক্কার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ভারত এই পরিস্থিতি সামলাবে কীভাবে ? দ্বিতীয় ঢেউ কতটা মারাত্মক ? অনেকে বলছেন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখে পৌঁছে যাবে । আপনি কী মনে করেন ?

দ্বিতীয় ওয়েভে প্রথমবারের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়ছে । তার কারণ প্রথমবারের মতো আমরা কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলছি না ৷ আর সম্ভবত এবারের ভাইরাস ভ্যারিয়ান্টগুলো আগের থেকে বেশি সংক্রামক । যেহেতু আমরা এখনই সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারছি না, সেক্ষেত্রে একমাত্র যদি যথাযথ সতর্কতা নিয়ে একজন মানুষ অন্যের সংস্পর্শে আসেন, তবেই এই ঢেউকে আটকানো সম্ভব । এর অর্থ ভাল মানের মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরের মধ্যে থাকলে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন বজায় রাখা ।

দ্বিতীয় ওয়েভ খুবই গুরুতর । কারণ বিরাট সংখ্যায় সংক্রমণের অর্থ, আক্রান্তদের মধ্যে একটা সামান্য অংশও যদি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন সব মিলিয়ে সংখ্যাটা এত বড় দাঁড়াবে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে । আমরা কিছু না করলে সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়ে চলতেই পারে । কিন্তু সৌভাগ্যবশত, রাজ্যগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে । তাই আমার আশা, দৈনিক চার লাখে পৌঁছে যাওয়ার হতাশাজনক ছবিটা আটকানো যেতে পারে ।

2. আমরা আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করতাম । কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল বিরাট ঘাটতি রয়েছে । এই অবস্থা কীভাবে হল ?

তিনটে প্রধান কারণ রয়েছে । প্রথমত, ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বিপুল হলেও, ভ্যাকসিন তৈরির সমস্ত উপকরণ ভারতে পাওয়া যায় না । আমাদের আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় আর পৃথিবীর সমস্ত ভ্যাকসিন নির্মাতারাই যা পাওয়া যায় তা কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে । দ্বিতীয়ত, আমাদের ভ্যাকসিন নির্মাতারা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ছবি দেখিয়েছিলেন যে তাঁরা দ্রুত তাঁদের উৎপাদন বাড়াতে পারবেন । কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়নি এবং ঘাটতি দেখা দিয়েছে । তৃতীয়ত, যাতে তাঁরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে পারেন, সেজন্য নির্মাতাদের জানানো দরকার যে তাঁদের একটা নির্দিষ্ট বাজার আছে এবং তারা কীভাবে দেশের প্রয়োজন মেটাবেন এবং কতটা বিদেশে রফতানি করবেন (এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে এজন্য সংস্থাগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকে )। যদি সেটা নির্দিষ্ট না থাকে, এবং সরকার কম সময়ে অত্যন্ত সস্তা দরে ভ্যাকসিনের জন্য অর্ডার দিতে থাকে, তাহলে নির্মাতাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন ।

3. ভাইরোলজ়িতে এক বছর ধরে গভীর গবেষণার পর আমরা কী এটা আন্দাজ করতে পারছি যে ভাইরাস ভবিষ্যতে কেমন আচরণ করবে ? বা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে কি না ?

এক বছরে আমরা এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি ৷ মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছি যে এর পরে কী হবে । অন্যান্য ভাইরাসের মতোই এই ভাইরাসও আরও দ্রুত ছড়াতে চাইবে , যাতে তারা নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে । এর অর্থ, সে আরও সংক্রামক হতে চাইবে । আর ভ্যাকসিন যদি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হতে থাকে, তাহলে সে আক্রান্তের ইমিউনো রেসপন্সকে ফাঁকি দিতে চাইবে । সৌভাগ্যবশত, সংক্রমণ ঘটাতে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন প্রয়োজন এবং কতরকমভাবে সেই স্পাইক প্রোটিন বদলাতে পারে, তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে । এটা সম্ভব যে আগামী দু’বছরের মধ্যে আমরা সমস্তরকম ভ্যারিয়েশনই দেখতে পাব । লাগাতার মিউটেশনের জেরে কিছু স্ট্রেন গুরুতর অসুস্থতা তৈরি করতে পারে, কিন্তু এইসব মিউটেশন সেই ভাইরাসগুলোর মধ্যেই থাকে যারা দ্রুত ছড়ায় । আর যেহেতু যে ভাইরাস আক্রান্তকে মেরে ফেলে, তারা সহজে সংখ্যাবৃদ্ধি করে না । আমি চাই না যে গুরুতর অসুস্থতাই ভবিষ্যতে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াক ।

4. দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অথবা দেশব্যাপী লকডাউন হলে কী পরিণতি হতে পারে ? বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের ওপর কী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যুক্তি চাপানো যেতে পারে ? আপনার কী মনে হয়, সরকারগুলো যথাযথভাবে সমস্যাটার দিকে নজর দিচ্ছে ?

আমার মনে হয়, আমাদের লকডাউনের মতো পদ্ধতি অতিক্রম করে যাওয়া দরকার । কোন কোন কাজকর্মের জন্য রোগ ছড়াচ্ছে ? আমরা কি সেগুলো চিহ্নিত করতে পারি ? সেটা কি বাজার, না কলেজ, না স্কুল, না সিনেমা-থিয়েটার, না উৎসব, না ভোটের মিছিল ? কোনটার মাধ্যমে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ? সরকারকে প্রমাণ দিয়ে জানাতে হবে । লকডাউন একটা ভোঁতা অস্ত্র ৷ সমাজ ও অর্থনীতিকে ব্যহত না করেই আমরা ভালভাবে কাজ করতে পারি ।

5. ভারতের ভাইরাস ভ্যারিয়্যান্টগুলো নিয়ে কী বলবেন ? নতুন ভ্যারিয়্যান্টগুলো কতটা মারাত্মক ?

ভারতে ভাইরাস ভ্যারিয়্যান্টগুলোকে পর্যাপ্তভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে তাদের আরও বেশি সংক্রমণ ঘটাবার ক্ষমতা রয়েছে । এগুলো গুরুতর সংক্রমণ হয়ে দাঁড়ায় কি না, সেটা এখনও দেখার বাকি আছে । এটা স্পষ্ট যে এপিডেমিওলজ়িকে আরও বেশি গবেষণাগারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ৷ যাতে আমরা ভাইরাসের আচরণ বুঝতে পারি । যদিও আমরা সিকোয়েন্সিংকে আরও সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছি ৷ কিন্তু সেইসব পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা শ্লথ গতিতে চলেছি ৷ যার মাধ্যমে ভ্যাকসিন রেসপন্স সঠিকভাবে বোঝা যায় ।

6. রাজ্য সরকারগুলোর কী করা উচিত এই পরিস্থিতিতে ? জনগণ এবং তাদের নেতাদের দায়িত্ব কী ? ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং কৌশল কী হতে পারে ?

রাজ্য সরকারগুলোকে দেখতে হবে, কীভাবে জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন না করে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম এবং প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক গতিবিধিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় । বিনোদন, রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মতো নানা কাজকর্ম ভিড়কে আকর্ষণ করে এবং ভিড় থেকেই সংক্রমণটা ছড়ায়। রাজ্য সরকারগুলোকে ভাবতে হবে যে এধরণের ঝুঁকি নেওয়া আদৌ লাভজনক কি না।

7. এখনও আমাদের টিকাকরণ 10 শতাংশের নিচে। এটা বাড়াতে কী করা যেতে পারে?

ভ্যাকসিনের গুরুত্ব এবং তা নিলে কী কী উপকার হতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা আরও ভালভাবে প্রচার করতে হবে । দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের ইজ়রায়েলের দিকে তাকানো উচিত ৷ যেখানে দেখা গেছে যে একটা অংশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিলে সেইসব বিধিনিষেধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, যেগুলো আমাদের ওপর চেপে রয়েছে ।

8. সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর ?

এই মুহূর্তে আমাদের টিকাকরণ রণকৌশলের লক্ষ্য ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো নয়, বরং ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষদের মধ্যে মৃত্যুহার এবং গুরুতর অসুস্থতা কমানো । যখনই আমরা দেশের 30 শতাংশের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেব, তখনই আমরা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ওপর তার প্রভাব দেখতে পারব । পুরোটাই নির্ভর করছে, কতদিন ভ্যাকসিনের রক্ষাকবচ থাকে এবং কত তাড়াতাড়ি আমরা সব মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে পারি । এখনও অনেক কিছু শেখার আছে ।

9. এই ঢেউ কতদিন স্থায়ী হবে ?

শুরু থেকে ফের নিম্নমুখী হওয়া পর্যন্ত প্যাটার্নটা তিন থেকে চার মাসের । আমরা দ্বিতীয় মাসে রয়েছি । সুতরাং সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছনো এবং সেখান থেকে ফের সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ার মধ্যে আর বেশি দেরি নেই ৷ বিশেষ করে আমরা যদি সেইসব কাজকর্ম এড়িয়ে চলি, যেগুলো থেকে সংক্রমণ ছড়ায় ।

10. কোভিডের এভাবে ফিরে আসার পিছনে কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন ?

এই প্রশ্নের উত্তরটা প্রথম প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই স্পষ্ট ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.