হায়দরাবাদ, 29 সেপ্টেম্বর : প্রতি বছর 28 সেপ্টেম্বর "বিশ্ব ব়্যাবিস দিবস" (World Rabies Day) পালন করা হয়ে বিশ্বজুড়ে ৷ রইল এ দিন এবং বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু জরুরি তথ্য ৷
বিশ্ব ব়্যাবিস দিবস নিয়ে জরুরি তথ্য-
আমাদের দেশে প্রতি বছর 15-20 লক্ষ মানুষ ব়্যাবিস বা জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হন ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organisation, WHO) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় 20 হাজার মানুষ ব়্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৷ এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয় ৷
এ বছর এই দিনের থিম 'ব়্যাবিস: তথ্য, ভয় নয়' (Rabies: Facts, not Fear) ৷ এতে ব়্যাবিস বা জলাতঙ্ক সম্বন্ধে প্রচলিত তথ্য, ভুল তথ্যগুলি তুলে ধরে পাশাপাশি সঠিক তথ্য প্রচার করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ভয় কাটানো যায় ৷
ব়্যাবিস দিবসের ইতিহাস-
বিশ্ব ব়্যাবিস দিবস (The World Rabies Day) প্রথম পালিত হয় 2007 সালে ৷ হু-র (WHO) সঙ্গে একযোগে আমেরিকার 'গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ব়্যাবিস কন্ট্রোল' (Global Alliance for Rabies Control), 'সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (Centers for Disease Control and Prevention, CDC) এই দিনটি পালনের উদ্যোগ নেয় ৷ 2030-র মধ্যে এই গ্রহ থেকে রোগটিকে দূর করার লক্ষ্যে বহু সংগঠন, সরকারি, বেসরকারি সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে ৷
ব়্যাবিস বা জলাতঙ্ক কী ?
এটি এক ধরনের জুনোটিক রোগ (zoonotic disease), যা পশু থেকে মানুষে ছড়ায় ৷ 'দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ব়্যাবিস কন্ট্রোল' (The Global Alliance for Rabies Control) জানিয়েছে, একটি সংক্রামিত স্তন্যপায়ী প্রাণীর (mammal) স্নায়ুতন্ত্রের কোষ (nervous system tissues) বা লালারস (saliva) থেকে অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীতে ছড়ায় এই ভাইরাস সংক্রমণ ৷ ব়্যাবিস ভাইরাসে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System) আক্রান্ত হয় এবং মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ যার শেষ পরিণতি মৃত্যু ৷ ব়্যাবিস বা জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার 99.9% ৷
সংক্রামিত পশুর কামড় বা আঁচড় থেকে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে ৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কুকুরের থেকে মানুষে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে (বিশ্বে 95%) ৷ এছাড়া বাদুড়, রেকুন (raccoon), শকুন (skunk), শেয়াল (foxes), নেকড়ে (coyotes) জাতীয় প্রাণীর থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে ৷
এই প্রাণীগুলির মধ্যে কোনও একটি কামড়ালে বা আঁচড়ালে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে ফেলতে হবে ৷ যদি এটা জানা না যায়, যে কুকুরটি কামড়েছে তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল কি না, তাহলে যাকে কামড়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার ৷
আরও পড়ুন: Sukhibhava : করোনা সংক্রমণে অ্যান্টিবডি চিকিৎসা কি কার্যকরী ?
ব়্যাবিস বা জলাতঙ্কের লক্ষণ
এর ফলে রোগীর জ্বর আসে ৷ রোগী খুব ক্লান্ত বোধ করতে পারে, সঙ্গে ক্ষতস্থানে ব্যথা, জ্বালা অনুভূত হয় ৷ ব়্যাবিসে আক্রান্ত হলেও অনেক সময় তা শরীরে 1 থেকে 3 মাস সময় পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে ৷ চিকিৎসকরা একে 'ইনকিউবেশন পিরিয়ড' (incubation period) বলেন ৷ কিন্তু একবার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হলে নানা ধরনের স্নায়বিক দৌর্বল্যের লক্ষণ প্রকাশ পায় ৷
- জল খেতে সমস্যা অথবা জলে ভয় (Difficulty swallowing water or fear of water)
- জ্বর (Fever)
- আতঙ্কিত বোধ করা (Feeling worrisome)
- সবকিছু গুলিয়ে ফেলা (Feeling confused)
- বমি বমি ভাব (Vomiting and nausea)
- মাথাব্যথা (Headache)
- রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা (Nightmares)
- অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ (Excessive salivation)
- ইনসমনিয়া (Insomnia)
- আংশিক বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া (Partial Paralysis)
কী করে রোধ করা সম্ভব ?
1. কোনও ক্ষতবিক্ষত বন্যপ্রাণী দেখলেও তার সংস্পর্শে না গিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া উচিত ৷
2. ঝুঁকিটা জেনে রাখা দরকার ৷ দেশের বাইরে কোথাও যাওয়ার আগে গন্তব্যস্থলের চারপাশে কুকুর বা জন্তু-জানোয়ারের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে রাখা উচিত ৷
3. কামড়ের জায়গা বা আঁচড়ের জায়গা সঙ্গে সঙ্গে সাবান আর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ৷
4. সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা শুরু করলে মানুষে ব়্যাবিসের সংক্রমণ 100 শতাংশ রোখা যায় ৷
5. নিজের পোষ্যকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও ৷