হায়দরাবাদ : প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ শরীর এবং মনের মধ্যে সংযোগ খুঁজতে ব্যস্ত ৷ উদাহরণস্বরূপ মানুষ কি সত্যিই ভগ্ন হৃদয় নিয়ে মারা যায় ? একটি সুস্থ মনের সঙ্গে শারীরিক সুস্থতার কোনও যোগ রয়েছে? আর এর উত্তর পেতেই বিজ্ঞানীরা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগগুলি নিয়ে গবেষণা করছেন । বিষন্নতা এবং হৃদরোগের মধ্যে কিন্তু এই ধরনের একটি সম্পর্ক রয়েছে । গবেষণায় দেখা গিয়েছে তাঁরাই সাধারণত বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, যাঁরা অতিরিক্ত ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় ভোগেন ৷ শুধু তাই নয়, বিষন্নতা হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় ৷ সম্প্রতি প্লস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন, কার্ডিও ভাসকুলার রোগের কারণ হিসাবে বিষন্নতার ভূমিকা ঠিক কতখানি বা আদৌ এদের মধ্য়ে কোনও যোগ আছে কি (Can Depression Cause Heart Disease)?
গবেষকরা ঠিক কী করেছিলেন :
স্পেনের গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্দ্রা মার্টন পেলেজ এবং তাঁর সহকর্মীরা 55 থেকে 75 বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির কারণ এবং বিষন্নতার মধ্যে যোগসূত্র অন্বেষণ করতে মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর নজর দিয়েছেন । মেটাবলিক সিনড্রোম কী? এটি এমন একটি অবস্থা, যে ক্ষেত্রে একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধি, কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি এবং হাই কোলেস্টেরলের সমস্য়া দেখা দেখা দেয় ৷ যা একজন ব্যক্তির হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় ।
গবেষণার জন্য বেসলাইন বিশ্লেষণে 6,500 জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷ এদের মধ্য়ে 4,500 জনকে দুই বছর পরেও ফলোআপ করেছিলেন গবেষকরা ৷ গবেষকরা সুপ্রতিষ্ঠিত ফ্রেমিংহাম রিস্ক স্কোর ব্যবহার করেছেন ৷ এটি হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ নির্ধারণের জন্য সুস্থ ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে তৈরি করা হয়েছিল । দশ বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে মারা যাওয়ার জন্য কাদের কতখানি ঝুঁকি রয়েছে, সেই অনুযায়ী এখানে নিম্ন, মাঝারি এবং উচ্চ এই তিনটি পর্যায় ভাগ করা হয়েছে । বেসলাইনে এবং দুই বছর পর (যখন তাঁরা ডায়েট এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের প্রোগ্রামগুলি অনুসরণ করতে শুরু করেছিলেন) বিভিন্ন প্রশ্নাবলীর মাধ্য়মে অংশগ্রহণ মধ্য়ে বিষন্নতার লক্ষণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখেছিলেন গবেষকরা ৷
ফলফল :
আশ্চর্যজনকভাবে, বেসলাইন বা ফলো-আপে কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি এবং বিষন্নতার মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক পাওয়া যায়নি । মহিলাদের ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি যাঁদের বেশি, তাঁদের মধ্য়ে ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখা গেলেও পুরুষদের মধ্যে একেবারেই তা দেখা যায়নি ৷ আবার ফলো আপের সময় মহিলাদের মধ্য়েও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে হতাশা বা বিষন্নতার কোনও যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি ৷
অংশগ্রহণকারীরা যারা সীমাবদ্ধ ডায়েট এবং শারীরিক কার্যকলাপ প্রোগ্রাম অনুসরণ করছিলেন দেখা গিয়েছে, তাঁদের কার্ডিও ভাসকুলার রোগের ঝুঁকিই শুধু নয়, অনেক কমেছে বিষন্নতার লক্ষণগুলিও ৷ এই গবেষণায় যদিও অনেক ক্ষেত্রেই মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছে । তবে কিন্তু অন্যান্য গবেষণা থেকে আমরা জানি যে, হৃদরোগে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় বিষন্নতা বেশি থাকে। এটাও সুপ্রতিষ্ঠিত যে, সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি বিষন্নতায় ভোগেন । তাই মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং বিষন্নতার মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকতেই পারে ৷
বিষন্নতা এবং হৃদরোগ কেন সংযুক্ত?
যদিও এই গবেষণা জানায় না যে, হৃদরোগের ঝুঁকি বিষন্নতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ৷ তবে এর মাধ্য়মে কোনও উপসংহারে পৌঁছানো যায় না ৷ কারণ এর সঙ্গে অনেকগুলি কারণ জড়িয়ে আছে ৷ বেশ কিছু আচরণগত এবং জৈবিক কারণ হয়ত এই সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে পারে ।
বিষন্নতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি উভয়ের জন্যই সাধারণ কিছু জৈবিক কারণ রয়েছে :
- প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি
- এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন (হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর সংকোচন)
- অল্টার্ড অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম অ্যাকটিভিটি (অটোনমিক স্নায়ুতন্ত্র হৃৎপিণ্ড-সহ পেশীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে)
- ব্লাড প্লেটলেট ডিসফাংশন (যেখানে রক্তের প্লেটলেটগুলি একসাথে লেগে থাকার এবং জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি )
আরও পড়ুন : কিশোরদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বাড়িয়ে দেয় স্থুলতার ঝুঁকি : গবেষণা
এছাড়াও, আমরা জানি যে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পালন, যেমন শারীরিক কার্যকলাপ করা, ধূমপান না করা এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখা, হৃদরোগ এবং বিষন্নতা উভয়ের ঝুঁকিই কমাতে পারে । দুর্ভাগ্যবশত, বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই ধরনের অভ্যাস পরিবর্তন করা আরও কঠিন বলে মনে করেন । উদাহরণস্বরূপ, ধূমপান ত্যাগ করা । যা তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় ৷