ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে সম্প্রতি ঘোষণা করছে যে আমাদের দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের পুষ্টির ঘাটতির সমস্যা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে । কেন্দ্রের উচিত ছিল নীতি আয়োগের সেই সুপারিশে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার, যেখানে তারা বলেছিল কেন্দ্রের বিকাশ কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত পুষ্টির বিষয়টি । কিন্তু কেন্দ্র এ নিয়ে কী করল? শুধুই দায়িত্ব থেকে হাত ঝেড়ে ফেলল । ‘পোষণ অভিযান’কে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের ইতিবাচকভাবে উদ্যোগী হওয়ার উপর যে আশা ছিল, তা ধাক্কা খেল ।
কিছু সময় আগে নীতি আয়োগ একটি কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছিল, যার আওতায় মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব গ্রাম এবং বসতি স্তরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির উপর বর্তাত । আয়োগের তরফে এ কথাও বলা হয়েছিল যে যথেষ্ট সংখ্যক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রতিটি কেন্দ্রে নিয়োগ করা হবে এবং সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সমস্ত কর্মীদের দক্ষতার মানও বাড়ানো হবে ।
দেখা গিয়েছে যে একটি শিশুর মস্তিষ্কের 90 শতাংশেরও বেশি অংশ গঠিত হয় তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার 1000 দিনের মধ্যে ৷ এটাই হল সেই সময় যখন কোনও অন্তঃস্বত্ত্বার পুষ্টিকর পথ্যের প্রয়োজন হয় । এই রকম সময়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে বরাদ্দের অঙ্ক, মা এং শিশুকে পুষ্টিকর পথ্য প্রদানের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাড়ানো উচিত ছিল । কিন্তু বরাদ্দ বাড়ানোর পরিবর্তে কেন্দ্র বরাদ্দে আরও ছাঁটাই করল । যে পদ্ধতিতে অগ্রাধিকার বদলে গেল, তাতে কেবলমাত্র যে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং খাদ্যের অধিকার নিয়ে মতের টানাপোড়েন তৈরি হল তাই নয়, পর্যবেক্ষকদের মধ্যেও মতানৈক্য দেখা গেল ।
প্রায় তিন দশক আগে শীর্ষ আদালত নির্দেশ জারি করেছিল যে ছ’বছরের নীচে সমস্ত শিশুরা, কিশোরী মেয়েরা, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েদের অন্তত 300 দিন পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে । ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট স্কিম দেশে অদৃশ্যভাবে হলেও রয়েছে প্রায় সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে । যদিও আদালত টিকাকরণ এবং পুষ্টিকর পথ্যের সরবরাহের জন্য 17 লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে, তবু বর্তমানে দেশে মাত্র 13.77 লক্ষ কেন্দ্র রয়েছে । যা তথ্য মিলেছে, তা অনুযায়ী এই সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির অন্তত এক চতুর্থাংশ কেন্দ্রেই পানীয় জলের পরিষেবা নেই এবং 36 শতাংশ কেন্দ্রে শৌচালয় নেই । এই কেন্দ্রগুলির বেশিরভাগই বর্তমানে এগুলির নিজস্ব কর্মীদের দ্বারাই বেআইনি আয়ের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
আইসিডিএস হল বিশ্বের বৃহত্তম পুষ্টি প্রকল্প । অঙ্গনওয়াড়িদের পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানের ব্যর্থতা গত প্রায় কয়েক বছর ধরেই প্রকল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে চলেছে । পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টির প্রভাবে মৃত্যুর পরিমাণ 68 শতাংশ । যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, অপুষ্টির সমস্যাকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে অতীতে হওয়া গাফিলতি থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে । তবুও দেশে অন্তত 7 লক্ষ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে এই অপুষ্টির কারণেই ।
সাত মাস আগে ‘গ্লোবাল হেলথ সায়েন্স’ ম্যাগাজিন এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে কোরোনা সংকটের জেরে অতিরিক্ত 40 লক্ষ শিশু অপুষ্টির কবলে পড়বে । বাস্তব পরিস্থিতি শুধরানোর ব্যর্থতা এবং উৎকৃষ্ট সুপারিশের প্রতি মনযোগ দিতে অস্বীকার করার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে বিশ্বের বিকাশ ব্যাহত হয়েছে, এমন শিশুদের 30 শতাংশই রয়েছে ভারতে । এই দেশই আবার বিশ্বের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের 50 শতাংশের বাড়ি । ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মজবুত না করলে আমরা কীভাবে ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’এর অর্থ অনুভব করতে পারব?