(আইএএনএস) যৌন হিংসার নানা ঘটনার পিছনে থাকতে অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফি দেখা, বৃহস্পতিবার এমনটাই জানান বিশেষজ্ঞরা । তাঁদের মতে, যৌন অপরাধ এবং আগ্রাসনের পিছনে থাকতে পারে নির্দিষ্ট কয়েক ধরণের পর্নোগ্রাফি ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতে কারও মনে হতে পারে যে এটাই আসল জীবন, যার জেরে বাস্তবের ধারণাটা বিকৃত হয়ে যেতে পারে ।
দিল্লির ফোর্টিস হেলথকেয়ারের মেন্টাল হেলথ ও বিহেভিয়ারাল সায়েন্সেস দফতরের প্রধান সমীর পারেখ আইএএনএস-কে বলেন, “অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফি দেখে সংযম, সংবেদনশীলতার অভাব তৈরি হয়, এবং মনে হয় এটাই জীবনের ধরণ । এর জেরে বাস্তব সম্পর্কে ধারণার বিকৃতি হতে পারে ।”
তিনি যোগ করেন, “এতে আগ্রাসী উত্তেজনা তৈরি হয়, যা যৌনতা সম্পর্কে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলে ।” বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি কম বয়সে কেউ পর্নোগ্রাফি দেখে, সেক্ষেত্রে বিশ্বাসবোধ ও চরিত্র গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে ।
নয়াদিল্লি এইমসের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক নন্দ কুমারের মতে, যৌন হিংসার সঙ্গে কয়েক ধরণের পর্নোগ্রাফির সম্পর্ক রয়েছে, যা আগ্রাসন ও যৌন অপরাধে উস্কানি দেয় ।
কুমার বলেন, “উত্তেজক পর্নোগ্রাফিক বিষয়বস্তুই যৌন হিংসা ও অপরাধকে উস্কানি দিতে পারে । যিনি তা দেখছেন তাঁর ব্যক্তিত্ব, এবং কতবার কতক্ষণ করে পর্নোগ্রাফি দেখা হচ্ছে, তার ওপরেও যৌন হিংসার মাত্রা নির্ভর করে ।”
জার্নাল অফ কমিউনিকেশনে প্রকাশিত বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, যে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি শারীরিক ও মৌখিক যৌন হিংসা বাড়িয়ে তোলে । গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে মৌখিকভাবে এই আগ্রাসন শারীরিক আগ্রাসনের থেকে বেশি শক্তিশালী, যদিও দুটোই সমান গুরুতর । ফলাফলের সার্বিক ধরণ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, যে হিংসাত্মক বিষয়বস্তু একটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে ।
আরও পড়ুন : ভাঙছে সামাজিক ট্যাবু, কর্মস্থলে যৌন হেনস্থায় সরব আজকের নারী
পারেখ বলেন, “হ্যাঁ, কিছু প্রমাণ থেকে এটাই মনে করা হচ্ছে যে শ্লীলতাহানি, হিংসা, হস্তক্ষেপ এবং পর্নোগ্রাফি দেখার মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে । তিনি বলেন, “সমস্ত অপরাধই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত, এটা বলা সঠিক নয় । অনেকগুলো অন্যান্য ফ্যাক্টরও কাজ করে । কিন্তু আমি আগে যা বললাম, এর সঙ্গে পর্নোগ্রাফিরও কয়েক জায়গায় যোগাযোগ রয়েছে ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে সময়ে মধ্যে একজন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি দেখেন, তা দৈনন্দিন কাজকর্ম, ঘুম, শিক্ষাগত এবং সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলে । এর সমাধান হচ্ছে আত্মসংশোধন, ডিজিটালে আপত্তিকর বিষয়বস্তু থেকে দূরে থাকা, নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া ।
পর্ন নিষিদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে সমস্যার সমাধান হতে পারে কিনা, এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পারিখ বলেন, যদি পর্ন নিষিদ্ধ হয় তাহলেও মানুষ কোনও কোনও ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে তা দেখার পথ তৈরি করে নেবে ।
তাঁর কথায়, “আমরা মিডিয়া স্বাক্ষরতাকে ব্যবহার করতে পারি, যার মাধ্যমে তরুণরা সঠিক বিকল্পটি বেছে নিতে পারে । তাদের আসল ও নকলের ফারাক বোঝাতে হবে । তাদের নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝাতে হবে, আরও সচেতনতার প্রসার করতে হবে ।”
পারিখের বক্তব্য, “আমরা যদি যৌনশিক্ষার কথা বলি, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়কে তাতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে কীভাবে পর্নোগ্রাফি যৌন আচরণে প্রভাব ফেলে ।”