প্রতি বছর ৩ মার্চ, বিশ্ব শ্রবণ দিবস পালন করা হয় । এর উদ্দেশ্য, কি করে বধিরত্ব আটকানো যায় এবং কি কি ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া যায়, সে ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা । এবছরের থিম হল, “সবার জন্য শ্রবণক্ষমতার যত্ন! চিহ্নিতকরণ, পুনর্বাসন, যোগাযোগ ।” পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে ৪৬৬ মিলিয়ন মানুষ শ্রবণক্ষমতার সমস্যা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬.১ শতাংশ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আরও জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৯০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ বধিরতার সমস্যায় পড়বেন । এছাড়াও বিনোদনের ক্ষেত্রে জোরালো শব্দের জেরে ১.১ বিলিয়ন কমবয়সীরা(১২ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে) বধিরতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন ।
গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
বিশ্ব শ্রবণক্ষমতা দিবসে হু যে বার্তা দিয়েছে, তা হল
নীতি নির্ধারকদের জন্য
- যে সংখ্যায় মানুষ বধিরতা বা কানের অন্যান্য অসুখে ভুগছেন, সেটা মেনে নেওয়া যায় না ।
- শ্রবণক্ষমতা হারানো আটকাতে দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন ।
- কম খরচের উপকরণে বিনিয়োগ এ ধরণের মানুষদের উপকার করবে এবং সমাজও আর্থিকভাবে লাভবান হবে ।
- জাতীয় স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় সবার হেলথ কভারেজের ক্ষেত্রে কান ও তার যত্নকেও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে ।
সাধারণ মানুষের জন্য
- ভাল শ্রবণক্ষমতা ও যোগাযোগ স্থাপন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
- শ্রবণক্ষমতা হ্রাস এবং সেই সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে: জোরালো শব্দের হাত থেকে বাঁচা, কানের সঠিক যত্ন ও ইমিউনাইজেশন ।
- সঠিক সময়ে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিলে বধিরতা এড়ানো যায় ।
- যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের নিয়মিত শ্রবণক্ষমতা পরীক্ষা করানো উচিত ।
- যাঁদের শ্রবণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তাঁদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে ।
শ্রবণক্ষমতা হ্রাস বনাম বধিরতা
হু দুটি বিষয়কে এইভাবে আলাদা করেছে:
শ্রবণক্ষমতায় ঘাটতি মৃদু থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে । এধরণের মানুষরা কথাবার্তার মাধ্যমে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারেন, এবং সাধারণত হিয়ারিং এইড, ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ও অন্যান্য যন্ত্র এবং ক্যাপশনিংয়ের মাধ্যমে উপকৃত হন । বধির মানুষরা প্রায় কোনওকিছুই শুনতে পান না, তাঁরা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কথাবার্তা বলেন ।
শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের বিভিন্ন ধরণ
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:
1.কন্ডাকটিভ হিয়ারিং লস
এমন কিছুর জেরে শ্রবণক্ষমতা কমে যাওয়া, যাতে কানের বাইরের দিক অথবা মাঝামাঝি পর্যন্ত শব্দ পৌঁছতে পারে না । ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যায় ।
2.সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস
কানের অভ্যন্তরে অথবা স্নায়ুর কাজে বাধার জেরে এ ধরণের সমস্যা তৈরি হয় ।
3.মিক্সড হিয়ারিং লস
যখন শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পিছনে কন্ডাকটিভ এবং সেন্সরিনিউরাল – দুধরণের কারণই থাকে ।
4.অডিটরি নিউরোপ্যাথি স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার
এক্ষেত্রে শব্দ স্বাভাবিকভাবে কানে ঢোকে, কিন্তু কানের মধ্যে বা স্নায়ুতে সমস্যার জন্য মস্তিষ্ক সেটা অনুধাবন করতে পারে না ।
শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের মাত্রা একেক জনের মধ্যে একেক রকম হতে পারে । একে মৃদু, মোটামুটি, গুরুতর ও গভীর – এভাবে ভাগ করা যায় । এছাড়াও কোনও ব্যক্তির এক কানে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, অথবা দু-কানে একই মাত্রায় বা আলাদা আলাদা মাত্রায় শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে । এটা একইরকম থাকতে পারে, আবার সময়ের সঙ্গে খারাপ বা ভালও হয়ে যেতে পারে । কখনও জন্ম থেকে, কখনও বয়স্ক অবস্থায় এটা দেখা দিতে পারে ।
কীভাবে আটকাবেন?
আরও পড়ুন : রাতের শহরে চালককে মার, ক্যাব ভাঙচুর মহিলা যাত্রীর বয়ফ্রেন্ডের !
1.মোটরবাইক, কাজের জায়গার মেশিন, আতসবাজি, ড্রিল ইত্যাদির জোরালো শব্দ এড়িয়ে চলুন । যদি কাজের জায়গায় শব্দ এড়াতে না পারেন, সেক্ষেত্রে ইয়ারপ্লাগ বা ইয়ারমাফ ব্যবহার করুন ।
2.ইয়ারফোন ও হেডফোন আপনার কানের বড়সড় ক্ষতি করতে পারে । কম ভলিউমে গান শুনুন । বাইরের শব্দ ঢাকার জন্য ভলিউম বাড়িয়ে দেবেন না । তার জায়গায় নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোন ব্যবহার করুন ।
3.ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করবেন না । অন্তত একঘণ্টা অন্তর ব্রেক নিন ।
4.কনসার্টে গেলে লাউডস্পিকারের থেকে দূরে বসুন । কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিয়ে আওয়াজের জায়গা থেকে দূরে যান ।
5.ঘরে টিভি, রেডিও, সাউন্ড সিস্টেমের আওয়াজ কমিয়ে রাখুন ।
6.অ্যান্টি-বায়োটিক, ক্যান্সারের ওষুধের মতো নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখুন ।
7.যদি কানে ময়লা জমে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তা সরিয়ে ফেলুন । কানের ময়লার জেরে শ্রবণক্ষমতা কমলে তা সহজেই সারানো যায় ।
8.কয়েক ধরণের সংক্রমণের জেরেও এটা ঘটতে পারে । মিজলস, রুবেলা, মাম্পসের মতো সংক্রমণ রুখতে শিশুদের টিকা দিন ।
9.কানের ময়লা পরিষ্কার করতে ইয়ারবাড ব্যবহার এড়িয়ে চলুন । আপনি আঙুলে একটা পরিষ্কার কাপড় জড়িয়ে কানের বাইরের দিকের অংশ পরিষ্কার করতে পারেন ।
10.কোনওরকম তীক্ষ্ম জিনিস কানের মধ্যে ঢোকাবেন না । কোনওরকম তেল বা তরল পদার্থও দেবেন না, যদি না চিকিৎসক পরামর্শ দেন ।