রায়গঞ্জ, 22 জানুয়ারি : ছেলেমেয়েদের 'ভবিষ্যৎ গড়তে' এখন ইংরেজিমাধ্যম স্কুলই পছন্দ করেন অভিভাবকরা ৷ কারণ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির হাল দেখে সেগুলিকে বাতিলের খাতাতেই রাখছেন তাঁরা ৷ ভালো পড়াশোনা, সঙ্গে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশের জন্য বেছে নেন ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলিকেই ৷ কিন্তু, এই ধারণা ভেঙেছে উত্তর দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ সেই স্কুলের পঠনপাঠন, ক্লাসরুমের চেহারা দেখে তাক লেগে যায় ৷
কুটুমপোসা প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ স্কুলটি ইসলামপুর ব্লকের পণ্ডিতপোতা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত ৷ ফেলে দেওয়া বিভিন্ন সামগ্রী পুনর্ব্যবহার করে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে গোটা স্কুলকে ৷ এই কাজ নিজেরাই করেছেন শিক্ষকরা ৷ দেওয়াল থেকে শুরু করে মেঝে, সিলিং, স্কুলের বাইরের বাগান - সবই নিজেদের হাতে সাজিয়েছেন তাঁরা ৷ স্কুল প্রাঙ্গণের ছবিটাই পালটে গেছে ৷ যার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেড়েছে স্কুলে পড়তে আসার আগ্রহও ৷
2014 সালে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রশান্ত দেব সরকার ৷ তার আগে পর্যাপ্ত শৌচাগারও ছিল না স্কুলে ৷ ছাত্রছাত্রী ছিল মাত্র চার জন ৷ দায়িত্ব নেওয়ার পরই স্কুলের উন্নতির দিকে নজর দেন প্রশান্তবাবু ৷ বদলান পড়ানোর পদ্ধতি ৷ আর পাঁচটা ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের মতো খেলার পাশাপাশি পড়াশোনার কনসেপ্টকে এই স্কুলের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি ৷ ফলে বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৷
স্কুলের দেওয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে কার্টুন ৷ রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন ৷ গত বছর স্কুলের নতুন ভবন তৈরির জন্য অনুমতি দেয় স্থানীয় পঞ্চায়েত ৷ প্রশান্তবাবু বলেন, "এই স্কুলে যখন শিক্ষকতা করতে আসি তখন ক্লাসগুলির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল । ছাত্রছাত্রীদের ভালো পড়াশোনা করানোর পরিকাঠামো ছিল না । তখনই ভেবেছিলাম যদি সুযোগ আসে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করব । ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ বাড়াতে আমরা ক্লাসগুলোকে বিশেষভাবে সাজিয়েছি । "
প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যাগে খুশি স্থানীয় অভিভাবকরা ও প্রশাসন ৷ পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ সুলতান বলেন, "প্রশান্তবাবু ও অন্যান্য শিক্ষক স্কুলকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন । আমরা খুব খুশি ৷ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনায় আগ্রহ বেড়েছে । "