রায়গঞ্জ, 10 মে : উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোর হাটপাড়া ৷ ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটার গয়না তৈরির ক্ষেত্র ৷ দীর্ঘদিন ধরে এইধরনের গয়না তৈরি করে আসছে এলাকার কয়েকশো পরিবার ৷ কিন্তু করোনার কারণে তাঁদের ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধের মুখে ৷ গত বছর লকডাউনে প্রভাবে এখনও থেকে গিয়েছে ৷ সরকারি-বেসরকারি হস্তশিল্প মেলাও বন্ধ ৷ চাহিদা থাকলেও বিক্রি নেই ৷ কারণ বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ৷ তাঁদের শিল্পকলা ঘরবন্দী হয়েই পড়ে রয়েছে । ফলে চরম সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোরের হাটপাড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের । কিন্তু নেশা আর পেশার কারণে আজও তাঁরা তৈরি করে চলেছেন টেরাকোটার মাটির গয়না ।
মহিলাদের কাছে গয়না বরাবর পছন্দের ৷ সে সোনা হোক কিংবা টেরাকোটার গয়না ৷ আর ছোটখাটো অনুষ্ঠান তো এখন মাটির গয়নাকেই বেছে নিচ্ছেন মেয়েরা ৷ আর তাঁদের মনের কথা জেনে অভিনব ডিজ়াইনের টেরাকোটার হার, কানের দুল, হাতের বালা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করে চলেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোরের হাটপাড়া গ্রামের দুলাল রায়, সমরেশচন্দ্র রায় সহ কয়েকশো পরিবার । তাঁদের এটা পেশাও বটে ৷ মাটির অথচ হালকা এবং আধুনিক ডিজাইনের সাজসজ্জার এই গহনার চাহিদা এখন দেশজুড়ে তুঙ্গে । জেলা তো বটেই, জেলার বাইরে কলকাতায় এই টেরাকোটার গয়নার চাহিদা ব্যাপক । ভিনরাজ্য যেমন মুম্বই, দিল্লি ও চেন্নাইতেও পাড়ি দেয় এইসব শিল্পীদের তৈরি গয়না । জেলা বা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি মেলাগুলোতে, প্রদর্শনীতে এই গয়না বিক্রি করেন শিল্পীরা । ওই ভিনরাজ্য থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামে এসে গয়না কিনে নিয়ে যান । মাঝে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও আফ্রিকার মতো দেশেও রপ্তানি হয়েছে এই গয়না ।
আরও পড়ুন, হাড়ে ক্যানসার, ছেলেকে বাঁচানোর কাতর আবেদন পরিবারের
কিন্তু করোনার কারণে প্রায় একপ্রকার পথে বসে গিয়েছেন টেরাকোটা শিল্পীরা । প্রায় বছরখানেক ধরে কোথাও কোনও সরকারি বা বেসরকারি মেলা বা প্রদর্শনী নেই ৷ ফলে তাঁরা তাঁদের নির্মিত সামগ্রী বিক্রি করতে পারছেন না । কিন্তু গতবছরের লকডাউনের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ভিনরাজ্যেও গয়না পাঠাতে পারছেন না তাঁরা ৷ পাইকারী ব্যবসায়ীরা করোনা আবহে ভিনরাজ্য থেকে আসতেও পারছেন না । আর এবার তো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মানুষকে আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে । তার উপর বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন চলছে ৷ আমাদের রাজ্যও আংশিক লকডাউনের পথে হেঁটেছে ৷ ফলে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের ব্যবসা । এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সরকারি সাহায্য চাইছেন ৷ সাহায্য না পেলে আর ব্যবসার এরকম হাল থাকলে হয়ত তাঁরা পেশা বদলাতে বাধ্য হবেন ৷
তবে পেশা ও নেশার কারণে কিন্তু শিল্পীরা আজও নিরলস পরিশ্রম করে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একের পর এক তৈরি করে চলেছেন গলার নেকলেস থেকে হাতের কঙ্কন কিংবা কানের দুল ৷ তাঁদের আশা, ঝড় একদিন থামবেই ৷ পৃথিবী আবার শান্ত হবে । আবার তাঁদের ব্যবসা রমরমিয়ে চলবে ৷