রায়গঞ্জ, 19 জুন : নাচ, গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে কোভিড রোগীদের মনোবল বাড়িয়ে চলেছেন রায়গঞ্জ কোভিড হাসপাতালের (মিক্কি মেঘা) নার্স বাপি বিশ্বাস । গান, ওড়িশি নৃত্য ও আবৃত্তির মাধ্যমে রোগীদের এক দিকে যেমন মনোবল বাড়িয়ে চলেছেন, তেমনি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা করে তাঁদের কাছে হয়ে উঠছেন ঈশ্বরের দূত । তিনি হচ্ছেন রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় মিক্কিমেঘা কোভিড হাসপাতালে কর্মরত নার্স বাপি বিশ্বাস ।
নদীয়া জেলার হাঁসখালি গ্রামের বাসিন্দা বাপি 2020 সালে থেকে রায়গঞ্জের কোভিড হাসপাতালে নার্স পদে যোগ দেন । গোটা বিশ্ব মারণ ভাইরাসে আতঙ্কিত । এই ভয়াবহ কালে তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় রায়গঞ্জ মিক্কি মেঘা কোভিড হাসপাতালে যোগ দেন । সমস্ত ভয় উপেক্ষা করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত করেন নিজেকে । মারণ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মনোবল বাড়াতে দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন বাপি ।
শুধুমাত্র সেবা সেবাই করেন তাই নয়,কোভিডে আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা এবং সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর বাড়িও পৌঁছে দেন তিনি । হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের মনোবল বাড়াতে প্রায় 24 ঘণ্টাই পরিষেবা দেন তিনি । রোগীদের মনে আনন্দ দিতে কখনও গান,আবার কখনও নাচ করেন । মনের জোড় বাড়ানোর জন্য বিখ্যাত কবিদের আবৃত্তিও পরিবেশন করেন ।
বাপি জানিয়েছেন, কালের নিয়মে কিছু মৃত্যুও ঘটে এখানে । সেই মৃত্যু তাঁকে আহত করে । ব্যথিত করে । সুস্থ হয়ে যখন কেউ বাড়ি ফিরে যান তখন তৃপ্তি ও খুব আনন্দ হয় । বাপির কথায়, ‘‘সঙ্কটাপন্ন রোগীকে দেখলে চুপ করে থাকতে পারি না । দিন-রাত সেবা করে নিজের হাতে খাইয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করি । যাঁদের অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি তাঁরা সবাই আমার আত্মীয় । তাই তাঁদের পাশে থাকা আমার কর্তব্য ।’’
আরও পড়ুন : ফেরাল হাসপাতাল, বাড়িতে প্রসবের পর মৃত্যু মহিলার
সাপোর্ট কোভিড কমিউনিটির আহ্বায়ক ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, "বাপি হাসপাতালের রোগীদের আপনজন । একদিকে রোগীদের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন, অন্যদিকে রোগীদের মনোবল বাড়াতে আবৃত্তি, গান,নাচসহ নানারকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত রেখেছেন । রোগীর পরিবারের সঙ্গে যেমন নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তেমনি আমাদের সংগঠনের দৈনন্দিন কাজকর্মের সঙ্গে সমন্বয় রাখেন । এককথায় বলা যায়, কোভিড হসপিতালের আবালবৃদ্ধবণিতা রোগীদের কাছে বাপি বিশ্বাস আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ ।
করোনা জয়ী কোভিড টিমের সদস্য সাহিদুর রহমান বলেন, "কোভিডে আক্রান্ত যখন ছিলাম তখন দেখেছি কীভাবে বাপি রোগীদের সেবা করেন । ওঁর ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পায় অনেক মুমূর্ষু রোগীও । বাড়িতে বৃদ্ধ মা , স্ত্রী ও ছোট ছোট দুই শিশু পুত্র-কন্যাকে ফেলে এসে বাপি বিশ্বাস মনোনিবেশ করেছেন মানুষের সেবায় । এটাই তার ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা ।"