ইসলামপুর, 20 সেপ্টেম্বর : ছেলে বেঁচে ফিরে এসেছে । পুরোপুরি সুস্থ না হলেও দুর্গাপূজার পর আরও একটি অস্ত্রোপচারের পর বেশি অসুবিধে হওয়ার কথা নয় । তবু গত বছরের 20 সেপ্টেম্বরের অভিশপ্ত দিনটিতে পায়ে গুলি লাগা অবস্থায় ছেলের আর্তনাদ ভুলতে পারেননি বিপ্লব সরকারের মা সরস্বতী সরকার । এক বছর আগের সেই দিনটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হঠাৎই চোখে জল তাঁর ।
গত বছর শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে দাড়িভিটের পড়ুয়াদের আন্দোলনে সামিল হয়েছিল বিপ্লব সরকার । অন্য দুই নিহত ছাত্রের সঙ্গে তাঁর পায়ে গুলি লেগেছিল । ছোটো থেকেই দৃঢ় মানসিকতার ছেলে বিপ্লব হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁর মাকে বলেছিলেন,"মা তুমি চিন্তা করো না । আমি সুস্থ হয়ে ফিরব ৷" ছেলের কথাতে আশ্বস্ত হয়েছিলেন মা । দাড়িভিট কাণ্ডের এক বছরে দাঁড়িয়ে সেদিনের কথা ভাবলে এখনও কেঁপে ওঠেন সরস্বতী দেবী ।
ETV ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ''মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই দিনটি আমি ভুলতে পারব না । ছেলেরা আন্দোলন করছেন শুনে মাঠে গিয়েছিলাম । পুলিশ বের করে দিয়েছিল । কিছুক্ষণ বাদেই শুনি রাজেশের গুলি লেগেছে । আমি দ্রুত সেখানে পৌঁছে দেখি আমার ছেলে বিপ্লবকেও গাড়ি করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । আমি পাগলের মতো ওর কাছে যেতেই আমার হাত ধরে ও বলে আমার কিছু হবে না মা । আমি ভালো হয়ে যাব ।''
সরস্বতী দেবীর কথায়, ''শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ভরতি হয়ে সে আমায় প্রশ্ন করেছিল, মা আমার চিকিৎসার টাকা তোমরা জোগাড় করবে কীভাবে?''
বিপ্লবকে তাড়া করে দুঃসহ সেই স্মৃতি । তিনি বলেন,''আমাকে ও আমার দুই প্রাক্তন স্কুলের দাদাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল । তাঁরা মৃত্যুবরণ করেন । কিন্তু আজও আমি সুস্থ রয়েছি । পুজোর পর আমার পায়ে ফের অস্ত্রোপচার করা হবে । খেলতে খুব ভালোবাসতাম । এখন আর খেলতে পারি না । খুব কষ্ট হয় । তবে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (ABVP) সাহায্য না পেলে হয়তো আমিও মরেই যেতাম । ওই দিনের কথা মনে পড়লে আজও আতঙ্কিত হয়ে যাই । আমাদের উপর পুলিশ যে গুলি চালাতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি । আমি ওই দিনের ঘটনা জীবনে ভুলব না ।''