রায়গঞ্জ, 12 অক্টোবর :গ্রামে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাস ৷ রাজবাড়ির পুরানো শিবমন্দিরের পাশেই রয়েছে পীরের দরগা ৷ তাই দশমীর মেলার সূচনা করা হয় পীরের দরগার ধ্বজা উড়িয়ে ৷ গ্রামেরই কোনও মুসলিম ছেলেকে দিয়ে এই ধ্বজা ওড়ানো হয় ৷ যুগ যুগ ধরে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের চূড়ামন রাজবাড়িতে এই নিয়ম চলে আসছে ৷ প্রাচীন এই পুজোর অনেক নিয়মেই বদল এসেছে ৷ পুরানো মন্দির, ভেঙে পড়া ঠাকুদালান থেকে পুজো উঠে এসেছে নতুন মন্দিরে ৷ কিন্তু চূড়ামনের রায়চৌধুরি পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম দশমীর মেলার এই নিয়মে পরিবর্তন আনেনি ৷
ষোড়শ শতকে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন রাজা জগৎ বল্লভ রায়চৌধুরি ৷ জাঁকজমকভাবে, যাবতীয় রীতি নীতি মেনে পুজোয় মেতে উঠত গ্রামের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ৷ কালের নিয়মে সেই জৌলুসে ভাঁটা পড়েছে ৷ চূড়ামন রাজবাড়ি এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত ৷ মন্দির ও ঠাকুরদালান চলে গেছে মরাসুঁই নদীর গর্ভে ৷ তবে পুজো বন্ধ করেনি রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম ৷ গ্রামবাসীদের সাহায্যে নতুন মন্দির গড়ে মায়ের পুজো হচ্ছে ৷ রাজবাড়ীর নিয়ম অনুযায়ী দশমীর দিন মন্দির প্রাঙ্গণে বসে মেলা ৷ যার সূচনা হয় পীরবাবার দরগায় ধ্বজা উড়িয়ে ৷ ধ্বজা ওড়ান কোন মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষ । রাজ্য বা রাজপাট না থাকলেও এখনও দশমীর দিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ছবি দেখা যায় । শিবমন্দিরের পাশাপাশি পীরের দরগাও পুজোর সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় ৷
রাজপরিবারের দশম পুরুষ কৌশিক রায়চৌধুরি বর্তমানে পুজোর দেখভাল করেন । তিনি বলেছেন, "আমাদের পুজো অত্যন্ত প্রাচীন ৷ এখনও পর্যন্ত নিয়ম মেনে পুজো চলে আসছে । স্থানীয় গ্রামবাসীরা আমাদের এই বিষয়ে অনেক সাহায্য করেন । আমরাও যতটা সম্ভব পুজোকে একই মর্যাদায় নিয়ম-নীতি মেনে পরিচালনা করার চেষ্টা করি । তবে দশমীর দিন আমরা হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি কথা চিন্তা করে ধ্বজা ওড়ানো হয় । যা কোনও মুসলিম ভাইয়ের হাতেই ওড়ানো হয় ।"
স্থানীয় বাসিন্দা তথা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভাশিস সরকার বলেন, "ছোট থেকেই দেখে আসছি দশমীর দিন দরগা থেকে ধ্বজা ওড়ানো হয় । আমার ধারণা রাজবাড়ির সেই সময়কার সদস্যরা চাইতেন যেন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি বজায় থাকে ।" স্থানীয় বাসিন্দা মর্তুজ আলি বলেছেন, "ছোট থেকেই এটা দেখে আসছি ৷ হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখতেই সম্ভবত এই রীতি চালু করেছিলেন তৎকালীন রাজা ।"