রায়গঞ্জ, 23 মে: গ্রামের নাম মালগাঁও । তবে এই গ্রামের প্রায় 600 মানুষ কার্পেট শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকায় দূর-দূরান্তের মানুষ গ্রামটিকে কার্পেট ভিলেজ নামেই চেনেন । 35 বছর আগে গ্রামেরই এক বাসিন্দা বেনারস থেকে কার্পেট কীভাবে বানাতে হয়, তা শিখে আসেন ৷ ধীরে ধীরে আরও অনেক মানুষ নিজের পেশা হিসাবে বেছে নেন এই কার্পেট শিল্পকেই ৷ দীর্ঘদিন ধরে কার্পেট বানিয়ে পরিবারের পেট চালানো এই মানুষেরা বর্তমানে লকডাউনের জেরে চরম সমস্যায় পড়েছেন । দুইমাস ধরে পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ । আর্থিক অনটন তাড়া করে বেড়াচ্ছে গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষকেই ।
এই গ্রামের কার্পেট শিল্পের রূপকার আবু তাহের প্রায় 35 বছর আগে বেনারস এবং আশেপাশের অন্যান্য প্রদেশ থেকে কার্পেট বানানোর প্রক্রিয়া শিখে আসেন । পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে গ্রামে ফিরেই আশেপাশের মানুষকে কার্পেট তৈরির কাজ শেখানো শুরু করেন । ধীরে ধীরে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গড়ে ওঠে কারখানা । মেলে সরকারি সাহায্যও । বর্তমানে কার্পেট তৈরি করে প্রায় 600 মানুষের পেট চালাচ্ছেন আবু তাহের ।
বিখ্যাত বেনারস এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার কার্পেটের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে মালগাঁওয়ের কার্পেটও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বর্তমানে পৌছে যাচ্ছে । এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষ যুক্ত হয়ে পড়ছেন । অন্যান্য কাজে সেই অর্থে রোজগার না থাকায় কার্পেট শিল্পের ওপর ঝোঁক বেড়েছে সাধারণ মানুষের । তবে বর্তমানে দেশজুড়ে লকডাউন জারি হয়ে যাওয়ায় চাহিদা নেই কার্পেটের । ফলে বন্ধ হয়েছে কারখানাও ৷ বাজার কবে খুলবে, গ্রাহকের চাহিদাই বা আবার কবে হবে, তা নিয়েও ধন্দে এলাকাবাসীরা । কীভাবে আবার পুরোনো দিন ফিরবে, তাই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন জাসমিন, হাবিবুররা । তাদের কথায়, দৈনিক 300 থেকে সাড়ে 300 টাকা আয় হত কার্পেট তৈরি করে । বর্তমানে লকডাউনের জেরে বন্ধ সমস্ত কারখানা ।
আবু তাহের জানান, ‘‘দীর্ঘ 35 বছর ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি । গ্রামের প্রায় 600 পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত । তবে গত 51-52 দিন ধরে পুরোপুরিভাবে কারখানা বন্ধ রয়েছে । যা বুঝছি, তাতে মনে হচ্ছে কোরোনা ভাইরাসকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে । তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলে দেওয়া হোক । আমরা সরকারি নির্দেশ মাফিক সামাজিক গুরুত্ব মেনেই ব্যবসা করতে চাই । তাতে অন্তত এতগুলো গরিব মানুষের পেট কিছুটা হলেও চলবে । এছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হোক ।’’
কার্পেট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত জেসমিনা বেগম বলেন, ‘‘ আমরা বহু বছর ধরে এই কার্পেট বানিয়ে পরিবারের পেট চালাই । দৈনিক 300 থেকে সাড়ে 300 টাকা আয় হয় । তবে লকডাউনের কারণে বর্তমানে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । পরিবার নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি ।’’ আরও এক শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা চাইছি সরকার আমাদের সাহায্য করুক ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের সঙ্গেই আমরা যুক্ত রয়েছি । লকডাউনে রোজকার আয় সম্পূর্ণ বন্ধ । পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় আছি । আর্থিক সঙ্কট আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করছে । সরকার যদি বাজারগুলো খুলে দিত, তাহলে আমাদের ফের কাজ চালু হত ।’’