হাড়োয়া, 7 এপিল : ফের উত্তপ্ত হল হাড়োয়া ৷ 'জয় শ্রী রাম' না বলার 'অপরাধ'-এ এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে । অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি ৷ গুরুতর জখম ওই তৃণমূল কর্মী বর্তমানে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে হাড়োয়ার খাসবালান্ডা পঞ্চায়েতের মহিষ্টিকারি গ্রামে । ঘটনার পরই স্থানীয় বিদায়ী বিধায়ক ও তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে হাড়োয়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মী-সমর্থকরা । চলে স্লোগানও । তুমুল বিক্ষোভ ও স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে থানা চত্বর । পরে, পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তৃণমূলের তরফে অভিযোগ, 'জয় শ্রী রাম' না বলায় এক তৃণমূল কর্মীকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে বিজেপির দুষ্কৃতীরা ৷ মঙ্গলবার রাতে হাড়োয়ার বড়চক এলাকার মাছের ভেড়ি থেকে কাজ সেরে মহিষ্টিকারি গ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন ওই তৃণমূল কর্মী ৷ সেই সময় মত্ত অবস্থায় তাঁর পথ আটকায় বিজেপির 9-10 জন দুষ্কৃতী । পথ আটকে প্রথমে দুর্ব্যবহার করা হয় ওই তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে । পরে 'জয় শ্রী রাম' বলতে তাঁকে জোরাজুরি করে দুষ্কৃতীরা । কিন্তু 'জয় শ্রী রাম' বলতে অস্বীকার করলে তাঁকে বাঁশ, লোহার রড নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ৷ এমনকি রিভলভারের বাঁট দিয়েও মাথায় আঘাত করা হয় ৷ তাঁর চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন ৷ তবে তার আগেই সেখান থেকে চম্পট দেয় হামলাকারীরা । রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে । সেখানেই এখন চিকিৎসা চলছে তাঁর । তবে তিনি এখনও বিপদমুক্ত নন বলেই খবর হাসপাতাল সূত্রে।
ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা । খবর পেয়ে হাড়োয়া থানায় আসেন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম । তাঁর নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয় । চলে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্লোগানও । তুমুল বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে থানা চত্বর । পরে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ।
এই বিষয়ে হাড়োয়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সিরাজ গাজি বলেন, "বিজেপি হাড়োয়ায় অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করছে ৷ আমরা তা কিছুতেই মেনে নেব না । যেভাবে দলের ওই সক্রিয় কর্মীর ওপর হামলা এবং তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে তা পরিকল্পনা মাফিক ছাড়া হতে পারে না । আমরা চাই দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক ৷" পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা । ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীর বাবাও ।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বিজেপির হাড়োয়া ব্লকের সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "এদিন দলের এক কর্মসূচিতে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা ব্যস্ত ছিলেন । তাই যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার কোনও সারবত্তা নেই । বিজেপি এই ধরনের রাজনীতি কিংবা সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নই ৷"
এবিষয়ে হাড়োয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে । ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে ৷ আশা করা যায় শীঘ্রই অপরাধীরা ধরা পড়বে ৷
ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক পারদ যেন চড়তে শুরু করেছে হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় । বাড়ছে রাজনৈতিক হিংসা, প্রতিহিংসার ঘটনাও । আর এসব নিয়েই ভোটের আগে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী কাজিয়া । সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে বাম ও ডান সবপক্ষই সম্মুখ সমরে । কেউ কাউকে একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ । ওয়াকিবহালমহলের ধারণা, শাসক ও বিরোধী উভয়ের সঙ্গেই এবার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হওয়ার সম্ভবনা প্রবল হাড়োয়া কেন্দ্রে । তার জেরেই হিংসা ও হানাহানির ঘটনা সেখানে বাড়ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের ।