সন্দেশখালি , 2 নভেম্বর : কেদার বাহিনীর দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ সরবেড়িয়া-আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের খুলনা গ্রামের বাসিন্দারা । সেই দাদাগিরিতে বেড়ি পরাতে চেয়েছিল পুলিশ । তাই পুলিশকেই নিশানা করল কেদার বাহিনী । অভিযোগ, শুক্রবার রাতে তাদের ছোড়া গুলিতেই জখম হন এক সাব ইনস্পেক্টর-সহ মোট তিন পুলিশকর্মী । জখম হন এক গ্রামবাসীও । পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটো বাইক ।
কে এই কেদার?
সন্দেশখালির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কেদার সরদার সন্দেশখালির বিতর্কিত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের অনুগামী বলে পরিচিত । শাহজাহান সন্দেশখালি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত । তিনি আবার সন্দেশখালি-1 ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা সরবেড়িয়া-আগারহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান । তাঁর হয়ে খুলনা গ্রামে দাপিয়ে বেড়ায় কেদার বাহিনী । গত জুনে সন্দেশখালিতে গণহত্যার ঘটনায় শাহজাহানের নাম FIR-এ এক নম্বরে থাকলেও পুলিশ তাঁকে আজও ছুঁতে পারেনি । আর সেই ঘটনার পর কেদার বাহিনীর সাহস আরও বেড়ে যায় ।
আরও পড়ুন সন্দেশখালিতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম পুলিশকর্মীর মৃত্যু
শুক্রবার রাতে খুলনা হাইস্কুলের মাঠে কালীপুজোর অনুষ্ঠান চলছিল । সেই সময় কেদার বাহিনী সেখানে চড়াও হয় । মদ্যপ অবস্থায় মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে । অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা প্রথমে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি । কিন্তু অভব্যতা মাত্রা ছাড়াতে তাঁরা আর চুপ করে থাকেননি । তখন কেদার বাহিনী উদ্যোক্তাদের কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করে । বিনন্দ হাউলি ও সরিফুল মোল্লা নামে দুই যুবক গুরুতর জখম হন । উদ্যোক্তারা সন্দেশখালি থানায় দেন ।
খবর পেয়ে অরিন্দম হালদার সিভিক ভলান্টিয়ার ও গ্রামীণ পুলিশ নিয়ে দু'টি বাইকে খুলনা গ্রামে যাচ্ছিলেন । নদীপথ পেরিয়ে পুলিশের মোটর বাইক যখন বাঁধের উপর দিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেদার বাহিনীর মুখোমুখি পড়ে যায় । পুলিশ দেখে কেদার বলে ওঠে, "আমাকে ধরতে এসেছিস? জানিস আমি কে?" কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরপর গুলি । সাব ইনস্পেক্টর অরিন্দমের হাতে গুলি লাগে । আরও দুই পুলিশকর্মীও গুলিবিদ্ধ হন । গুলিবিদ্ধ হন এক গ্রামবাসীও । আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটো মোটর বাইকেই । এক সিভিক ভলান্টিয়ার সেখান থেকে পালিয়ে যান । তিনিই থানায় ফোন করে হামলার ঘটনাটি জানান । তারপর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে জখম সহকর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
তারপর কেদার ও তার অনুগামীদের খুঁজতে শুরু হয় পুলিশের অভিযান । সারারাত চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কেদার সরদার ও লালটু সরদার নামে দু'জনকে গ্রেপ্তার করে । কেদার সরদারের অন্যান্য অনুগামীদের খোঁজেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে । বসিরহাটের পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই ও DIG প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ রাজেশকুমার যাদব ঘটনার পর খুলনা গ্রামে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । গ্রামে আইনের শাসন ফেরানো হবে বলে বাসিন্দাদের তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন । DIG অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বিশেষ কিছু বলতে চাননি । তিনি শুধু বলেন, "আমরা ঘটনার তদন্ত করছি । দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"