হাড়োয়া, 3 জুলাই: মুর্শিদাবাদের পর উত্তর 24 পরগনা। রাজ্যে ফের ভোটের বলি! বোমা বিস্ফোরণে এবার প্রাণ হারালেন হাড়োয়ার এক তৃণমূল কর্মী। জখম হয়েছেন আরও একজন। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে পরিতোষ মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল কর্মীর। ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে হাড়োয়া থানার পুলিশ।
যদিও পুলিশের এই তত্ত্ব নারাজ নিহতের পরিবার। তাঁদের দাবি, "জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে ওই ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করার পর বোমা মেরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এর সঙ্গে পরিবারের এক আত্মীয়ের হাত থাকতে পারে বলে অনুমান মৃতের বাড়ির লোকজনের।
ভোটের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। তার আগে গত 24 দিনে রাজ্যে 14 জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে ৷ এই আবহে সুষ্ঠুভাবে ভোট হওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। জানা গিয়েছে,বছর 47-র পরিতোষের বাড়ি হাড়োয়ার শালিপুরের কুচেমারা গ্রামে। পেশায় তিনি একজন বাউল শিল্পী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রামায়ণের গান গেয়ে সংসার নির্বাহ করেন। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেও পরিচিত পরিতোষ। রবিবার শালিপুরে দলের একটি সভাতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গান করার কথাও ছিল তাঁর। রাতে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফেরেননি ওই তৃণমূল কর্মী।
এরপরই, সোমবার সকালে পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে পরিতোষের। সূত্রের খবর, বোমার আঘাতে ওই তৃণমূল কর্মীর হাত উড়ে যায়। স্প্রিন্টারের অংশ ঢুকে যায় শরীরের বিভিন্ন অংশে। ফলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তৃণমূল কর্মী পরিতোষ। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক ব্যাক্তি। তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতার একটি হাসপাতালে। সেখানেই আপাতত চিকিৎসাধীন তিনি ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, ভোররাতে বাড়ির কাছেই ভেড়ি সংলগ্ন একটি মাঠে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। সেখানে পরিতোষও হাজির ছিলেন। তখনই এই বিপত্তি ঘটে। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। যদিও পরিবারের এক সদস্য দাবি করেছেন, এই ধরণের ঘটনার সঙ্গে কখনই পরিতোষ যুক্ত ছিলেন না ৷ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে ওই ব্যাক্তিকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরিতোষের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরে তপ্ত হতে শুরু করেছে হাড়োয়া অঞ্চল। বিরোধীরা এই ঘটনায় যখন শাসকদলের দিকে আঙুল তুলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন তথন অন্যদিকে পুলিশি তদন্তে ভরসা রাখছে শাসক শিবির ৷ বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র সাহা অভিযোগ করে বলেন, "ভোটের আগে অশান্তি ছড়াতে এই ধরণের ঘটনা ইচ্ছে করে ঘটানো হচ্ছে ৷ কালীঘাট থেকে আসা নির্দেশ থেকেই অশান্তি পাকানো হচ্ছে রাজ্যে ৷"
আরও পড়ুন: নির্বাচনের দফা বাড়ানোর দাবিতে এবার হাইকোর্টের দ্বারে অধীর
উল্লেখ্য, বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে পরিতোষের সঙ্গে থাকা সাইকেল ও নগদ পাঁচ হাজার টাকার কোনও খোঁজ মিলছে না বলে দাবি পরিবারের। পুলিশ সে-দিকটাও খতিয়ে দেখছে। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলে ঠিক কতজন উপস্থিত ছিলেন, তাও জানার চেষ্টা চলছে ।