মধ্যমগ্রাম, 27 অক্টোবর: দীর্ঘ জেরার পর রেশন বণ্টন দুর্নীতি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । এই নিয়ে রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী ও জ্যোতিপ্রিয়র সতীর্থ রথীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমি মনে করি 24-র লোকসভা ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে ৷"
শুক্রবার মধ্যমগ্রামের মাইকেল নগরে নিজের বাড়িতে বসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি । শুধু তাই নয়, রেশন দুর্নীতি, রেশন বণ্টন প্রক্রিয়া, খাদ্য দফতরে বেআইনি নিয়োগ-সহ নানা বিষয়ে এ দিন সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়েছেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ ।
প্রথমেই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি নিয়ে তাঁরই সতীর্থ, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "তদন্ত চলছিল, এটা জানতাম । কিন্তু পরে আপনাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম, সকালের দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে । কেন গ্রেফতার করা হল ? তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে ? সেই অভিযোগের সারবত্তা কতটুকু ? তা জানার প্রয়োজন রয়েছে । ফলে কিছু না জেনে এ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই এই বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন । তাই দলের হায়ার ফোরাম যখন এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করে থাকেন, তখন আমাদের আর নতুন করে কিছু বলার থাকে না । তবে, আমি মনে করি 24-র লোকসভা ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে ৷"
আরও পড়ুন: গ্রেফতার হলেই আভিযোগ প্রমাণিত হয় না, জ্যোতিপ্রিয়র পাশে শোভনদেব
ইডির তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে, রেশন বণ্টনে দুর্নীতি ও খাদ্য দফতরে বেআইনি চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ রয়েছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ৷ এই বিষয়ে রথীন ঘোষ বলেন, "খাদ্য দফতরে সরাসরি চাকরি দেওয়া যায় না । সেখানে কাউকে নিয়োগ করতে হলে তাঁর নাম আগে পাঠাতে হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে । পিএসসি-র মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার পর, তারা যে তালিকা চূড়ান্ত করবে এবং যাঁদের নাম সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, কেবল তাঁরাই নিয়োগপত্র হাতে পাবেন খাদ্য দফতরে । এখানে আলাদাভাবে খাদ্য দফতরের কিছু করার নেই ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘খাদ্য দফতর বড়জোর কতজনকে নিয়োগ করা হবে, সেই সংখ্যাটা পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বলতে পারে । বাদ বাকি নিয়োগের সমস্ত প্রক্রিয়াটাই হাতে থাকে পিএসসি-র । বেআইনি নিয়োগের বিষয়টা ঠিক নয় । সরকারি দফতরে এভাবে কারও চাকরি হয় না ৷"
রেশন বণ্টন পদ্ধতি নিয়ে রথীন ঘোষ বলেন, "আমি খাদ্য দফতরের দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর রেশনিং ব্যবস্থায় বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু হয়েছে । অর্থাৎ ই-পস মেশিনের সাহায্যে গ্রাহক ক’টি রেশন কার্ডের মাধ্যমে কতটুকু রেশন পাচ্ছেন, তা জানতে পারছেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘খাদ্য দফতর ধান কেনার জন্য যে সমস্ত রাইস মিল-কে বরাত দিয়ে থাকে, তাদের কিন্তু ব্যাংক গ্যারান্টি রাখতে হয় । এরপর সবকিছু দেখে শুনেই বরাতকারী সংস্থার মাধ্যমে চাল ও আটা বণ্টন করা হয় ডিস্ট্রিবিউটারদের । গত দু-তিন বছর ধরে দেখছি রেশনের কোনও মালপত্র পড়ে থাকছে না রাইস মিলে । কারণ, সবটাই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি মেনে বণ্টন করা হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: পাখির চোখ 24-র ভোট, তাই টার্গেট তৃণমূল! জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতারে মন্তব্য তাপস রায়ের
এদিকে, রেশন বণ্টনেও যে এবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হতে চলেছে, তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ । রেশন বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে, সেই দুর্নীতির ঘুঘুর বাসা ভাঙতেই কি তাহলে বায়োমেট্রিক সিস্টেমের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে খাদ্য দফতরকে ?
এই বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী খোলসা করে কিছু না বললেও তাঁর দাবি, "রেশনিং ব্যবস্থার সবকিছুই এখন সম্পন্ন হয়ে থাকে অনলাইন প্রক্রিয়ায় । সেখানে রেশন কার্ডের সংখ্যা, রেশন পাওয়া এবং রেশন বণ্টন, গোটা প্রক্রিয়াটাই হয় অনলাইন পদ্ধতিতে । ফলে কোথাও কোনও কারচুপি করা প্রায় অসম্ভব । তারপরও অনেকে অনেক কথা বলছে । তাই, কোনও বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হয়ে কিছু বলব না ৷"
অন্যদিকে, ভুয়ো রেশন কার্ডের বিষয়ে মন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করার প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরেই চলছিল । বাড়ি বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখার পর আধার তথ্য যাচাই করে বেশকিছু রেশন কার্ড বাতিল করতে পেরেছি আমরা । কেন্দ্রীয় পলিসি মেনে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে সেখানে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি । এটুকু বলতে পারি ৷"
আরও পড়ুন: 'বিজেপি এবং শুভেন্দু অধিকারীর চক্রান্ত', গ্রেফতারি নিয়ে বিস্ফোরক জ্যোতিপ্রিয়