দেগঙ্গা, 25 জুন: পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট বিলিকে ঘিরে তৃণমূলের অস্বস্তি যেন কিছুতেই কাটছে না ! ভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে দলের নেতা,বিধায়কদের বিদ্রোহ । বিধায়ক হুমায়ুন কবির, আব্দুল করিম চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন মোল্লার পর এবার সেই তালিকায় জুড়ল দেগঙ্গার তৃণমূল ব্লক সভাপতি অরূপ বিশ্বাসের নামও ।
অরূপ উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গা 2 নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি । দলের অন্যান্য নেতা, বিধায়কদের মতো তিনিও পঞ্চায়েতের টিকিট বিলি নিয়ে শনিবার বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন । শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস বলেন, "টাকার বিনিময়ে পঞ্চায়েতের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে । ফলে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য লোকেরা ৷"
মূলত ব্লক সভাপতি অরূপ বিশ্বাসের এই মন্তব্যের নিশানায় ছিলেন হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম । যদিও তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন বিধায়কও । ফলে, ভোটের মুখে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে । যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা । জানা গিয়েছে, দেগঙ্গা ব্লকে মোট 13টি পঞ্চায়েত রয়েছে । এর মধ্যে 9টি পঞ্চায়েত নিয়ে দেগঙ্গা বিধানসভা গঠিত । বাকি 4টি পঞ্চায়েত অন্তর্ভুক্ত হাড়োয়া বিধানসভা এলাকার । আবার সাংগঠনিকভাবে 9টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠন করা হয়েছে তৃণমূলের দেগঙ্গা 1 নম্বর ব্লকের সভাপতির পদ । বাকি 4টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত দেগঙ্গা 2 নম্বর ব্লকের সভাপতির পদ । অর্থাৎ দুটি ব্লকে রয়েছে তৃণমূলের দু'জন সভাপতি । সূত্রের খবর, দেগঙ্গা 2 নম্বর ব্লকের সভাপতি পদে রয়েছেন তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস ।
অভিযোগ, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে অরূপ ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের কাউকেই টিকিট দেওয়া হয়নি । কেউ কেউ দলের বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেও পরবর্তীতে চাপের মুখে অধিকাংশকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হয় । এই পরিস্থিতিতে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিড়ম্বনা আরও বাড়ালেন দেগঙ্গা 2 নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অরূপ বিশ্বাস । তিনি বলেন, "দলের নির্দেশে পঞ্চায়েতের টিকিট নিয়ে তালিকা তৈরি করে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের কাছে পাঠিয়েছিলাম । কিন্তু সেই তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি । পরে প্রার্থী তালিকায় দেখতে পেলাম যোগ্যদের বঞ্চিত করে টিকিট দেওয়া হয়েছে দুর্নীতিগ্রস্তদের । দলের উচ্চ নেতৃত্বকে ভুল বোঝানো হয়েছে আমার বিরুদ্ধে । আমি দলের পুরনো লোক । একনিষ্ঠ সৈনিক । দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি করছি । অথচ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন কাউকেই টিকিট দেওয়া হল না ৷"
আরও পড়ুন: চোর তৃণমূলের সঙ্গ দিচ্ছে সিপিএম, কটাক্ষ শুভেন্দুর
এরপরই দলের টিকিট বন্টন নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করে তিনি বলেন,"লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে । সেই টাকা গিয়েছে বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের পকেটে । যোগ্য লোকেদের প্রার্থী না করাই হতাশ কর্মীরা । এতে কর্মীদের মনোবলও ভেঙে গিয়েছে ৷"
এদিকে,দলীয় নেতার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম বলেন,"দলের কোনও কর্মসূচিতেই অংশ নিতে দেখা যায় না অরূপ বিশ্বাসকে । আসলে উনি বিজেপির সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে চলেছেন । ওনার স্ত্রীকে দলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেন তিনি ।"