দত্তপুকুর, 6 ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্রীয় সরকারের 'বঞ্চনা' এবং জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে রবিবার তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল ও জনসভা ছিল উত্তর 24 পরগনার কদম্বগাছি অঞ্চলে । দলীয় উদ্যোগে সেই কর্মসূচি হলেও অথচ তাতে ডাকই পেলেন না স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান গৌতম পাল । ডাক পাননি আরেক তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরশাদ-উদ-জামান । তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও ডাক পাননি সভায় । ফলে, এ দিনের কর্মসূচিতে হাজির হননি দুই তৃণমূল নেতার কেউই । যা ঘিরে চরমে উঠেছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব (TMC Factionalism over protest rally) । এই নিয়ে কার্যত সরগরম হয়ে উঠেছে শাসকদলের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর রাজনীতি ।
তবে, তৃণমূল নেতা আরশাদ-উদ-জামানের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা মফিজুর রহমানের উদ্যোগে হওয়া এই কর্মসূচিতে কিন্তু সামিল হয়েছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মতো দলের প্রথম সারির নেতারা । যদিও, দলে মতবিরোধ থাকলেও একে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলতে নারাজ শাসক শিবির । এই ইস্যুতে কুণাল ঘোষ আবার কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন গরহাজির নেতাদের উদ্দেশ্যে । যা দেখে টিপ্পনি কাটতে ছাড়ছে না বিরোধী শিবির ।
আরশাদ-উদ-জামান এবং মফিজুর রহমান, দু'জনেই কদম্বগাছি অঞ্চলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা । আরশাদ বারাসত 1 নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি । মফিজুর তৃণমূলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার কিষাণ সেলের সভাপতি । এই দুই তৃণমূল নেতার গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লেগে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই । রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশই মনে করে এলাকার দখল নিজেদের হাতে রাখতেই বারবার দুই গোষ্ঠী কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়ে । তার জেরে অতীতে এবলাকায় সংঘর্ষও হয়েছে। তাই নয়, ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে কর্মসূচি এবং পালটা কর্মসূচি নিতেও পিছুপা হয়নি শাসকদলের বিবদমান এই দুই গোষ্ঠী । তারই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে রবিবার প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল নেতা মফিজুর রহমান গোষ্ঠীর লোকজন ।
পূর্ব নির্ধারিত সেই মিছিল এ দিন বিকালে শুরু হয় কদম্বগাছি পঞ্চায়েত সংলগ্ন টাকি রোড থেকে । মিছিলের পুরভাগে ছিলেন মফিজুর নিজেই । কাকলি থেকে শুরু করে কুণাল ঘোষের মতো প্রথম সারির নেতারাও সামিল হয়েছিলেন তাতে । যদিও, দেখা মেলেনি মফিজুরের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত আরশাদ-উদ-জামানের । হাজির হননি আরশাদ ঘনিষ্ঠ কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান গৌতম পালও ।
সূত্রের খবর, দলীয় উদ্যোগে এ দিনের এই কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও তাতে অংশগ্রহণের জন্য ডাকাই হয়নি এই দুই গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল নেতাকে । যা ঘিরে আরশাদ এবং মফিজুরের গোষ্ঠী বিবাদ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে । মিছিলের পর কদম্বগাছি খেলার মাঠে একটি জনসভাও আয়োজিত হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে । সেখানেও গরহাজির ছিলেন আরশাদ,গৌতম'রা । এই নিয়ে সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি তৃণমূল সাংসদ কিংবা দলের রাজ্য মুখপাত্রকে ।
সভার পরে অবশ্য এই নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, "যতদূর আমি জেনেছি এখানে যে সমস্ত নেতৃত্বরা রয়েছেন তাঁদের সকলের কাছেই খবর রয়েছে এই অঞ্চলে দলীয় উদ্যোগে সভা হতে চলেছে । দলের ব্যানারে সভা হচ্ছে । তা জানার পরও কাউকে তো আর নেমতন্ন করে আনা যায় না ! হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না । কারও মনে হয়েছে আজ তাঁরা আসবেন না । আগামী দিনে সময় বের করে আসবেন । ফলে, বিষয়টিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব দেখা ঠিক নয় । তৃণমূল পরিবারের মতো । তাই, সংঘবদ্ধ হয়েই আগামী পঞ্চায়েত ভোটে জিতব আমরা ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে কর্মসূচির উদ্যোক্তা তৃণমূল নেতা মফিজুর রহমানের গলাতেও । তাঁর কথায়, "রাজ্য পার্টির নির্দেশেই এ দিনের এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল । তাতে কদম্বগাছি এলাকার প্রায় সকল তৃণমূল নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেছিলেন । এবার কে সেখানে এল, কে এল না তাতে আমাদের কী করার আছে । নেমতন্ন করে কী আনব? এটুকু বলতে পারি কদম্বগাছি অঞ্চলে তৃণমূলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই । সকলেই আমরা সংঘবদ্ধ রয়েছি ৷"
এ দিকে, তাঁকে এবং পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্যকে এই কর্মসূচিতে যে ডাকা হয়নি তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান গৌতম পাল । তিনি বলেন,"গত শুক্রবার এরকম একটি কর্মসূচির কথা প্রথম আমার কানে আসে । তখনও কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য অঞ্চল সভাপতি নিজামুল করিম একবারের জন্য জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি । হয়ত অনেকের মনে হয়েছে আমাদের ছাড়াই কদম্বগাছিতে শক্তিশালী হবে তৃণমূল । খারাপ লেগেছে দীর্ঘদিন ধরে দল করার পরও এই কর্মসূচিতে ডাকা হল না আমাদের ।
তিনি আরও বলেন, "লোকমুখে শুনলাম, স্থানীয় বিধায়ক রহিমা মণ্ডলকেও নাকি জানানো হয়নি । যারা তাঁর বিপক্ষে ভোট করার চেষ্টা করেছিল, আজকে তাঁদেরকেই দলে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে । দলের সমস্যা মেটাতে স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার কোনও উদ্যোগই নেননি । কদম্বগাছি অঞ্চলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বজায় থাক, তা আমরা কখনও চাই না । দলের স্বার্থেই কাজ করে এসেছি । আগামিদিনেও তা করে যাব নিঃস্বার্থভাবে ।"
আরও পড়ুন: কাঁকসায় তৃণমূল নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে বন্ধ সরকারি প্রকল্পের কাজ