দত্তপুকুর, 15 জুন : ভোট পরবর্তী হিংসায় দীর্ঘ দিন বাড়ি ছাড়া ছিলেন বিজেপির 80 জন কর্মী-সমর্থক । প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার পরও তাদের ঘরে ফেরাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিজেপির । অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হল স্থানীয় প্রশাসন । পুলিশ ও পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় মঙ্গলবার বাড়ি ফিরলেন ঘর ছাড়ারা । প্রায় দেড় মাস পর বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি বিজেপির ওই কর্মী সমর্থকেদের পরিবারের সদস্যরাও ।
বিজেপি কর্মী-সমর্থকের প্রত্যেকেরই বাড়ি দত্তপুকুরের কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের হেমন্তবসু নগরে । 2 মে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই এই সমস্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । বাড়িঘরে ভাঙচুর চালিয়ে বিজেপির প্রায় 80 জন কর্মী-সমর্থককে ঘরছাড়া করারও অভিযোগ ওঠে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে । উঠেছে লুটতরাজের অভিযোগও । ঘর ছাড়াদের মধ্যে শিশু, মহিলা এবং পুরুষ সকলেই রয়েছেন ।
ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের 38,45,55 এবং 56 নম্বর বুথে ভোটের ফল আশানুরূপ না হওয়ার কারণেই হামলা চালানো হয়েছে । পরবর্তীকালে ঘরে যাতে বসবাস না করতে পারি, সেজন্য বাড়ি-ঘর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে । ঘটনায় মদত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের ।
যদিও বরাবর সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব । এদিকে, ঘরছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফেরাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং পুলিশ প্রশাসনের বারবার দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব । কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ । এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় গেরুয়া শিবির । হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে শেষে টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের । খোঁজ শুরু হয় ঘর ছাড়াদের । এদিন সকালে ঘরছাড়া ওই কর্মী-সমর্থকের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কদম্বগাছি ফাঁড়িতে আসে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব । এরপর,পুলিশ ও পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় বাড়ি ফেরেন ঘর ছাড়ারা ।
এই বিষয়ে ঘরছাড়া স্বপন দাস বলেন,"ভোটের ফলাফলের দিন থেকেই আমরা ঘর ছাড়া ছিলাম । ঘর ছাড়া হয়ে কেউ রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন । আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়িতে । এদিন পুলিশ এবং পঞ্চায়েত প্রধান আশ্বস্ত করেছেন, হিংসার কোনও ঘটনা ঘটলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে । এতদিন পর পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছে ।"
দলীয় কর্মী সমর্থকদের ঘর ছাড়া হওয়ার পিছনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বিজেপি নেতা তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, "স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং পুলিশ প্রশাসন সব কিছু জানা সত্ত্বেও কোনও কিছু করেনি । যেই হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ওমনি টনক নড়েছে প্রশাসনের । কর্মী-সমর্থকদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর দলীয় উদ্যোগে মেরামত করার চেষ্টা হবে । আমরা চাই, এরা যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে ৷"
আরও পড়ুন : হাড়োয়ায় ডাকাতির ছক বানচাল পুলিশের, ধৃত 3
অন্যদিকে, ওই বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ঘরছাড়া হওয়ার পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই বলে দাবি করেছেন কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের প্রধান ও তৃণমূল নেতা গৌতম পাল । তিনি বলেন, "ঘটনার পিছনে কোনও পারিবারিক বিবাদ থাকতে পারে । কদম্বগাছি পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও রাজনৈতিক হিংসা নেই । এ নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে । আমি ওদের আশ্বস্ত করেছি, কেউ যদি বাধা দেয় ঘরে ঢুকতে,তাহলে যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে । তখন আমি নিজেই উদ্যোগ নেব ওদের ঘরে ফেরাতে ৷"