দত্তপুকুর, 28 মে: বাবা দর্জি । মা গৃহবধূ । আয় বলতে দর্জির সামান্য দোকানই । বাবার উপরই নির্ভরশীল 6 জনের পরিবার । আর্থিক অনটন তো রয়েছেই, কিন্তু তবু হাল ছাড়েননি । দারিদ্রতাকে জয় করে উচ্চমাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করেছেন দর্জির ছেলে সুদীপ পাল । সুদীপের মোট প্রাপ্ত নম্বর 487 । বাণিজ্য বিভাগে 97.4 শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্য তথা উত্তর 24 পরগনা জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই কৃতী ।
দত্তপুকুরের কাশিমপুর পঞ্চায়েতের বাবুরবাগান এলাকায় বাড়ি সুদীপের । তাঁর বাবা সুশান্ত কুমার পালের দর্জির দোকান রয়েছে দত্তপুকুরের 1 নম্বর রেলগেটের পাশে । বাবা, মা ছাড়াও সুদীপের বৃদ্ধ দাদু-দিদিমা এবং এক দাদাও রয়েছেন । আর্থিক অনটনের জেরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি সুদীপের দাদা সন্দীপ পাল । বর্তমানে তাঁকে বাবার দর্জির পেশায় হাত লাগাতে হয়েছে । ফলে, আনন্দের মধ্যেও সুদীপের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে গোটা পরিবার । আর্থিক সমস্যার কারণে দাদা সন্দীপের মতো তাঁকেও মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে হবে না তো ?অচিরেই থমকে যাবে না তো কৃতী পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ ? এরকমই নানা প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে পাল পরিবারের মনে । যদিও শত বাধা সত্বেও লক্ষ্যে অবিচল সুদীপ । শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের কষ্ট লাঘব করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য কৃতী এই পড়ুয়ার ।
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী সুদীপ । পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়েছেন কাশিমপুর হাইস্কুলে । একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে পড়ার জন্য তিনি ভরতি হন দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠে । সেখান থেকেই এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি । শান্ত ও মিশুকে স্বভাবের এই মেধাবী পড়ুয়া সবসময় স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে এসেছে বলে জানা গিয়েছে । ভালো কোনও কলেজে অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে ভরতি হয়ে ভবিষ্যতে চার্টাড অ্যাকাউন্ট হতে চান সুদীপ ।
এই বিষয়ে সুদীপ পাল বলেন,"বাবার সামান্য আয় । তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে । ফলে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা তো একটু রয়েছেই । এই অবস্থায় প্রশাসন যদি পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে খুব উপকার হয় । আগামী দিনে তাহলে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারব ।"
আর্থিক দুরবস্থার কথা জেনেও ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চান বাবা সুশান্ত কুমার পাল । তিনি বলেন,"সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই আমার । তবু কষ্ট হলেও ওর পড়াশোনা চালিয়ে যাব । নিজের দক্ষতায় ও যেটুকু এগিয়েছে তাতে গর্বিত আমরা । এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ওর মতো মেধাবী ছাত্রের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয় । এই আবেদনই রইল প্রশাসনের কাছে । পঞ্চায়েত থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ । সকলেই পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে । কিন্তু তাতেও দুশ্চিন্তা পুরোপুরি কাটছে না ।"
আরও পড়ুন: পৌরনিগমের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে বাড়ির অনুমোদিত নকশা, বেআইনি নির্মাণ রুখতে তৎপর কর্পোরেশন
এই প্রসঙ্গে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মহেশ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সজল কুমার গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি জানিয়েছেন, কৃতী ছাত্র সুদীপের যাতে পড়াশোনায় কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা তিনি নজরে রাখবেন ।