গাইঘাটা, 17 মে : ব্যবসায় একের পর এক ক্ষতি আর তাতেই মানসিকভাবে ভেঙে পরেছিলেন এক যুবক। কিছুতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠত করতে পারছিলেন না ৷ একজন পুরুষ হয়ে নিজেকে না প্রতিষ্ঠত করতে পেরে বারবার ভেঙে পড়েছিলেন ৷ দু'বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। সেই ছেলে এখন সমাজে বার্তা দিচ্ছেন "আত্মহত্যা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। বরং বেঁচে থেকে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর নামই জীবন" (Story of Humanity in ghaighata) ৷
সেই বার্তা নিয়ে বাই-সাইকেলে 24টি রাজ্য ঘুড়ে-বেড়িয়েছেন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটার গুটরির বছর 32 এর যুবক সঞ্জয় বিশ্বাস। 8 মাস 14 দিন পরে 14 মে, শনিবার বিকালে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরেন মা সুচিত্রা দেবী।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সঞ্জয়রা দুই ভাই এক বোন। বাবা সুমন্ত বিশ্বাস ভ্যান চালাতেন, মা গৃহবধূ। সুমন্তবাবু ভ্যান চালিয়ে দুই ভাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলে বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সঞ্জয়ও চাকরির চেষ্টা করেছিলেন না পেয়ে উত্তরপ্রদেশে একটি রেস্টুরেন্টের দোকান খোলেন। সেখানে পরে একে একে আরও তিনটি রেস্টুরেন্টের দোকান করেন। ভালই চলছিল ব্যবসা। হঠাৎ ছন্দপতন হয় বাড়ি ফিরতে গিয়ে।
আরও পড়ুন : গ্রীষ্মে পুরুলিয়ায় তীব্র জল সংকট
এক পথ দুর্ঘটনা কবলে পড়তে হয় তাঁকে। সুস্থ হয়ে ফিরে গিয়ে দেখেন, তাঁর দু'টি দোকান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। অপরটিও প্রায় শেষের মুখে। হাজার চেষ্টা করেও সেটা বাঁচাতে না পেরে বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। তখনও হার মানেননি তিনি ৷ নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লকডাউন পড়ে যাওয়ায় তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ভেঙে যায়। ফলে এবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
সঞ্জয় বলেন, "মানসিক সমস্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে আমাকে ডাক্তার দেখাতে হয়েছিল ৷ দু'বার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলাম। সম্পূর্ণভাবে নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছিলাম। পরবর্তীতে এক আত্মীয়ের কথায় সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরনোর সিদ্ধান্ত নিই, আত্মীয় বলেছিলেন, সাইকেল চালালে অনেকটা শান্তি পাওয়া যায়। সেই মতো 2021 সালের 30 অক্টোবর নিজে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।"
সঞ্জয় আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ঠিক ছিল না তিনি কোথায় যাবেন। কিন্তু যতই সাইকেল চালিয়েছেন তিনি ততই নিজেকে স্বাভাবিক অনুভব করেছেন, মনটা অনেকটা হালকা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ফলে একের পর এক রাজ্য পেরিয়ে 24টি রাজ্য ঘুরে 8 মাস 14 দিন পরে গাইঘাটার গুটড়ির বাড়িতে ফিরেছেন। বাকি পাঁচ রাজ্যে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ না থাকায় প্রবেশ করতে পারেননি। সঞ্জয় বলেন, "এখন আমি বুঝতে পারি মৃত্যু কোনও সমস্যার সমাধান নয়। বরং বেঁচে থেকে লড়াই করতে হবে ও ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আর সেই বার্তাই আমি সকলের কাছে পৌছে দিতে চাই।" সঞ্জয়ের ইচ্ছা আগামী দিনে বাংলাদেশ ভ্রমণ করার এবং মৃত্যু যে সব সমস্যার সমাধান নয় সেই বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার।
আরও পড়ুন : Moushuni Island : জোয়ারের জলে প্লাবিত মৌসুনি, ভরা মরসুমে মাথায় হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন পরে ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় খুশি সঞ্জয়ের পরিবার। চোখের জলে ছেলেকে বরণ করে মিষ্টি-মুখ করিয়ে ঘরে তোলেন মা সুচিত্রা দেবী। তিনি বলেন, "ছেলে ব্যবসার ক্ষতির কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। যা দেখে খুব খারাপ লাগত। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে সাইকেলে করে ঘুরে বেরিয়েছে, ওকে নিয়ে খুব চিন্তা হত। এখন বাড়ি ফিরে আসায় খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন ছেলেকে অনেকটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।"