দত্তপুকুর, 14 মার্চ : সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে নোয়াই খালের উপর সাইবনা সেতু। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেতুটি। যে কোনও সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।অথচ এই পরিস্থিতিতে প্রাণ হাতে নিয়েই চলছে ঝুঁকির পারাপার। এনিয়ে প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই। নেই কোনও বিপজ্জনক বোর্ডও। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, সেতুর মাঝ বরাবর অংশ একদিকে বসে গেছে। দু'পাশের গার্ড ওয়ালেও ধরা পড়েছে বড়বড় ফাটল। লোহার রডও বেরিয়ে এসেছে বাইরে। সেতুর প্রতি পদে পদে লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যু। এত কিছুর পরও প্রশাসনের ঘুম ভাঙেনি বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে সাইবনা সেতু সংস্কারে ইতিমধ্যেই হাত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেচ দপ্তর।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় 60 বছর আগে দত্তপুকুরের নীলগঞ্জের সাইবনা এলাকায় নোয়াই খালের উপর তৈরি হয় এই সেতু। এর পূর্বদিকে রয়েছে ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকা। পশ্চিম দিকে শিউলি পঞ্চায়েত এলাকা। প্রায় 15টি গ্রামের বাসিন্দাদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এই সেতু। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। সেতু পার করে একদিকে যেমন বারাসত, দত্তপুকুর ও মধ্যমগ্রামে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়, অপরদিকে টিটাগড়, ব্যারাকপুর, সোদপুর ও খড়দায় পৌঁছানো যায়। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু প্রায় দু'বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রশাসনকে বলা হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ।
সেতুর গার্ডওয়ালের পলেস্তারা খসে লোহার রড বাইরে বেরিয়ে এসেছে। প্রাণ হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষকে পারাপার করতে হয়। সেতুর অবস্থা বেহাল হলেও কোনও বিপজ্জনক বোর্ড ঝোলানো নেই সেখানে। সেতুর ধারেকাছে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় শেখ জিয়ার আলি বলেন, "সেতুর অবস্থা খুব খারাপ। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই, তবে তা চলছে ধীরগতিতে। সবসময় আতঙ্ক নিয়ে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। সেতুর দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। নাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে ৷''
এদিকে এই সেতুর বেহাল দশা নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে গেরুয়া শিবির। এবিষয়ে BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ব্রিজ ভাঙার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ শিরোপা পেয়েছে। নতুন কিংবা পুরানো সব ব্রিজই তৈরি হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। কাটমানি খেয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। কাটমানি নেওয়া বন্ধ না হলে ব্রিজের স্বাস্থ্য ও গুণগতমানের উন্নতি হবে না।" তাঁর অভিযোগ, কোনও ব্রিজই ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিকদের একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাইবনা ব্রিজের সংস্কারের ক্ষেত্রেও প্রশাসন উদাসীন। যে কোনও সময় ওই ব্রিজ ভেঙে পড়তে পারে। প্রাণহানিও হওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে, BJP-র এই অভিযোগের পালটা জবাব দিয়েছে শাসকদলও। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী বলেন, " দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো এধরনের কথা কেউ বলতে পারে না। CPI(M) ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কোনওদিন চিন্তা করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরই রাজ্যের বিভিন্ন ব্রিজের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সংস্কারও করা হয়েছে একাধিক ব্রিজের। সাইবনা ব্রিজের সংস্কারের প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সেচ দপ্তরের নোয়াই ক্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা শিগগিরই ব্রিজ সংস্কারের কাজে হাত দেবে ৷"
সাইবনা ব্রিজের দায়িত্বে রয়েছে সেচ দপ্তর। এবিষয়ে রাজ্য সেচ দপ্তরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সাইবনা ব্রিজের বেহাল অংশের সংস্কারে ইতিমধ্যে হাত দেওয়া হয়েছে। নোয়াই খালের দু-পাশের জল আটকানোর কাজ শুরু হয়েছে। তারপরই ব্রিজটি ভেঙে নতুনভাবে সংস্কার করা হবে। তারজন্য 70 লাখ বরাদ্দ হয়েছে। ব্রিজের সামনে বিপজ্জনক বোর্ড লাগিয়ে আগেই ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য ব্রিজের পাশেই অস্থায়ীভাবে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধে না হয়।"