অশোকনগর, 7 অগাস্ট : হাবড়ার পর ডেঙ্গির আতঙ্ক এবার অশোকনগরে । ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের । মৃতের নাম জয়ন্ত পাল (26) । এলাকায় ডেঙ্গির আতঙ্কে নাজেহাল এলাকাবাসী । ঘটনায় পৌরসভাকে কাঠগড়ায় তুলেছে স্থানীয়রা । তাদের অভিযোগ, ভয়াবহ ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য যে ধরনের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি পৌরসভার পক্ষ থেকে । নিকাশি নালা থেকে জমা জল, জঙ্গল পরিষ্কার না করায় ডেঙ্গির জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায় । ডেঙ্গি সচেতনতা ও তা প্রতিরোধ অনেক দেরি করে শুরু করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে পৌরসভা । অন্যদিকে, পৌরসভার ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা ।
অশোকনগর পৌরসভার 23টি ওয়ার্ডের কম-বেশি সব এলাকাতেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ । জ্বরের সঙ্গে কারও আবার ডেঙ্গির সংক্রমণও রয়েছে । গত কয়েকদিনে অশোকনগর হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা 150 ছুঁয়েছে । কয়েকদিন আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল একজনের । গতকাল গভীর রাতে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল আরও এক যুবকের । তাঁর মৃত্যুর পর অশোকনগরে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই ।
অশোকনগর পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর বাইপাস এলাকায় কয়েক দিন আগেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন স্থানীয় 26 বছরের যুবক জয়ন্ত পাল । পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অশোকনগর স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে । তাঁর রক্তের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছিল । বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার জয়ন্ত অশোকনগর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন । চিকিৎসা চলাকালীন রবিবার জয়ন্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে । স্থানান্তরিত করা বারাসাতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে । সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । গতকাল গভীর রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় । মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বুধবার জয়ন্তর পরিবারের সাথে দেখা করেন পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার ।
2017 সালেও অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল । বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন । কয়েকজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল । এলাকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যানকে তলব পর্যন্ত করেছিলেন রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী । 2017 সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে 2018 সালের একেবারে শুরু থেকেই ডেঙ্গি সচেতনতা থেকে প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছিল পৌরসভা । ফলে 2018 সালে ডেঙ্গির প্রভাব দেখা যায়নি অশোকনগ পৌরসভায় । কিন্তু এই বছর ফের দেখা দিয়েছে ডেঙ্গি । সেকথা অবশ্য স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার । তিনি বলেন, "ভেবেছিলাম অশোকনগরকে ডেঙ্গি মুক্ত শহর করতে পারলাম ।" তিনি আরও বলেন এবার জুনের শুরুতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গির সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে । রাজ্য সরকারও সার্ভের লোকজন দিতে দেরি করেছে ।
পৌরসভার মূলত ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি ছড়িয়েছে কল্যাণগড় এলাকায় । কল্যাণগড়ের দিকে 1,2,3,13 ও 23 নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি প্রভাব বেশি । অশোকনগর পৌরসভার 23টি ওয়ার্ডের কম বেশি সব এলাকাতেই ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে । পৌরসভার পরিসংখ্যান বলছে গত জুনে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই জন । সেই সংখ্যাটাই জুলাইয়ে বেড়ে হয়েছে 58 জন । অগাস্টে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে । পৌরসভার পরিসংখ্যান থেকে বাস্তবের ছবিটা আরও ভয়াবহ । অশোকনগর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন অনেকে । হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মণ্ডল অবশ্য চিকিৎসাধীন ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা জানাতে নারাজ । তিনি বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা অনেক ।
অশোকনগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রথম থেকে কোনও ব্যবস্থাই করেনি । জমা জল, নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হয়নি । এলাকায় ঘুরে মশা মারার তেল ও ব্লিচিং ছড়ানো কিছুই হয়নি । ওয়ার্ডে জঙ্গল পরিষ্কার করার উদ্যোগও নজরে আসেনি । যদিও পৌরপ্রধান প্রবোধ সরকার জানান, কিছুটা দেড়ি হলেও প্রতিটি ওয়ার্ডেই স্বাস্থ্য দপ্তরের ছয় সাত জনের একটা দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাজ করছেন । সাধারণ মানুষকে সজাগ হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে । ডেঙ্গি মোকাবিলায় দেরিতে কাজ শুরু করার জন্য পৌরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে সাধারণ মানুষের । ডেঙ্গির সার্ভে করতে যাওয়া পৌরকর্মীদেরও বিভন্ন জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে ।
পৌরসভার বিরোধী দলনেতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গি দমনে সদর্থক কোনও ব্যবস্থাই শুরুর দিকে নেয়নি পৌরসভা । বোর্ড মিটিংয়ে এই নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছিল । কিন্তু চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেননি । চিত্তরঞ্জন বলেন, "23 টি ওয়ার্ডের জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি টোটো গাড়ি কিনেছিল পৌরসভা । এলাকার জঙ্গল পরিষ্কারের পর সেগুলো ওই গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া কথা । কিন্তু গাড়িগুলো পৌরসভার গ্যারেজেই পড়ে রয়েছে ।"