দত্তপুকুর, 21 জুলাই : আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামের বাসিন্দারা ৷ সেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল আরও এক তৃণমূল নেতাকে ৷ মারধরও করা হয় ৷ পুলিশের সামনেই গাড়ি থেকে নামিয়ে রীতিমতো হেনস্থা করা হয় তাঁদের ৷ ভাঙচুর করা হয় গাড়িও ৷ দত্তপুকুরের ছোটো জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বড়পোল এলাকার ঘটনা ৷ পরে জনতার হাত থেকে কোনওরকমে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ও ওই তৃণমূল নেতাকে উদ্ধার করে পুলিশ ৷
আমফানে উত্তর ২৪ পরগনার ছোটো জাগুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ৷ ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে 20 হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার ৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ সামনে এসেছে ৷ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে ভুয়ো নামের তালিকা তৈরি করে পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা তাঁদের আত্মীয়দের সরকারি টাকা পাইয়ে দিয়েছেন ৷ এর মাঝেই এবার ছোটো জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তপতী মজুমদার ও তাঁর স্বামী শ্রীবাস মজুমদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ৷ অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যা তাঁর স্বামীর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন ৷ এনিয়ে বারবার বলা হলেও তাঁরা কোনও ভ্রূক্ষেপ করেনি ৷ উলটে ক্ষতিগ্রস্তদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ ৷
এরপর গতকাল সকালে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীকে স্কুটি নিয়ে যেতে দেখে স্থানীয়রা তাঁর গাড়ি আটকান ৷ শুরু হয় বিক্ষোভ ৷ সেই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতা স্বপন কর্মকার ৷ তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছিল ৷ ঘটনাস্থানে পুলিশ থাকলেও তাঁদের সামনেই ঘেরাও করে রাখা হয় ওই দুইজনকে ৷ এমনকী গাড়ি থেকে স্বপনবাবুকে জোর করে নামিয়ে চলে হেনস্থা ও মারধর ৷
এই বিষয়ে সুজাতা বাগচি নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, "আমফানে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁরা কেউ ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি ৷ তার বদলে নিজের পরিবারের লোক ও স্থানীয় তৃনমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর স্বামী ৷ যদিও তাঁদের কারওরই কোনও ক্ষতি হয়নি ৷" পঞ্চায়েত সদস্যার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, " উনি একজন অশিক্ষিত ! নামেই পঞ্চায়েত সদস্যা ৷ তাঁর সমস্ত কাজ স্বামীই দেখাশোনা করেন ৷ পঞ্চায়েত ভোটের সময় ভোট লুট করে নিজের স্ত্রীকে জিতিয়েছেন ৷ এখনও বেনিয়ম করে চলেছে ৷"
এদিকে, বাড়ির কোনও ক্ষতি না হওয়া সতত্বেও সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল নেতা স্বপন কর্মকার ৷ তাঁর কথায়," আমার বাড়িতে পঞ্চায়েত সদস্য তপতী মজুমদার গিয়ে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এসেছিল ৷ তখন বাড়িতে আমি ছিলাম না ৷ আমার স্ত্রী ছিলেন । আমার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে 20 হাজার টাকা কেন আসল তা আমি নিজেই জানি না ৷" অন্যদিকে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ও তৃণমূল নেতা শ্রীবাস মজুমদার ৷ তিনি জানিয়েছেন, "ক্ষতিপূরণের টাকা ইতিমধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও চক্রান্ত চলছে ৷ "