হাবড়া, 10 মে : খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠার কারণেই কি মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সরিয়ে দিলেন তার পুরণো দপ্তর থেকে ? নাকি খাদ্য দফতরের স্বচ্ছতা আনতে নতুন মুখ রথীন ঘোষের উপরই বেশি ভরসা করলেন তিনি ? খাদ্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তনের পরই এখন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে । এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে জোর চর্চা ।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, "আমফানের সময় রেশন নিয়ে দুর্নীতির যে ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ উঠেছিল তা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছিল মমতার সরকারকে । সেই সময় সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছিল । তাছাড়া বিরোধীরা বারবার রেশন দুর্নীতি এবং খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল । নির্বাচনের সময়ও এই নিয়ে বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিশানা করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির । তাই জ্যোতিপ্রিয়র ওপর ফের ভরসা রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী । ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে খাদ্য দপ্তরের গুরুদায়িত্ব তার পরিবর্তে জেলারই বিধায়ক রথীন ঘোষের কাধেঁ দিলেন তিনি "। যা অনেকেই বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়র ওপর মুখ্যমন্ত্রীর অনাস্থা প্রকাশ বলেই মনে করছেন।
বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত উত্তর 24 পরগণা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত আস্থাভাজনও তিনি । সেই সুবাদে জেলা সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য দফতরের গুরুদায়িত্বও জ্যোতিপ্রিয়র কাঁধে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । বিগত 10 বছর ধরে এই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি । বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেও এতদিন খাদ্য দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন জেলা তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতা ।
রুষ্ট হলেও মুখ্যমন্ত্রী এই পদ থেকে কখনোই সরাননি তার বিশ্বস্ত জ্যোতিপ্রিয়কে । কিন্তু, তৃতীয়বার বিধায়ক হিসেবে জিতে আসা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ওপর আর ভরসা করতে পারলেন না মমতা বন্দোপাধ্যায় । সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের যে দফতর বন্টন করেছেন তাতে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম নেই । দফতর বদল করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বনদফতরের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ।
আর জ্যোতিপ্রিয়র খাদ্য দফতরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে প্রথমবার মন্ত্রীত্ব হওয়া মধ্যমগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক রথীন ঘোষের হাতে । যা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে জেলা রাজনীতিতে । অনেকেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাদ্য দফতরের পদ কেড়ে নেওয়ার পিছনে সেই দপ্তরের রেশন দুর্নীতির অভিযোগকেই বড় করে দেখছেন । তবে, জেলা তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, "খাদ্য দপ্তর নিয়ে যাতে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা না যায় সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত । এর মধ্যে অন্য কোনও অভিসন্ধি নেই"।
এই বিষয়ে বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । তবে, তার দফতরের দায়িত্বে আসা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী খাদ্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় তার কাছে কৃতজ্ঞ আমি । যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমি সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করব "। এর থেকে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি ।
সবমিলিয়ে,খাদ্য দফতর থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া।তার জায়গায় খাদ্য দপ্তরের দায়িত্ব মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে চর্চা চলছেই জেলা রাজনীতিতে।