বনগাঁ, 11 জানুয়ারি: খিদের জ্বালা কী, তা ভাল করে জানেন বনগাঁর গৃহবধূ প্রিয়া নাথ । তাই তো ছোটবেলা থেকেই ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মন কাঁদে তাঁর । সেই কারণেই নিজের ছোট্ট দোকানের সামনে অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য তৈরি করেছেন 'খুশির ঝুড়ি' (Bongaon khushir jhuri)। ঝুড়িতে রয়েছে হরেক রকমের ফল, কেক ও বিস্কুট । পথচলতি ক্ষুধার্ত মানুষ (people gets free food from khusir jhuri) সেখান থেকে নিজের ইচ্ছে মতো খাবার নিয়ে তাঁর খিদে মেটান । আবার নিজের হাতে অনেকের হাতে খাবারও তুলে দেন প্রিয়া ও তাঁর স্বামী সুব্রত নাথ ।
জানা গিয়েছে, বনগাঁ (north 24 parganas news) শহরের আমলা পাড়ার পশ্চিম পাড়ায় মেয়েকে নিয়ে একটি ভাড়া ঘরে থাকেন প্রিয়া ও সুব্রত । বনগাঁ কোর্ট রোডের চম্পক সরণির মোড়ে মনোহর ফাস্ট ফুড নামে একটি স্টেশনারি দোকান রয়েছে তাঁদের । স্বামী অসুস্থ থাকায় দোকান চালাতেন প্রিয়াই । তিনি জানিয়েছেন, "দোকানে বসে দেখতাম পথচলতি বহু অসহায় মানুষ খিদের জ্বালায় কষ্ট পায় । অনেকে এসে দোকানে খাবারও চাইত । নিজের সাধ্যমতো তাঁদের খাবার দিতাম ।" প্রিয়ার কথায়, "একান্নবর্তী পরিবারের ছোট থেকে বড় হয়েছি । সেই সময় আমাদের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না । ফলে খিদের জ্বালা আমি বুঝি । তাই ইচ্ছে জাগে অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষগুলির জন্য কিছু করার । আর সেই চিন্তাধারা থেকেই বছর দুই আগে এই খুশির ঝুড়ির ভাবনা ।"
দোকানের সামনে একটি ঝুড়িতে কিছু খাবার রেখে দেন প্রিয়া । একটি কাগজে লিখে রাখেন,"অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষ এই ঝুড়ি থেকে খাবার নিতে পারেন ।" স্ত্রীর এই উদ্যোগে খুশি সুব্রতও । প্রিয়া এখন খুব একটা দোকানে বসেন না । বর্তমানের দোকান সামলান তাঁর স্বামী । তাই খুশির ঝুড়ির দায়িত্ব তাঁর উপরে । সুব্রত বললেন, "স্ত্রীর ভাবনা থেকে এই খুশির ঝুড়ি । এতে খুব আনন্দ পাই । কেউ চাইলে এই ঝুড়িতে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবার রেখেও যেতে পারেন ।"
বর্তমানে প্রিয়াদেবী বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থেকেন । বাড়িতে একটি নার্সারি তৈরি করেছেন তিনি । দিনের বেশির ভাগ সময় সেখানেই কাটে তাঁর । পাশাপশি দু'টি অনলাইন খাবার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন । তাদের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে খাবার ডেলিভারি করেন । প্রিয়া জানালেন, "নার্সারি ও খাবার ডেলিভারি করে যে টাকা আয় হয়, সেই টাকায় খুশির ঝুড়ির খরচ বহন ও নিজের হাতখরচ চলে যায় ।"
আরও পড়ুন: Weather Forecast Of Bengal : দৃশ্যমানতা থাকবে কম, সাগরস্নানে সঙ্গী হবে বৃষ্টি
তিনি চান আগামী দিনে বিভিন্ন জায়গায় 'খুশির ঝুড়ি' ছড়িয়ে দিতে । ভবিষ্যতে তাঁর ইচ্ছা খুশির ঝুড়ির পাশাপাশি খুশির হ্যাঙ্গার তৈরি করা । সেখান থেকে মানুষ নিজের খুশি মতো জামাকাপড় নিয়ে পরতে পারবেন । তিনি চান, তাঁর এই কাজে আরও মানুষ এগিয়ে আসুন । যাতে কোনও অসহায় মানুষের খিদে ও জামাকাপড়ের অভাব অনুভব করতে না হয় ।
গৃহবধূর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষেরা । মায়ের এমন কাজে খুশি মেয়ে সুপর্নাও । তিনি বলেন, "ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, মা যে ভাবে পেরেছে মানুষকে সাহায্য করেছে । এতে আমি গর্ববোধ করি এবং মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিই ।"