ETV Bharat / state

মুখভার ঢাকিপাড়ার, পুজোর বায়না আসেনি একটাও

author img

By

Published : Jul 29, 2020, 9:40 PM IST

পুজোর বায়না আসেনি একটাও, মহিলা ঢাকিপাড়ায় আজ অন্য সুর ৷ বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজানোর জন্য ডাক পড়ত মছলন্দপুরের মহিলা ঢাকিদের । আজ কোরোনা আবহে ঢাকের বোলে তাল কেটেছে ৷ পুজো আর কয়েক মাস বাকি ৷ তবুও কোরোনা আবহে এখনও কোনও বায়না আসেনি ৷ তাই, ঢাকিপাডার আজ মুখভার।

dhaki para
মুখভার ঢাকিপাড়ার

মছলন্দপুর, 27 জুলাই : উমার বন্দনায় অন্য উমাদের ঢাকের বোল নজর কেড়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদের । গত কয়েক বছর ধরে তাই দেশ-বিদেশের পুজোমণ্ডপে ডাক পড়ত মছলন্দপুরের মহিলা ঢাকিদের । কোরোনা আবহে ঢাকের বোলে তাল কেটেছে । অন্য উমারা জীবিকা হারিয়ে পেটের দায়ে আজ পথভোলা পথিক । সেলাইয়ের কাজ বা ফুলের মালা বেচে রুটিরুজি খুঁজছেন।

উত্তর 24 পরগনার মছলন্দপুর স্টেশনের পাশের ঢাকিপাড়ার সুনাম রাজ্যজুড়ে । কলকাতার বড় পুজো উদ্যোক্তারা রথযাত্রার পর থেকে ঢুঁ মারতেন শিয়ালদা থেকে 54 কিলোমিটার দূরের এই রেলপাড়ে। সব মিলিয়ে সাড়ে চারশো ঢাকির বাস। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকিপাড়ার কৌলিন্য বাড়িয়েছেন মহিলা ঢাকিরা। মানসী, বাসন্তী, রুমা, বিশাখা ও সান্ত্বনাদের ঢাকের বোল শোনা গিয়েছে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো শহরেও। সাগরপাড়ের সাহেবদের মুলুকেও তাঁরা ডাক পেয়েছেন। সারা বছর টুকটাক কাজ তো পানই। ঢাকিপাড়ার বাসিন্দারা মূলত পুজোর ওই ক'দিনের ভরসায় থাকেন। ফি বছর রথযাত্রার পর থেকে পুজোর বায়না শুরু হয়ে যায়। ঢাকিপাড়ায় থাকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কিন্তু চলতি বছর কোরোনা আবহে সেই ব্যস্ততা আর নেই। গত চার মাস ধরে ঢাকিপাড়ায় একটাও পুজোর বায়না আসেনি। রথযাত্রার পরে বিদেশের ডাক তো দূর অস্ত, কলকাতার কোনও পুজো উদ্যোক্তাও মহল্লায় পা রাখেননি। তাই, ঢাকিপাডার আজ মুখভার। পুরুষরা তো বটেই, জনপ্রিয় মহিলা ঢাকিরাও আজ পেটের দায়ে জীবিকা বদল করেছেন। কেউ পরিচারিকার কাজ নিয়েছেন। কেউ বা সেলাইয়ের কাজ করে রুটিরুজি খুঁজছেন। কেউ আবার ফুলের মালা গেঁথে বিক্রি করছেন।

মুখভার ঢাকিপাড়ার
মছলন্দপুরের অন্যতম সেরা ঢাকি হিসেবে পরিচিত শিবপদ দাস। তিনি আবার মহিলা ঢাকিদের অনেকেরই শিক্ষাগুরু।কেমন আছে ঢাকিপাড়া? জবাবে শিবপদবাবু বললেন, 'প্রতিবছর রথযাত্রার পরেই আমাদের মহল্লায় ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কোরোনা আবহে এবার আমরা দিশেহারা। কোনও বায়না এখনও পর্যন্ত আসেনি। অনেকেই জীবিকা বদল করে ফেলেছেন। মহিলা ঢাকিরা বাঁচার তাগিদে কেউ ফুলের মালা বিক্রি করছেন। কেউ আবার সেলাই মেশিনের কাজ করছেন। পরিচারিকার কাজেও অনেকে নেমে পড়েছেন। আমরা চাইছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। জীবন আবার ছন্দ ফিরুক। পুজোমণ্ডপে আবার বেজে উঠুক ঢাকের বোল।'বিশাখা দাস। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঢাক বাজিয়েছেন বিভিন্ন বড় পুজোমণ্ডপে। চলতি বছর বায়না নেই। তিনি ফুলের মালা বিক্রি করে দিনযাপন করছেন। বিকেল পড়লেই হাত নিশপিশ করে। নেশার টানে ঢাকে বোল তোলেন। বিশাখা বলেন, 'রথযাত্রা চলে গেল। একটাও বায়না আসেনি। কী করব? এখন ফুলের মালা বিক্রি করি। আর মাঝেমাঝে ঢাকের নেশায় কাঠি নিয়ে নিজেরাই নেমে পড়ি।' ঢাকের বায়না আসেনি। তাই, সেলাইয়ের কাজ ধরেছেন সান্ত্বনা দাস। তিনি বলেন, 'নেশা বুঝলেন নেশা। পেটে ভাত নেই। কিন্তু ঢাকে বোল তুলতে না পারলে ভালো লাগে না। তাই, বিকেল পড়লে ঢাক বাজাই।'পঞ্জিকা মেনে উমা বন্দনার তিথি এগিয়ে আসছে। কিন্তু মছলন্দপুরের অন্য উমাদের ঘরে যে আজ নিকষ আঁধার। কবে উঠবে নতুন সূর্য? জীবন ফিরবে আগের ছন্দে। অপেক্ষায় অনন্ত প্রহর গোনে ঢাকিপাড়া।

মছলন্দপুর, 27 জুলাই : উমার বন্দনায় অন্য উমাদের ঢাকের বোল নজর কেড়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদের । গত কয়েক বছর ধরে তাই দেশ-বিদেশের পুজোমণ্ডপে ডাক পড়ত মছলন্দপুরের মহিলা ঢাকিদের । কোরোনা আবহে ঢাকের বোলে তাল কেটেছে । অন্য উমারা জীবিকা হারিয়ে পেটের দায়ে আজ পথভোলা পথিক । সেলাইয়ের কাজ বা ফুলের মালা বেচে রুটিরুজি খুঁজছেন।

উত্তর 24 পরগনার মছলন্দপুর স্টেশনের পাশের ঢাকিপাড়ার সুনাম রাজ্যজুড়ে । কলকাতার বড় পুজো উদ্যোক্তারা রথযাত্রার পর থেকে ঢুঁ মারতেন শিয়ালদা থেকে 54 কিলোমিটার দূরের এই রেলপাড়ে। সব মিলিয়ে সাড়ে চারশো ঢাকির বাস। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকিপাড়ার কৌলিন্য বাড়িয়েছেন মহিলা ঢাকিরা। মানসী, বাসন্তী, রুমা, বিশাখা ও সান্ত্বনাদের ঢাকের বোল শোনা গিয়েছে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো শহরেও। সাগরপাড়ের সাহেবদের মুলুকেও তাঁরা ডাক পেয়েছেন। সারা বছর টুকটাক কাজ তো পানই। ঢাকিপাড়ার বাসিন্দারা মূলত পুজোর ওই ক'দিনের ভরসায় থাকেন। ফি বছর রথযাত্রার পর থেকে পুজোর বায়না শুরু হয়ে যায়। ঢাকিপাড়ায় থাকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কিন্তু চলতি বছর কোরোনা আবহে সেই ব্যস্ততা আর নেই। গত চার মাস ধরে ঢাকিপাড়ায় একটাও পুজোর বায়না আসেনি। রথযাত্রার পরে বিদেশের ডাক তো দূর অস্ত, কলকাতার কোনও পুজো উদ্যোক্তাও মহল্লায় পা রাখেননি। তাই, ঢাকিপাডার আজ মুখভার। পুরুষরা তো বটেই, জনপ্রিয় মহিলা ঢাকিরাও আজ পেটের দায়ে জীবিকা বদল করেছেন। কেউ পরিচারিকার কাজ নিয়েছেন। কেউ বা সেলাইয়ের কাজ করে রুটিরুজি খুঁজছেন। কেউ আবার ফুলের মালা গেঁথে বিক্রি করছেন।

মুখভার ঢাকিপাড়ার
মছলন্দপুরের অন্যতম সেরা ঢাকি হিসেবে পরিচিত শিবপদ দাস। তিনি আবার মহিলা ঢাকিদের অনেকেরই শিক্ষাগুরু।কেমন আছে ঢাকিপাড়া? জবাবে শিবপদবাবু বললেন, 'প্রতিবছর রথযাত্রার পরেই আমাদের মহল্লায় ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কোরোনা আবহে এবার আমরা দিশেহারা। কোনও বায়না এখনও পর্যন্ত আসেনি। অনেকেই জীবিকা বদল করে ফেলেছেন। মহিলা ঢাকিরা বাঁচার তাগিদে কেউ ফুলের মালা বিক্রি করছেন। কেউ আবার সেলাই মেশিনের কাজ করছেন। পরিচারিকার কাজেও অনেকে নেমে পড়েছেন। আমরা চাইছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। জীবন আবার ছন্দ ফিরুক। পুজোমণ্ডপে আবার বেজে উঠুক ঢাকের বোল।'বিশাখা দাস। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ঢাক বাজিয়েছেন বিভিন্ন বড় পুজোমণ্ডপে। চলতি বছর বায়না নেই। তিনি ফুলের মালা বিক্রি করে দিনযাপন করছেন। বিকেল পড়লেই হাত নিশপিশ করে। নেশার টানে ঢাকে বোল তোলেন। বিশাখা বলেন, 'রথযাত্রা চলে গেল। একটাও বায়না আসেনি। কী করব? এখন ফুলের মালা বিক্রি করি। আর মাঝেমাঝে ঢাকের নেশায় কাঠি নিয়ে নিজেরাই নেমে পড়ি।' ঢাকের বায়না আসেনি। তাই, সেলাইয়ের কাজ ধরেছেন সান্ত্বনা দাস। তিনি বলেন, 'নেশা বুঝলেন নেশা। পেটে ভাত নেই। কিন্তু ঢাকে বোল তুলতে না পারলে ভালো লাগে না। তাই, বিকেল পড়লে ঢাক বাজাই।'পঞ্জিকা মেনে উমা বন্দনার তিথি এগিয়ে আসছে। কিন্তু মছলন্দপুরের অন্য উমাদের ঘরে যে আজ নিকষ আঁধার। কবে উঠবে নতুন সূর্য? জীবন ফিরবে আগের ছন্দে। অপেক্ষায় অনন্ত প্রহর গোনে ঢাকিপাড়া।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.