বারাসত, 27 মার্চ: টানা পাঁচ বছর ধরে বকেয়া বেতনের দাবিতে লড়াই করছেন মাদ্রাসার 80 জন শিক্ষক। অভিযোগ, এরপরও কোনও হেলদোলই নেই জেলা শিক্ষা দফতরের। তাঁদের উদাসীনতার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষকদের বকেয়া পাওনা-গণ্ডা দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে। অথচ সরকার এই 80 জন শিক্ষকের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য় ইতিমধ্য়েই কয়েক লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে দিয়েছে বলেও খবর। কিন্তু, তারপরও নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা ৷ এর জন্য় জেলা শিক্ষা দফতরের টালবাহানাকেই দায়ী করছেন তারা।
অভিযোগ, দফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টরের অফিসে শিক্ষকদের বর্ধিত বকেয়া বেতনের ফাইল দীর্ঘদিন পড়ে থাকলেও তা খুলে দেখার প্রয়োজনই মনে করেননি তিনি। যার জেরে সোমবার ডেপুটি ডাইরেক্টরকে তাঁর দফতরেই বেশ কিছুক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন বঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষকরা। চলে অবস্থান-বিক্ষোভও। অন্য়দিকে এই গোটা ঘটনার জন্য দফতরের কর্মীর অভাবকেই দায়ী করে একরকম অজুহাত খাড়া করার চেষ্টা করেছেন ডেপুটি ডাইরেক্টর বিশ্বজিৎ দেবনাথ। (District school office not paying dues of madrasa teachers)
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এতদিন মাদ্রাসা শিক্ষকরা বিএড কোর্স ছাড়াই শিক্ষকতার একাধিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকতেন। কিন্তু, 2013 সালের দোরগোড়ায় শিক্ষা দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিএড কোর্স ছাড়া এবার থেকে আর শিক্ষকতার অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে না। যার জেরে বিপাকে পড়েন মাদ্রাসার অসংখ্য শিক্ষক। পরে অবশ্য সরকারি নির্দেশিকা মেনে অনেকেই বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে মাদ্রাসার ওই 80 জন শিক্ষকও আছেন। কিন্তু, তাতেও বর্ধিত বকেয়া বেতন তাঁদের আটকে যায় বলে অভিযোগ।
হকের টাকা আদায়ের দাবিতে 2013 সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ধরে লড়াই আন্দোলন করে চলেছেন মাদ্রাসার বঞ্চিত শিক্ষকরা। শিক্ষা দফতর থেকে জেলা প্রশাসন, সব জায়গাতেই আবেদন নিবেদনও করেছেন তারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 2018 ও 2019 সালে দু'বার সরকারি নির্দেশিকা জারি হয় এই বিষয়ে। কিন্তু, জেলা শিক্ষা দফতর সেই সময় বিষয়টি নিয়ে কোনও তথ্যই সরকারের কাছে পাঠায়নি বলে অভিযোগ। যার জেরে তখনকার মতো আর এগোয়নি বিষয়টি। এরপর 2021 সালে মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের তরফে বঞ্চিত শিক্ষকদের তালিকা দিয়ে পুণরায় সমস্ত কাগজপত্র জমা করা হয় জেলা শিক্ষা দফতরে। সেই সঙ্গে চলতে থাকে লাগাতার আন্দোলনও। যার জেরে 2022 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঞ্চিত শিক্ষকদের সমস্ত তথ্য এবং কাগজপত্র সরকারের কাছে পাঠাতে বাধ্য হয় জেলা স্কুল পরিদর্শক। ফলস্বরূপ 2023 সালে মাদ্রাসার বঞ্চিত শিক্ষকদের পাওনা মিটিয়ে দিতে আর্থিক টাকা বরাদ্দ করে অর্থ দফতর।
সূত্রের খবর, এর জন্য প্রায় 96 লক্ষ 68 হাজার 385 টাকা বরাদ্দ করা হয়। জেলা শিক্ষা দফতরের বরাদ্দকৃত টাকা চলে এলেও শিক্ষকদের বকেয়া কিন্তু এখনও মেটেনি ৷ অভিযোগ, এই নিয়ে টালবাহানা চলছেই ৷ কিন্তু, সরকারি টাকা আসার পরও কেন সেই বকেয়া টাকা বন্টন করে দেওয়া যাচ্ছে না মাদ্রাসার বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে? কেনই বা তা নিয়ে জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারীকরা বাড়তি কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গড়ল রাজ্য
এদিকে, দিনের পর দিন ঘুরেও বকেয়া বর্ধিত বেতন না পেয়ে সোমবার দুপুরে বারাসতে জেলা শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টর বিশ্বজিৎ দেবনাথকে ঘেরাও করেন মাদ্রাসার বঞ্চিত শিক্ষকদের একাংশ। দফতরের মধ্যেই এই নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। যদিও এই বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর না পেয়ে তাঁর ঘরেই অবস্থানে বসেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, "যতক্ষণ না নায্য পাওনা মেটানো হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।"