বসিরহাট, 22 জুন : তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের হাতে লাল গোলাপ, লাল রসগোল্লা ৷ ব্যাপারটা দেখে মনে হতেই পারে রাজ্যে প্রায় তলিয়ে যাওয়া বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধতে চলছে রাজ্যের শাসকদল ! কিংবা দলবদলের বাজারে ফের ঘর ভাঙল তৃণমূলের ! তবে এসব কিছুই না ৷ বাংলার রাজনীতি হিংসা, হানাহানির বাতাবরণে নতুন রাজনৈতিক সৌভ্রাতৃত্বের নজির গড়ল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ সিপিএমের দখল করা পার্টি অফিস ফিরিয়ে দিল তৃণমূল ৷
রাজনৈতিক হিংসা, হানাহানি, শাসক কিংবা বিরোধী দলের পার্টি অফিস দখল করা, বঙ্গ রাজনীতিতে এসবই দেখতে অভ্যস্ত আমজনতা । কিন্তু এসবের মধ্যেই এবার এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট । সিপিএমের দখল করা পার্টি অফিস ফিরিয়ে দিয়ে নজির তৈরি করল শাসকদল । তাও আবার একে অপরকে কাছে টেনে, মিষ্টিমুখ করিয়ে । যা ভোট পরবর্তী সময়ে নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
বসিরহাটের পিফা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সিপিএমের কৃষক সমিতির একটি কার্যালয় রয়েছে । 1985 সাল থেকে এই পার্টি অফিসের পথ চলা শুরু । পুরানো এই পার্টি অফিস থেকেই দলের যাবতীয় কাজকর্ম চলত । এমনকি, নির্বাচনের রণনীতি এবং সংগঠন পরিচালনাও হত সিপিএমের এই কৃষক সমিতির পার্টি অফিস থেকে । অভিযোগ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরই, সিপিএমের এই পার্টি অফিস জোর করে দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ দীর্ঘদিনের পার্টি অফিস বেদখল হয়ে যাওয়ায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েন সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব । যা নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও দরবার করেন তাঁরা ৷ তবে তখন কাজ হয়নি ৷ পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করা যায়নি ৷
সেই খবর কানে এসে পৌঁছায় বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের ব্লক সভাপতি শাহানুর মণ্ডলের কাছে । তাঁরাই তৃণমূলের দখলে থাকা সিপিএমের পার্টি অফিস ফেরাতে উদ্যোগী হন ৷ কথা হয় সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গেও । কৃষক সমিতির সেই পার্টি অফিসই মঙ্গলবার তুলে দেওয়া হল সিপিএম নেতৃত্বের হাতে । বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পার্টি অফিস খোলার ব্যবস্থা করেন । সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল নেতা শাহানুর মণ্ডল, বসিরহাট থানার আইসি সুরন্দর সিং । রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে চলে মিষ্টিমুখ ও গোলাপ বিতরণ ৷
পার্টি অফিস ফিরে পেয়ে খুশি সিপিএম নেতৃত্বও । এই বিষয়ে সিপিএমের জেলা নেতা রাজু আহমেদ বলেন,"ভোটে জয়, পরাজয় আসে । তৃণমূলের বিরুদ্ধে নীতিগত লড়াই থাকবে বামপন্থীদের । সরকারের গঠনমূলক কাজের সমর্থন যেমন করব, তেমনই কোথাও দুর্বলতা থাকলে বিরোধিতাও করব । গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক ।’’ তবে পার্টি অফিস ফিরে পেলেও শাসকদলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি ওই সিপিএম নেতা । বলেন, "বাম আমলে পার্টি অফিস দখল, হিংসা, হানাহানি সচরাচর দেখা যেত না । তৃণমূলের আমলে যেন এসব বেশি করে মাথাচাড়া দিচ্ছে । তবে আমরা জানতে পেরেছি, এই পার্টি অফিস দখলের ক্ষেত্রে শাসকদলের নেতৃত্বের কোনও হাত ছিল না । ভোটের ফলাফলে কিছু অতি-উৎসাহী তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এই ঘটনা ঘটিয়েছেন । সেটা বুঝতে পেরে আজ তৃণমূল বিধায়ক পার্টি অফিসের চাবি তুলে দিলেন আমাদের হাতে ।’’
আরও পড়ুন : Saradha Chitfund Scam : সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে কমিটি গঠনের ভাবনা হাইকোর্টের
সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে রুখতে ডান-বাম সকলের একসঙ্গে লড়াই করা উচিত বলেও মনে করেন সিপিএম নেতা রাজু আহমেদ । অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভোট পরবর্তীতে হিংসা হানাহানি বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন । তিনি বাংলায় শান্তি, সৌহার্দের পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত পথেই গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান জানাতে আজ আমরা পার্টি অফিস তুলে দিলাম সিপিএম নেতৃত্বের হাতে । যাতে তাঁরা দলীয় কাজকর্ম করতে পারেন ।’’