বারাসত, 20 জুলাই : তৃণমূলের পঞ্চাশ শতাংশ নেতা একমাসের মধ্যে জেলে ঢুকবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের বাঁচাতে পারবেন না । এনএইচআরসির রিপোর্ট প্রসঙ্গে শাসকদলকে এভাবেই হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু । মঙ্গলবার বারাসতে জেলা বিজেপির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে হাইকোর্টে জমা পড়া এনএইচআরসির রিপোর্ট তুলে ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান সায়ন্তন বসু । তাঁর মতে, "পশ্চিমবঙ্গে কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে ছত্রে ছত্রে তুলে ধরা হয়েছে । সবমিলিয়ে হয়তো ষাট পাতার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে । কিন্তু আমার ধারণা প্রায় 30 হাজার পাতার রিপোর্ট জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে ।"
এরপরই শাসকদলকে নিশানা করে সায়ন্তন বলেন, "রিপোর্টে তৃণমূলের যে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তালিকা রয়েছে তার মধ্যে 10-12 জনের নাম সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছে । দেখা যাবে, সেই রিপোর্টে তিন থেকে পাঁচ হাজার জনের নাম রয়েছে । কেউ রেহাই পাবে না । প্রত্যেককে জেলের ঘানি টানতে হবে ।"
এনএইচআরসির রিপোর্টে তৃণমূলের যে সমস্ত নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ককে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তাঁদের কেউ খুন, ধর্ষণ, আবার কেউ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত বলে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন সায়ন্তন বসু । সেই সঙ্গে এনএইচআরসির দাবি মেনে হাইকোর্ট রাজ্যের হিংসা নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবে বলেও মত সায়ন্তন বসুর । তাঁর কথায়, "সিপিএমের আমলে হার্মাদ বলা হত দস্যুদের । সেই সমস্ত হার্মাদরা এখন তৃণমূলে ভিড়েছে । আবার তৃণমূল নিজেরাই কিছু হার্মাদ তৈরি করেছে ।"
তৃণমূলের শহিদ দিবস পালনকে এদিন কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "শাসকদলের শহিদ দিবস পালনের অধিকার নেই । রাজ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার চলছে । যার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রতিদিনই খুন হতে হচ্ছে বিজেপির কোনও না কোনও নেতা-কর্মীকে । আজকেও রায়গঞ্জে ঝুলিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে । ঝুলিয়ে হত্যার ইতিহাস আবারও ফিরে এসেছে এই রাজ্যে । ইতিমধ্যে শাসকদলের হাতে দলের 176 জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন । তাই, বুধবার সেই সমস্ত শহিদদের স্মরণ করা হবে গোটা রাজ্যে । দলীয় কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি শহিদ পরিবারও হাজির থাকবে পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও,গণতন্ত্র বাঁচাও কর্মসূচিতে ।" এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কাছে দল পৌঁছাবে বলেও দাবি করেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ।
এদিকে, পৌরসভা ভোট না হলে রাজ্যে উপনির্বাচনও হবে না বলে শাসকদলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির এই রাজ্য নেতা । এই বিষয়ে সায়ন্তন বলেন, "করোনার অজুহাত দিয়ে বিজেপিকে মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না । আমাদের জন্য করোনার সংক্রমণ বাড়ুক, সেটা আমরা চাই না । কিন্তু করোনা আবহে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য উপনির্বাচন করা যাবে না । উপনির্বাচন না হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না । তাই, উপনির্বাচনের আগে মেয়াদ ফুরানো পৌরসভার ভোট করানো হোক। মুখ্যমন্ত্রী সেটা চাইছেন না বলেই উপনির্বাচন হবে না ।"
পেগাসাস ইস্যুতে এদিন তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করে সায়ন্তন বলেন, "রাজ্যের একাধিক বিজেপি নেতার ফোন ট্যাপ হয়েছে তৃণমূলের আমলে। আমার ফোনও ট্যাপ করা হয়েছিল। আমরা সেই সমস্ত তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেব শীঘ্রই ৷"
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস মিত্র, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, জেলার কনভেনার অনুপ দাস সহ বিজেপির অন্যান্য নেতারা ।