কলকাতা 10 নভেম্বর : আরজি কর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর মামলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা কলকাতা হাইকোর্টের। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে বলেন, সরকারি হাসপাতালের এই ধরনের অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এই অমানবিক আচরণের পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত রাজ্যের। যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
মৃত শিশুটি তাদের নয় দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে জুন মাসে মামলা করেছিলেন শিশুটির বাবা চন্দননগরের বাসিন্দা বাবান মণ্ডল। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে মৃত শিশুটির DNA টেস্ট করা হয়। কিন্তু DNA টেস্টের রিপোর্ট না মেলায় কলকাতা হাইকোর্ট 21 অক্টোবর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি(SIT) গঠনের নির্দেশ দেয়। আদালত নির্দেশে জানায়, ডঃ প্রণবকুমার DIG, CID ও প্রফেসর ডাক্তার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এনআরএস হাসপাতাল- এই দুইজনকে নিয়ে গঠিত হবে তদন্ত কমিটি। এই কমিটি তদন্ত করে দেখবে কী হল শিশুটির? হারিয়ে গেছে ,নাকি তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ; সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় আদালত। 10 নভেম্বর অর্থাৎ আজকের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
আজ দুই সদস্যের কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করে জানান, শিশুটি স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালে মারা গেছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির বাবাকে সঠিক সময়ে সেই খবর নিতান্ত গাফিলতি করে জানায়নি। এরপরই বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, "সরকারি হাসপাতাল এই ধরনের অমানবিক আচরণ করতে পারে! এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক সরকার, যাতে দ্বিতীয়বার কখনও এই ঘটনা সরকারি হাসপাতালে না ঘটে।"
12 জুন চন্দননগরের বাসিন্দা বাবান মণ্ডলের স্ত্রীর একটি সন্তান হয় চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। শিশুটির শরীরিকভাবে খুব অসুস্থ থাকায় তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। বাবান মণ্ডল শিশুটিকে 13 তারিখ কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করেন। বাবান মণ্ডলের দাবি, শিশুটির হাসপাতালে ভরতির পর থেকেই তিনিও হাসপাতালেই থাকতেন। তাঁর শিশু হাসপাতালের SMCU বিভাগে ভরতি ছিল। সেই জন্য নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ওই বিভাগে কখনও ঢুকতে দেয়নি। হাসপাতালের তরফে শুধু বলা হয়েছিল, কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডেকে নেওয়া হবে।
15 জুন ওঁর স্ত্রীকে চন্দননগর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। তারপর 23 অক্টোবর বাবান মণ্ডলের স্ত্রী আরজিকর হাসপাতালে আসেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কাউকেই হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। 25 জুন শিশুকে দেখার জন্য তাঁরা খুব জোরাজুরি করলে তাঁদেরকে জানানো হয় 15 জুন তাঁদের শিশু মারা গেছে। বাচ্চাকে মর্গে দেওয়া হয়েছে এবং মারা যাওয়ার পরপরই মাইকে ঘোষণা করে জানানো হয়েছিল শিশুটির মারা যাওয়ার কথা। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাবান মণ্ডল।