পুরুলিয়া, 27 অগস্ট: বৃষ্টি পড়লেই স্কুল ছুটি ৷ ভাবছেন এমন আবার হয় নাকি! নিশ্চই মনে প্রশ্ন জাগছে, এমন স্কুল কোথায় আছে ৷ এমন স্কুল রয়েছে পুরুলিয়ার 2 নম্বর ব্লকে ৷ গোলামারা শচ্চিদানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ এইখানে পড়ুয়াদের পঠানপাঠন চলে খোলা আকাশের নীচে, গাছের তলায় ৷ 159 জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও এই বিদ্যালয়ের নেই নিজস্ব কোনও ভবন ৷ তাই অগত্যা গাছের তলায় খুঁটি দিয়ে রাখা হয়েছে অস্থায়ী ব্ল্যাক বোর্ড ৷ আর তাতেই বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক শিখছে খুদে পড়ুয়ারা।
কেন এভাবে চলছে বিদ্যালয়টি ? প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মলয় কুমার ঘোষ বলেন, "বছর দু'য়েক আগে আমি এখানে এসেছি। তখন থেকেই এইভাবে দেখছি। একটি মাত্র রুম রয়েছে বিদ্যালয়ে ৷ সেটি স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনও ভবন না থাকার কারণে এই অবস্থা। প্রশাসনে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। জমির জটে থমকে আছে কক্ষ নির্মানের কাজ।"
চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া মাহাতো, পিয়ালী যোগী, অনিতা রাজোয়াড়রা জানিয়েছে, বৃষ্টি হলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায় ৷ তাই মিড ডে মিল খেয়ে বাড়ি চলে যায় পড়ুয়ারা। বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলও রান্না করা হয় খোলা আকাশের নীচে। বিদ্যালয়ে রান্না করতে আসা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য অঞ্জনা মাহাতো বলেন, "জল পড়লে দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না ৷ তখন রান্না করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এছাড়াও গাছ-গাছালি থাকায় খাবারে আবর্জনা পড়ার সম্ভবনা থাকে ৷ তাই সব সময় নজর দিতে হয়।"
বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা 6। শিক্ষক অমল দত্ত বলেন, "পাঠ দানে খুবই সমস্যা হয়। কারণ গাছের তলায় বসা হয় ৷ পাশাপাশি এত গুলো ক্লাস এক সঙ্গে হয় ৷ তাই বাচ্চাদের মন সংযোগ নষ্ট হয় ৷ বর্ষার সময়ে তো সমস্যা চরম আকার ধারণ করে। প্রশাসনকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে ।"
পুরুলিয়ার গ্রামীণ দু'নম্বর ব্লকের বিদ্যালয় পরিদর্শক লক্ষ্মীকান্ত সরেনকে এই বিষয়ে জানার জন্য ফোন করা হয়েছিল ইটিভির ভারতের তরফে ৷ কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি ৷ এলাকার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, "বিষয়টি জানি। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে বলেছি ৷ কিন্তু ওনাদের সদিচ্ছা না থাকলে যেটা হয়। যারা বাচ্চাদের জন্য দু'টি কক্ষ নির্মাণ করতে পারে না, তারা আবার উন্নয়নের কথা বলে।" পুরুলিয়া জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রলয়েন্দু ভৌমিক জানান, আমি সবে এই জেলায় এসেছি, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন: বিরল রোগে আক্রান্ত সপ্তর্ষি মণ্ডল, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলেকে বাঁচানোর আর্জি মায়ের
কবে মিটবে সমস্যা ? আদৌ কি কোনওদিন স্কুলের চার দেওয়াল, দেওয়ালে থাকা ব্ল্যাক বোর্ড, মাথার উপরে ছাদ পাবে বিষ্ণুপ্রিয়া, পিয়ালীরা? উত্তর অধরা।