পুরুলিয়া, 15 মার্চ : একটা সময় রাঢ় বাংলায় জৈন ধর্মের প্রভাব বেড়েছিল অনেকটাই । ইতিহাসের পাতা বলছে, শৈবধর্ম আর জৈনধর্ম একটা সময় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল এই রাঢ় বাংলার লাল মাটিতে । সে সময় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া কিংবা বীরভূমে তৈরি হয়েছিল প্রচুর জৈন মন্দির । পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানা এলাকাতেও হয়েছিল তেমনটাই । কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীর্ণ দশা মন্দিরগুলির ৷ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানে সবটাই । জানে ইতিহাসের কথা । কিন্তু তারপরেও উদ্যোগ নেয়নি । উপেক্ষিতই থেকে গেছে পুঞ্চার ঐতিহাসিক মন্দির । অভিযোগ এলাকাবাসীদের ৷ স্থানীয়দের দাবি, এই পর্যটনস্থানটি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটকরা এখানে আসতেন ।
জৈন তীর্থক্ষেত্র পাকবিড়রায় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তৈরি হওয়া জৈন দেউল মন্দির সংস্কারের অবহেলায় আজ ধ্বংসের পথে ৷ নজরদারির অভাবে চুরি গিয়েছে অনেক প্রাচীন মূর্তি ৷ নামকরা ব্রিটিশ লেখক 1872 সালে তাঁর "The Tour Through The Bengal Province" বইয়ে লিখেছেন যে পুরুলিয়া জেলার পুঞ্চা থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি জৈনদের আগমন ঘটেছিল ৷ সেই সময়ে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছিল শতাধিক জৈন মন্দির ৷ সেগুলির মধ্যে পাকবিড়রা গ্রামের জৈন মন্দির সবচেয়ে বড় এবং পুরানো ৷ পাকবিড়রাতে সেই সময় 21 টি বড় জৈন মন্দির তৈরি হয়েছিল ৷ সেগুলির মধ্যে বর্তমানে রয়েছে মাত্র 3টি ৷
ইতিহাসের পাতা থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, আদিসুরের রাজত্বকালে হিন্দু সংস্কৃতি এই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ৷ আর তখন থেকেই উপেক্ষিত হতে থাকে জৈন মন্দিরগুলি ৷ তবে কালো কষ্টিপাথরের তৈরি সবচেয়ে বড় জৈন মূর্তিটি এখনও কালভৈরব রূপে পূজিত হয় এখানে ৷
পুঞ্চা অবশ্য পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রে খুব একটা পরিচিত নাম নয় ৷ কিন্তু পুঞ্চার প্রাচীন, সমৃদ্ধ ইতিহাস কেন অজানা থেকে যাবে ৷ কেন হবে না কোনও প্রচার ৷ স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রচারের অভাবে এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকরা ৷
পুঞ্চার প্রাচীন ইতিহাসকে আগলে রেখেছেন মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নিখিলচন্দ্র মাহাত ৷ বলেন, "এতবড় ঐতিহাসিক জৈন তীর্থ ক্ষেত্র সরকারের কাছে চিরকালই উপেক্ষিত রয়ে গেছে ৷ যদি সরকারের পক্ষ থেকে এই স্থানকে সাজিয়ে তোলা হত তাহলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করত এই স্থানটি ৷ "
এলাকার এক বাসিন্দা বৃন্দাবন মাহাত বলেন, "1978 সালে তৎকালীন সরকারের আমলে এই পাকবিড়রা জৈন মন্দিরের জন্য 78 হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ সেই একবারই ওই মন্দিরের সংস্কারের কাজ হয়েছিল ৷ তারপর থেকে মন্দিরের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি ৷ অবহেলায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু ঐতিহাসিক মূর্তি ৷ 21 টি দেউল মন্দিরের জায়গায় টিকে রয়েছে মাত্র 3টি মন্দির ৷ সেগুলিও বর্তমানে ধ্বংসের মুখে ৷ মাটির তলায় চলে গিয়েছে বহু মূর্তি ৷ চারিদিকে নতুন ঘর বাড়ি তৈরি হয়েছে ৷ এই স্থানে খননকার্য চালানো হলে অনেক প্রাচীন মূর্তি উঠে আসবে ৷ বর্তমান সরকারের উচিত ঐতিহাসিক এই স্থানটির সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া ৷ নতুন করে সাজিয়ে তোলা ৷ "