পুরুলিয়া, 19 জুন : কোরোনা আবহে দীর্ঘ লকডাউনের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পুরুলিয়া জেলা । জেলার মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত 100 দিনের কাজ শুরু হয়েছে জেলায় জেলায় । পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে বারবার প্রশাসনিক মিটিং করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । এমনকী জেলার বিভিন্ন ব্লকে শুরু হওয়া 100 দিনের কাজ সাধারণ মানুষ এবং ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকরা পাচ্ছেন কি না খতিয়ে দেখছেন খোদ জেলাশাসক ও তাঁর বিশেষ দল । কিন্তু এতসবের পরেও আদৌ কি কাজ পাচ্ছেন জবকার্ডধারী ভিন রাজ্য ফেরত শ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ ?
পুরুলিয়া জেলার আড়ষা ব্লক এলাকায় বাস্তব বলছে অন্য কথা । দীর্ঘ লকডাউন কাটিয়ে বাড়িতে বসে থাকা আড়ষা ব্লকের ভিন রাজ্য ফেরত শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে 14 দিনের কোয়ারানটিন কাটিয়ে 100 দিনের কাজের জন্য আবেদন করেছেন । কিন্তু এখনও মেলেনি 100 দিনের কাজ । সাধারণ শ্রমজীবী মানুষরা 100 দিনের কাজ না পেয়ে বেরিয়েছেন কাজের সন্ধানে । কবে জুটবে তা জানা নেই কারও । এই পরিস্থিতিতে বাইরের রাজ্যে কাজে যেতেও অনিচ্ছুক ভিন রাজ্য ফেরত শ্রমিকরা । নিজের জেলাতেই কর্মসংস্থান চাইছেন তাঁরা । হাতে টাকাও নেই । তাই কাজের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছেন । কয়েকদিন ক্ষেতে-খামারে কাজ জুটলেও নিয়মিত কাজ নেই । কবে মিলবে 100 দিনের কাজ ? কবে হবে স্বাভাবিক জীবনযাপন? সেদিকেই এখন তাকিয়ে আড়ষা ব্লকের শ্রমজীবী মানুষরা ।
আড়ষা ব্লকের বাসিন্দা ভিন রাজ্য ফেরত শ্রমিক কালীপদ মাহাত, বিজয় মাহাতরা জানান, "নিজের এলাকায় কাজ না পেয়ে 7-8 মাস আগে মহারাষ্ট্রে কাজের জন্য গেছিলাম এলাকার প্রায় 50-60জন যুবক । তারপর হঠাৎ করে লকডাউন জারি হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায় । সেখানেই গৃহবন্দী ছিলাম প্রায় মাস দুয়েক । তারপর প্রায় এক মাস আগে নিজের গ্রামে ফিরে আসি সকলেই । এখানে 14 দিনের কোয়ারানটিন কাটিয়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছি । জবকার্ডও রয়েছে আমাদের । প্রায় 15-17 দিন আগে 100 দিনের কাজের জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন জানিয়েছি । কিন্তু এখনও কোনও কাজ মেলেনি । হাতে টাকাও নেই, কী করব ভেবে পাচ্ছি না । 100 দিনের কাজ পেলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম । কারণ এই পরিস্থিতিতে বাইরের রাজ্যে কাজে যেতে পারব না । তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, নিজেদের জায়গাতেই আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক ।"
খেদাডি গ্রামের বাসিন্দা শ্রাবণ মাহাত, তুমবা গ্রামের বাসিন্দা কৃপাসিন্ধু কর্মকাররা বলেন, "কোরোনা আবহে কাজ মিলছে না কোথাও । পরিবারে অভাব দেখা দিয়েছে । তাই দিন চালাতে আমাদের 100 দিনের কাজ খুব জরুরি । জবকার্ডও রয়েছে আমাদের । পঞ্চায়েতে আবেদনও জানিয়েছি । কিন্তু এখনও কাজ পায়নি । বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হচ্ছে ।" গন্ধবাজার গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণী রাজোয়াড় বলেন, "কোরোনা আবহে আখ চাষেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে আমদের । উৎপাদিত আখ বাইরে পাঠাতে পারিনি । লকডাউন খুলতেই কাজের সন্ধানে ঘুরছি । 100 দিনের কাজের জন্য আবেদন জানিয়েছি আজ 18 দিন হল । কিন্তু কাজ পাইনি । এখন ভরসা শুধু রেশনের চালের উপর । বাধ্য হয়ে চাষবাসের কাজ করতে হচ্ছে । প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ দেওয়া হোক।"
এই বিষয়ে আড়ষা ব্লকের BDO অমিত কুমার গায়েন বলেন, "100 দিনের কাজ শুরু হয়েছে ব্লক এলাকায় । ইতিমধ্যে যাঁরা বাইরে থেকে ফিরে এসেছেন তাঁদের মধ্যে অনেককেই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে । আর যাঁরা বাকি রয়েছেন তাঁদের দ্রুত কাজে নিযুক্ত করার জন্য প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এবছর 100 দিনের কাজের জন্য আবেদন অনেকটাই বেড়েছে । আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার শ্রমজীবী মানুষকে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে । আমাদের লক্ষ্য, যাঁরা 100 দিনের কাজ করতে ইচ্ছুক তাঁদের সকলকেই কাজ দেওয়া । যাঁদের জবকার্ড নেই তাঁদের নতুন জবকার্ড ইশু করার ব্যবস্থা করছি । আগের বছরগুলির তুলনায় এবছর আরও বেশি মানুষকে 100 দিনের কাজে নিয়োগ করতে পারব বলে আশা রয়েছে ।"