ময়না, 14 অক্টোবর : লোকসভা নির্বাচনের পর কয়েক মাস শান্ত থাকলেও ফের উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচা ৷ প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূলের অঞ্চল কোর কমিটির সদস্যকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল BJP র বিরুদ্ধে ৷ ঘটনায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা । পুলিশের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধও চলে । যদিও খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে BJP ৷ মৃতের নাম বসুদেব মণ্ডল (52) ৷ তিনি ময়নার বাকচা এলাকার বরুণা গ্রামের বাসিন্দা ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে উত্তপ্ত ছিল বাকচা ৷ অতীতেও একাধিকবার বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে ৷ দু'পক্ষকে থামাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ ৷ বসুদেববাবু বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বাইরে ছিলেন ৷ তিন চার দিন আগেই বাড়ি ফিরেছেন ৷ পরিবার সূত্রে খবর, খুনের দিন সকাল আটটা নাগাদ মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোন তিনি ৷ এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি ৷
এরপর আজ দুপুর 1টা নাগাদ স্থানীয়রা আন্দারিয়া গ্রামের রাস্তার ধার থেকে বসুদেব মণ্ডলের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পুলিশ এসে তাঁকে ময়না ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভরতি করে ৷ সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে । প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে । দলীয় নেতার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা । হাসপাতাল চত্বরেই অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ । পরে মৃতদেহ আটকে রেখে পথ অবরোধ শুরু করেন তারা ৷
তৃণমূলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই BJP সন্ত্রাস কায়েম করে রেখেছে গোটা বাকচা এলাকায় । পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু হয়৷ এরপর BJP আশ্রিত দুষ্কৃতীরা নেতাকে খুন করে পুনরায় এলাকা দখলের রাজনীতি শুরু করেছে । যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা BJP নেতৃত্ব । এবিষয়ে ময়না ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত মালাকার জানিয়েছেন, ''বসুদেব কোনওদিনই ঘরছাড়া ছিল না । কিছুদিনের জন্য পুরী বেড়াতে গিয়েছিল । ফিরে এসে BJP - র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একজোট হয়ে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন । সেই কারণেই BJP আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করেছে ।''
অন্যদিকে, BJP-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন ৷ তিনি জানিয়েছেন , "বসুদেবের মৃত্যু কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষে ঘটেনি । এর সঙ্গে BJP-র কোনও দলীয় কর্মী কোনও ভাবেই যুক্ত নয় । এলাকায় পঞ্চায়েত সদস্য থাকার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তুলছিলেন । বাড়ি ফিরে আসার পর এদিন গ্রামবাসীরা তাকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে টাকা ফেরত চাইতে গিয়েছিলেন । সে সময়ই দু'পক্ষ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝামেলায় পড়ে । তাতেই মৃত্যু হয় বসুদেব বাবুর । "
এ বিষয়ে তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অতীশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, "এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । ঘটনাস্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । দুষ্কৃতীদের খোঁজে চলছে তল্লাশি । দেহ ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । "
সম্প্রতি, 7 অক্টোবর নবমীর রাতে খুন হয়েছিলেন পাঁশকুড়ার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি কুরবান শাহ ৷ সেই ঘটনার তদন্তের কিনারা এখনও করে উঠতে পারেনি জেলা পুলিশ ৷ তারপর ফের আজ পাশের ব্লক ময়নায় তৃণমূল নেতাকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় জেলা জুড়ে আতঙ্কিত সাধারণ সমর্থক থেকে দলীয় কর্মীরা ৷ একারণেই নিরাপত্তা ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবীতে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠাতে না দিয়ে ময়না বলাইপন্ডা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন ৷ পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থানে আসেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী ৷ সেসময় তাকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান উত্তেজিত দলীয় সমর্থকরা ৷ পরে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷