ময়না, 6 মে: লকডাউনের জেরে বন্ধ দোকানপাট থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবস্থা । যে কারণে জেলায় উৎপাদিত পান রাজ্য ও ভিন রাজ্যে রপ্তানি করতে না পেরে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের । প্রতিদিন বরজে নষ্ট হচ্ছে লাখ টাকার পান । ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে রপ্তানি ব্যবস্থা ও ঋণ মুকুবের দাবিতে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় শতাধিক পান চাষি পথের উপর পান ফেলে বিক্ষোভ দেখাল ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না, তমলুক, মহিষাদল, পটাশপুর,কাঁথি সহ একাধিক এলাকার মানুষ পান চাষের সঙ্গে যুক্ত । জেলার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি অনেকটাই পান চাষের উপর নির্ভরশীল । লকডাউনের জেরে দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভিন রাজ্যে রপ্তানি করা যাচ্ছে না পান । মূলত পাঁশকুড়া ও মেচেদা স্টেশন থেকে ব্যবসায়ীরা মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও অসমের একাংশে জেলার অধিকাংশ পান রপ্তানি করে থাকে । লকডাউনের মধ্যেও ট্রাকে করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পান পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তা পরিমাণে একেবারেই অল্প । ফলে অধিকাংশ পান চাষিই গাছ বাঁচানোর জন্য প্রায় দু'মাস ধরে পান পাতা তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন । এতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষ করেও ব্যবসা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা ।
যে কারণে বুধবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পান চাষি সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে কৃষকরা সামাজিক দূরত্ব মেনে ময়নার কিয়ারানা 2 নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় পান ফেলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । তাদের দাবি, অবিলম্বে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান বিক্রির সুষ্ঠ ব্যবস্থা, চাষিদের ঋণ মুকুব ও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করুক ।
এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পানচাষি সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার পাইক বলেন, "গত দুমাস ধরে পান বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ । হাতে টাকা না থাকায় আমরা সকলেই অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি । এলাকার 69-70 শতাংশ মানুষই পান চাষের সঙ্গে যুক্ত । তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে পান চাষিদের আর্থিক প্যাকেজ প্রদান ও ঋণ মুকুব করে পান বিক্রির সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক । আর তা না হলে আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া কোনও পথ থাকবে না ।"
বিষয়টি নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা মৃণালকান্তি বেরা জানান, "ইতিমধ্যেই সরকারের স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পান চাষিদের ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে । বর্তমান পরিস্থিতির কারণে জেলার 6000 হেক্টর জমির পান চাষিরা যে ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন সেই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে । পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে ।"