দিঘা, 22 অগাস্ট : দিঘার হোটেলগুলিতে বছরের অন্যান্য সময় যে ভাড়া থাকে উৎসব মরশুমে তা বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায় । অনেকদিন ধরেই দিঘার হোটেলগুলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে । উৎসবের মরশুমে কার্যত কালোবাজারি চলে বলে অভিযোগ । এই নিয়ে বারবার হোটেল মালিকদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তবে তাতে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি । তাই এবার অতিরিক্ত ভাড়া রুখতে টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত হবে এই টাস্ক ফোর্স ।
বুধবার দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক ছিল । ওই বৈঠক থেকে কিছু বিষয়ে হুঁশিয়ারিও দেন মুখ্যমন্ত্রী । সেই তালিকাতেই ছিল দিঘায় হোটেলগুলির ভাড়া নিয়ে দৌরাত্ম্যর বিষয়টি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দিঘা হল অল্প পয়সায় মধ্যবিত্তের গোয়া । মানুষ এখানে আসে, স্নান করে, মজা করে, সমুদ্রের পাশে বসে, চলে যায় । আগে শুধু শনিবার ও রবিবারে ভিড় হত । এখন সবসময় ভিড় হচ্ছে । কিন্তু অনেক হোটেল অন্যায্য ভাড়া নিচ্ছে । ফলে পর্যটকরা সমস্যায় পড়ছেন । হোটেল ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ দরকার । রেট বাড়াবেন না ।" এরপরই বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যসচিব মলয় দে-কে নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন,"সবাইকে নিয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি করুন । আর সেই টাস্ক ফোর্সে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদদের রাখার চেষ্টা করুন ।"
এই প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিঘা-শংকরপুর হোটেল সংগঠনের সভাপতি সুশান্ত পাত্র । মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ স্বীকার করে নেন তিনি । মমতা হোটেল মালিক সংগঠকদের বলেন, "এবার পুজোয় মানুষ কাশ্মীরে বেড়াতে যাবে না । দিঘায় আসবে । এখন দিঘার যেভাবে জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাতে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে ।" এরপরই তিনি ডেটাব্যাঙ্ক করে ওয়েবসাইট তৈরি করার পরামর্শ দেন হোটেল মালিক সংগঠকদের । বলেন, "কাস্টমারকে লক্ষ্মী ভাবুন । একজন একবার এলে সে যেন বারবার আপনার হোটেলে আসে সেটা নজর রাখুন ।"
গতকাল বৈঠক শুরুর আগেই মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করেন একগুচ্ছ প্রকল্পের । আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে দিঘা-শৌলা 7 কিমির প্রস্তাবিত মেরিনা বিচের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন । দিঘার পর্যটন কেন্দ্রকে আরও কী ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে তোলা যায় সেই বিষয়ে আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের বোঝান মমতা । দিঘাকে যে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে রাখতে হবে তা তিনি নিজের কথায় কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন । বৈঠকে দিঘায় প্রস্তাবিত জগন্নাথ মন্দির কারা তৈরি করবে তা নিয়েও আলোচনা হয় । মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাইরের লোক না ডেকে KMDA বা PWD-র হাতেই থাক নির্মাণের দায়িত্ব । পরে অবশ্য তিনি বলেন, "পুরীর মন্দিরের মতো ভাষ্কর্য যারা করতে পারবে তাদেরই দেওয়া হোক বরাত ।"
এই বৈঠকে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস, বিভিন্ন দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও জেলার আধিকারিক সহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ।