দিঘা, ২৬ জুলাই : ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সঙ্গে পুবালি বাতাস মানেই সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের আনাগোনা । আর বর্ষা-পুষ্ট ভরা নদীর ঘোলা জল সমুদ্রে মেশা মাত্র মোহনামুখী হবে ইলিশের ঝাঁক । বিশেষজ্ঞদের মতে, এটাই ইলিশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য । কিন্তু, ১৫ জুন থেকে ইলিশ ধরার মরশুম শুরু হলেও সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে মৎস্যজীবীদের । তাই শ্রাবণ পেরিয়ে আষাঢ় পড়লেও বাজারগুলিতে দেখা মেলেনি টাটকা ইলিশের । কয়েক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষারত ছিলেন মৎস্যজীবীরা । বুধবার থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে । এরপর থেকেই ইলিশের ঝাঁক দেখা দিয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনাগুলোতে । আজ দিঘা মোহনার মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে উঠেছে প্রায় ১৫ টন ইলিশ । যা পেয়ে খুশি মৎস্যজীবীরা ৷
এই বিশাল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে মাত্র ২০টি ফিসিং লঞ্চের জালে ৷ এবার সমুদ্র থেকে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ সর্বাধিক পরিমাণ ধরা গেছে । এর আগে দিঘা মোহনায় পাইকারি দাম ছিল কেজি প্রতি ৫০০-৬০০ টাকা । এছাড়া, ৭০০-৮০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০-১০০০ টাকায় । মূলত বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব দিক বরাবর সমুদ্রে যাওয়া লঞ্চগুলিতেই মূলত ধরা পড়েছে এই ইলিশগুলি ৷ মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, গত দু'দিন ধরে ইলিশ উপযোগী ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এবং পুবালি বাতাস ছিল । আর সে জন্যই জালে পড়েছে 15টন ইলিশ ।
অনন্ত মাঝি নামে এক লঞ্চ মালিকের জালে উঠেছে দেড়টন ইলিশ । মুখে প্রাণবন্ত হাসি নিয়ে তিনি বলেন, "পরিবেশ ইলিশ ধরার অনুকূল হতে শুরু করেছে । ভোজন রসিক বাঙালির পাতে সেরা ইলিশ তুলে দিতে আর বেশি সময় লাগবে না ।" গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গে মাঝারি ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস । দুর্যোগ আশঙ্কার কথাও শুনিয়েছে তারা । সেজন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । তাছাড়া, গভীর সমুদ্রে থাকা সিংহভাগ লঞ্চ-ট্রলারকেও ফিরে আসতে বলা হয়েছে । তাই ইলিশের জোগান বাড়ার আশায় আছেন ব্যবসায়ীরাও । দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডারস অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর নবকুমার পয়্যারা বলেন, "অনুকূল আবহাওয়া ও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামলেই সমুদ্রে ইলিশের দেখা মেলে । আপাতত সমুদ্রে এই দুটোর উপস্থিতি আছে । তাই ইলিশও ধরা পড়ছে । শুক্রবার ১৫টন ইলিশ নিলাম হয়েছে । আবহাওয়া অনুকূল থাকলে পরের সমুদ্রযাত্রায় আরও বেশি পরিমাণে ইলিশ পাব বলে আমরা আশাবাদী । আর মাছের জোগান বাড়লে দামও কমবে ।"