কালনা, 4 জুন : 'এক থা ভিলেন' রীতেশ দেশমুখকে মনে পড়ে ? যেখানে শান্ত স্বভাবের রাকেশ ( ছবিতে এটাই ছিল রীতেশের নাম ) একের পর এক সুন্দরীকে খুন করেছিল । কিন্তু একটি বারের জন্য কারোর সন্দেহ তো দূরের কথা, প্রশ্ন জাগেনি মনে । সেই পর্দার রাকেশই যেন বাস্তবের কামরুজ্জামান । আপাত শান্ত, নিরীহ ,ভদ্র বছর তিরিশের কামরুজ্জামানকে দেখে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি । প্রতিবেশীরা বলছেন যে নেশার মধ্যে ছিল শুধুই সিগারেট খাওয়া । এক কথায় চেইন স্মোকার । সব সময় ফিটফাট থাকতে পছন্দ করত সে । বেশ কয়েকদিন শ্বশুরবাড়ি থাকলেও একটি বারের জন্য গলা তুলে কথা বলতে শোনা যায়নি তাকে । রবিবার যখন আপাত শান্ত কামরুজ্জামানের আসল পরিচয় জানা গেল তখন রীতিমতো থ প্রতিবেশীরা ।
শুরুটা হয়েছিল গতবছর ডিসেম্বরে । একের পর এক খুন । টার্গেট হচ্ছিল মহিলারাই । প্রথমে শ্বাসরোধ, তারপর খুনকে নিশ্চিত করতে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত । একের পর এক ঘটনা সামনে আসার পরও কোনও ক্লু পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা ।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে দুটি বিষয় 1) লাল বাইক 2) লাল হেলমেট । CCTV ফুটেজের এই সামান্য প্রমাণ নিয়েই তদন্ত শুরু করেছিলেন দুঁদে গোয়েন্দারা । জেলার সব থানাতেই খবর ছিল । রবিবার এমনই লাল বাইক দেখে সন্দেহ হয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের । সন্দেহের বসে শুরু হয় জেরাও । আর তখনই সামনে আসে আসল তথ্য । বাইক থামিয়ে হাতের ব্যাগ তল্লাশি করতে মেলে চেন ও লোহার রড ।
এই সংক্রান্ত খবর : খুনের পর ধর্ষণের চেষ্টা করত কালনার সিরিয়াল কিলার
আটক করা হয় সন্দেহভাজন যুবককে । জেরায় ভেঙে পড়ে সে । স্বীকার করে খুনের ঘটনা । এমন কী তদন্তকারীদের অনুমান, শুধু খুন নয় শারীরিক লালসা মেটানোর চেষ্ঠা করত সে । কালনার সুজননগরের কামরুজ্জামান-কে গ্রেপ্তারের পর জল্পনা তুঙ্গে । এলাকার বাসিন্দাদের গুঞ্জন আপাত শান্ত কামরুজ্জামান কী ভাবে একের পর এক খুন করেছে । বিশ্বাস হচ্ছে না কারোর ।
কিন্তু কেন খুন ?
তদন্তকারীদের অনুমান মেয়েদের খুন করার মধ্যে একটা আলাদা আত্মতৃপ্তি ও আনন্দ কাজ করত তার । বুঝতে অসুবিধা নেই সে আদতে একজন মানসিক রোগী ।
কী ভাবে খুন করত সে ?
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন মূলত দুপুরবেলা যখন বাড়িতে খুব একটা লোকজন থাকত না সেই সময় বাছত সে । মিটার দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকত । তারপর এক কথায় দুই কথায় গৃহকত্রীর অন্যমনস্কতার সুযোগ নিত । ও খুন করত । মাত্র ছয় থেকে সাত মিনিট, এই সময়ের মধ্যেই খুন করে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দিত সিরিয়াল কিলার ।
ইদানিং তেমন রোজগার ছিল না কামরুজ্জামানের । মূলত বাতিল লোহা, প্লাস্টিকের ব্যবসা করত সে । মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হলেও কয়েক বছর কালনায় ঘরজামাই ছিল সে । তিন ছেলে , মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মূলত সুখী পরিবার । নামী দামি পোশাক পরতে দেখা যেত তাকে । মাঝে মধ্যেই নামী দামি বাইকে দেখা যেত ।
এর আগে চুরির অভিযোগ ছিল তার নামে । বিষয়টি স্ত্রীর কানে এসেছিল । তবে এভাবে একের পর এক মেয়েদের টার্গেট করে খুন করবে তা টের পাননি তিনি । প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে এর পিছনে কোনও মানসিক কারণ থাকতে পারে । আবার প্রেমে প্রত্যাখ্যান ঘটেছিল কি না তাও দেখা হচ্ছে ।
দেখা হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্ক কেমন । স্ত্রীর সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক তদন্তের ঊর্ধ্বে নয় । এমল একাধিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়েছে।