বর্ধমান, 22 অক্টোবর: সে অনেক দিন আগের কথা ৷ রাজকুমারী বিদ্যা আর মন্দিরের পূজারী সুন্দরের প্রণয়ের কথা কানে যেতেই বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ তাঁদের দু'জনকেই মা কালীর সামনে বলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ! তারপর দু'জনকে এনে হাঁড়িকাঠের সামনে দাঁড় করানো হয় ৷ কাপালিকও হাজির ৷ কিন্তু, বলি দেওয়ার ঠিক আগে হঠাৎই মূর্ছিত হয়ে যান কাপালিক ৷ নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যান বিদ্যা এবং তাঁর প্রেমিক সুন্দরও ! বহু বছর পর আজও এই 'ঘটনা' মানুষের মুখে মুখে ফেরে ৷ কালীপুজোর (Kali Puja 2022) আগে আজ আমরাও জানব সেই কাহিনি ৷ বর্ধমানের (Bardhaman) বিদ্যাসুন্দর কালীর (Bidya Sundar Kali Temple) কাহিনি !
মহারাজা তেজচাঁদের আমলে বর্ধমান শহর ও সেই সংলগ্ন বেশিরভাগ এলাকাই ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা ৷ বিশেষ করে দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকায় ছিল আরও ঘন জঙ্গল ৷ সেই ঘন জঙ্গলেই ছিল কালীমন্দির ৷ সেই মন্দিরে মায়ের পুজো করতেন রাজা ৷ সেখানকার পরিবেশ এতটাই ছমছমে ছিল যে দিনের বেলাতেও কেউ ওই পথে যাতায়াত করতে সাহস পেতেন না ৷ কথিত আছে, যাঁরা অন্যায়-অত্যাচার করতেন, তাঁদের এই মন্দিরে তুলে এনে মায়ের কাছে হাঁড়িকাঠে নরবলি দেওয়া হত ! সেই সময় এই কালী দক্ষিণ মশান কালী নামে পরিচিত ছিল ৷
আরও পড়ুন: কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী !
রাজা তেজচাঁদের এক কন্যা ছিল ৷ তাঁর নাম ছিল বিদ্যা ৷ কথিত আছে, রাজকুমারী বিদ্যা নাকি অপূর্ব মালা গাঁথতে পারতেন ৷ তাঁর গাঁথা সেই মালা মাকে পরানো হত ৷ সেই কালী মন্দিরের পূজারী ছিলেন সুন্দর ৷ বয়সে তরুণ সুন্দর দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান ৷ বিদ্যার গাঁথা মালা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ৷ রাজবাড়ির মালিনীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, 'কে গেঁথেছে এত সুন্দর মালা ?' মালিনী পূজারীকে জানান, 'মালা গেঁথেছেন রাজকন্য়া নিজে !' এরপরই বিদ্যাকে একটিবারের জন্য চোখের দেখা দেখতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন সুন্দর !
শোনা যায়, এরপর প্রথম দর্শনেই একে অপরের প্রেমে পড়েন বিদ্যা ও সুন্দর ৷ রাজবাড়ি থেকে মন্দির পর্যন্ত খোঁড়া হয় গোপন সুরঙ্গপথ ৷ সেই পথেই হত অভিসার ! কিন্তু, গোপন কথাটি খুব বেশি দিন গোপন রইল না ৷ সেকথা পৌঁছল রাজার কানে ৷ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন মহারাজা তেজচাঁদ ৷ হুকুম দিলেন, রাজকন্যা বিদ্যা ও পূজারী সুন্দরকে কালী মায়ের সামনে হাঁড়িকাঠে বলি দেওয়া হবে ৷ সেই মতো হল ব্যবস্থা ৷ খাঁড়ায় শান দিয়ে প্রস্তুত কাপালিক ৷ সামনে দাঁড়িয়ে প্রেমীযুগল ৷ হঠাৎই বলির ঠিক আগের মুহূর্তে জ্ঞান হারালেন সেই কাপালিক ৷ আর বিদ্যা-সুন্দরও বেমালুম অদৃশ্য হয়ে গেলেন ! সেদিন আসলে কী ঘটেছিল, তা আজ জানা খুব কঠিন ৷ তবে, সেই ঘটনার পরই এখানকার দক্ষিণ মশান কালীর নতুন নাম হয় বিদ্যাসুন্দর কালী ৷ চিরকালের মতো বন্ধ হয় নরবলি ৷
বর্তমানে এই জায়গায় মায়ের মন্দির ছাড়াও রয়েছে দু'টি শিব মন্দির ৷ এর একটি হল, ভৈরব ও অন্যটি পঞ্চাননের মন্দির ৷ বর্তমানে এখানে কালীপুজোর সময় ছাগল বলি দেওয়া হয় ৷ মন্দিরে পৌঁছতে হলে বর্ধমান স্টেশন থেকে কার্জন গেট, বীরহাটা হয়ে সদরঘাট রোড ধরে তেলিপুকুর মোড় পর্যন্ত যেতে হবে ৷ এরপর সেখান থেকে প্রায় 1 কিলোমিটার রাস্তা জাতীয় সড়ক ধরে এগোলে বাঁ-দিকেই পড়বে তেজগঞ্জ ৷ আর এই তেজগঞ্জেই রয়েছে বিদ্যাসুন্দর কালীর মন্দির ৷